আজ ১১ ডিসেম্বর(২০১৮) দিল্লির রেগরপুরার ১১ নম্বর বিষ্ণুমন্দির মর্গে ফের সোনার দোকানে সিলিং শুরু হল। তবে বেশিক্ষণসেই সিলিংঙের কাজ চালাতে পারেনি দিল্লিরমিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন তথা এম সি ডি। স্বর্ণ শিল্পীদের ব্যাপক বিক্ষোভের ফলে সেই দোকানসিলিঙের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এদিকে নির্বাচন জনিত কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাবন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন। এদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজলিওয়ালকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেন। দিল্লি স্বর্ণকার সংঘের দুই কর্মকর্তা দাসপুর-১ ব্লকের বাসিন্দা বিভাস মাইতি এবং দাসপুর-২ ব্লকের বাসিন্দাদীপক ভৌমিক বলেন, আমরা দিল্লিতে এনিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। কারণ যে জন্য দোকানগুলিতালা ঝুলিয়ে সিল করে দেওয়া হচ্ছে তা বৈধ নয়।
আরও পড়ুন- ঘাটালের সোনার দোকানে ক্রেতা সেজে দুঃসাহসিক চুরি,সিসিটিভি ফুটেজে উঠল দুষ্কৃতির ছবি
প্রসঙ্গত, ৭ ডিসেম্বর থেকেঘাটাল মহকুমা এবং এই রাজ্যের অন্যান্য জেলার বাসিন্দাদের দিল্লিতে থাকা সোনার দোকানগুলিতে দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনসিল করে দিতে শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে দিল্লিতে কর্মরত দাসপুর ও ঘাটাল থানা এলাকারস্বর্ণ শিল্পীরা চরম বিপর্যয়ের মুখে। দিল্লিরমিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন তথা এম সি ডি হঠাৎএক সিদ্ধান্তের জেরেই দিল্লিতে কর্মরত ঘাটাল মহকুমার বেশ কয়েক হাজার স্বর্ণ শিল্পীপথে বসতে চলেছেন। তার ফলে ৭ ডিসেম্বর থেকে স্বর্ণশিল্পীদের দোকান ছেড়েরাস্তা রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে। দোকানের যন্ত্রপাতি মালপত্র নিয়ে ফুটপাতেই কাটাতে হচ্ছে।
তবে বর্তমানের পরিস্থিতির জন্য এম সি ডি স্বর্ণ শিল্পীদেরই দায়ী করেছে। এম.সি.ডি’র অভিযোগ, বিডপুরা, রেগরপুরা এবং করোলবাগ এলাকাটি বাণিজ্যিক এলাকা নয়। ওই এলাকাতে বাঙালি স্বর্ণ শিল্পীরা সোনা, তামা এবং রূপা গলানোর জন্য অ্যাসিড ব্যবহার করছেন। এর ফলে এলাকায় ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে। বহুতল বিল্ডিংগুলির অন্যান্য রুমে বা পাশাপাশি পরিবার থাকে অ্যাসিডে ধোঁয়ায় তাঁদের রুমে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। করোলবাগের নিগম পর্ষদ(কাউন্সিলার) রাজেশ লালোঠিয়া বলেন, আমরা ওদের প্রায় এক বছর আগে থেকেই অ্যাসিড পুড়িয়ে দূষণ বন্ধ করতে বলেছি। কিন্তু ওরা শুনছেন না। সেজন্য নোটিশ দিয়ে দোকানগুলি সিল করে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে জোর করা হচ্ছে না।
দেশ-বিদেশের বহু জায়গার সঙ্গে দিল্লিতেও এই মহকুমার তিনটি থানা এলাকার বহু যুবক সোনার কাজ করেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য জেলার যুবকদেরও ওই এলাকায় সোনার গহনার কারখানা রয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই পাহাড়গঞ্জ, বিডনপুরা, করোলবাগ এবং রেগরপুরা এলাকায় থাকেন। স্বর্ণশিল্পীরা বলেন, আমরা এখানে প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে রয়েছি। এম সি ডি ৭ ডিসেম্বর থেকে কাউকে ৪৮ ঘন্টা, কাউকে ২৪ ঘন্টা কাউকে বা নোটিশ না দিয়েই এম সি ডি ’র লোকেরা রুমের সামনে এসে সব কিছু বার করে দিয়ে দোকান সিল করে দিচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সব কিছু বারও করা যাচ্ছে না। অনেকের সোনাও দোকানের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। যারা মালপত্র বার করে নিয়েছে তাঁরা সমস্ত কিছু নিয়ে ৭ ডিসেম্বর থেকে ফুটপাতেই রয়েছেন।
স্বর্ণ শিল্পীদের বলেন, ওই এলাকায় প্রচুর কারখানা থাকলেও প্রত্যেক কারখানায় অ্যাসিড ব্যবহার হয় না। ১০-১২ শতাংশ দোকানে সোনা গালানোর কাজ করা হয়। বাকীরা সেই সোনা দিয়ে গয়না তৈরি করেন। যেখানে কোনও অ্যাসিডই লাগে না এবং দূষণের কোনও সম্পর্কই নেই। তবুও সমস্ত দোকান সিল করে দেওয়ার ফলে আমরা পথে বসে গিয়েছি। মালপত্র নিয়ে শুক্রবার থেকে কয়েক হাজার স্বর্ণশিল্পী রাস্তাতেই রয়েছি। ঠিক মতো খাবার জুটছে না। মোবাইল রিচার্জ করে বাড়ির সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।
স্বর্ণ শিল্পীরা পুনর্বাসনেরজন্য রাজপথেই আন্দোলন করছেন। আর সত্যিই যদি দিল্লি তাদের পুনর্বাসনের না দেয় তাহলেঘাটাল মহকুমাসহ এই রাজ্যের অন্যান্য জেলার বেশ কয়েক হাজার পরিবার চরম সংকটে পড়বে। আমআদমি পার্টির স্থানীয় বিধায়ক বিশেষ রোবি স্বর্ণ শিল্পীদের সঙ্গেদ দেখা করার জন্য ৭ডিসেম্বর এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, এনিয়ে এম.সি.ডির সঙ্গে কথা বলবেন।
মোবাইলে খবর পড়তে এইখানে ক্লিক করুন Whatsapp
৭ ও ৮ ডিসেম্বর দুদিন সিলিংকরার কাজ চলে। ৯ ও ১০ ডিসেম্বর সিলিং কাজ বন্ধ ছিল। আজ ১১ তারিখ আবার শুরু হয়। দিল্লির রেগরপুরার ১১ নম্বর বিষ্ণুমন্দির মর্গে কয়েকটি দোকানেসিলিঙের কাজ শুরু হতেই স্বর্ণ শিল্পীরা পথে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ব্যাপকবিক্ষোভ শুরু হতে দিয়েই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অফ দিল্লির(এম.সি.ডি) কর্মীরা মাঝ পথে দোকান সিলিং করারকাজ বন্ধ করে দিয়ে ফিরে যান। একই সঙ্গে ১১ ডিসেম্বরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকেএনিয়ে চিঠিও দিয়েছেন। স্বর্ণশিল্পীদের বিশ্বাস, এবার তাঁরা একটা না একটা আশার আলো দেখতেপাবেন।