শ্রীকান্ত পাত্র[বিশিষ্ট সাংবাদিক]:সদ্য সমাপ্ত হয়েছে ‘ঘাটাল উৎসব ও শিশুমেলা-২০২৩’। শুরু থেকেই বিতর্ক। বিতর্ক ঘাটালের বিধায়ককে [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]নিয়েই। ঘাটাল শহরের বুকে ঘাটাল উৎসব হচ্ছে অথচ ঘাটালের জনপ্রতিনিধি বিধায়ক আমন্ত্রণ পাবেন না তা কি হয়? ফলে বিতর্কটা স্বাভাবিক। এবছরের মেলা কমিটির গঠন কাঠামো দেখলেই বোঝা যায় কমিটিতে শাসকদল তৃণমূলের দাপাদাপি। সেখানে ঠাঁই নেই কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য মেলায় রাজনৈতিক রঙ থাকবে কেন? মেলা সবার। ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী(দেব) যিনি এই শাসক দলেরই একজন প্রতিনিধি পাশাপাশি তিনি ‘ঘাটাল উৎসব ও শিশুমেলা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের এক জন। তিনি মেলা উদ্বোধনের কয়েক সপ্তাহ আগে ৯ জানুয়ারি দাসপুর-২ ব্লকের চাঁইপাটে এক অনুষ্ঠানে এসে বলে গিয়েছেন, মেলা সবার। এখানে কোনও রাজনৈতিক রঙ থাকবে না। তাই ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটকেও আমন্ত্রণ জানাতে হবে। তিনি তাঁর প্রতিনিধি রামপদ মান্নাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শীতলবাবুকে আমন্ত্রণ জানাতে। মেলা শেষ হয়েছে। শীতলবাবু জানিয়েছেন, তাঁকে মেলা থেকে কোনও রকম আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এদিকে উদ্যোক্তাদের দাবি, শীতলবাবুকে আমন্ত্রণের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি পেয়েছেন কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত নন তাঁরা। অর্থাৎ একটা লোকদেখানো চিঠি পাঠানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু যাতে তিনি না পান তারও ব্যবস্থা করেছেন রামপদ মান্না থেকে দিলীপ মাজিরা।
আসলে শীতল কপাটকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। তাঁর অপরাধ তিনি বিজেপি দলের বিধায়ক। অথচ দেখুন ঘাটালের দুই পাশে দুই বিধানসভার দুই বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া ও অরূপ ধাড়াকে সসম্মানে আমন্ত্রণ জানিয়ে মঞ্চে আসীন করা হয়েছিল বিশেষ অতিথির মর্যাদা দিয়ে। একে কী বলবেন? রাজনৈতিক দ্বিচারিতা! রাজনৈতিক বাঁদরামি!
অতীতে আমরা দেখেছি, ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলায় বাম নেতারা সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। ঘাটালের সিপিএম নেতা জহর সাঁতরা, অশোক সাঁতরাদের মঞ্চের নীচে বসে থাকতে দেখেছি। বিধায়ক হিসেবে মঞ্চে থাকতেন ঘাটালের রতন পাখিরা। শিশুমেলায় শাসক দলের এমন নির্লজ্জ দাদাগিরি শুরুর নাটের গুরু শঙ্কর দোলই। রাজ্যে পালা বদলের পর শিশু মেলার রাশ এক প্রকার জবরদস্তি করেই হাতে নিয়েছিলেন বিধায়ক শঙ্কর দোলই। তারপর থেকে শিশু মেলায় তৃণমূলের নির্লজ্জ দাদাগিরি চলছেই। তারই অঙ্গ বিজেপি বিধায়ক শীতলের আমন্ত্রণ না পাওয়া। আমি দেখেছি এই মঞ্চেই তৃণমূল নেতা শ্যামপদ পাত্রের আলো করে বসে থাকা। বিদ্যাসাগর মেলার মঞ্চেও দেখেছি শ্যামবাবুকে। আমার খুব মনে আছে দাসপুরের বাসুদেবপুর হাইস্কুলের এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস ও দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক অজিত ভূঁইয়াকে পাশাপাশি বসে গল্প করতে। এই শিক্ষা কবে নেবেন আজকের তৃণমূল নেতারা? অনেকবার দেখেছি বাম আমলে সিপিএম, কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতারা পাশাপাশি বসে আলোচনা করতে। এই যে শিশু মেলা শুরুই হয়েছিল অরাজনৈতিক লোকেদের হাত ধরে। সেখানে আমন্ত্রণ পেতেন এবং সসম্মানে মঞ্চে
আসীন হতেন কংগ্রেস নেতা থেকে শুরু করে সিপিএম নেতারাও। এখন এ সব কষ্ট কল্পনা। নির্লজ্জতারও একটা সীমা থাকে।
আচ্ছা, বিশাল ঢাউস এই মেলা কমিটিতে তৃণমূলের বড়, মেজ, সেজো, ছোট নেতারা যদি ঠাঁই পেতে পারেন ঘাটালের বিধায়ক ঠাঁই পাবেন না কেন? মেলাটি যদি স্রেফ তৃণমূলের উদ্যোগে হোত কারও বলার কিছু ছিল না। এই কলম লেখারও দরকার পড়ত না। যেহেতু মেলাটির সভাপতি ঘাটালের মহকুমা শাসক, যেহেতু মেলার কার্যকরী সভাপতি ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান তাই এই প্রসঙ্গ উঠতে বাধ্য। আমি জানি না মেলা কমিটির সভাপতি ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস বিধায়ক শীতল কপাটকে আমন্ত্রণ জানাতে দিলীপ মাজিদের কোনও নির্দেশ বা অনুরোধ করেছিলেন কী না। হয়তো তিনি বলেছিলেন কিন্তু তাঁর কথার গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি সাংসদ দেবের অনুরোধও। শীতল কপাটের মতো একজন বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানালে মেলার কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত? এটাও ঠিক, আমন্ত্রণ পেলেও তিনি কি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন? একদল তৃণমূল নেতা নেত্রীর পাশে বসতে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন বৈকি! তাঁকে ব্রাত্য করে বিতর্কের নায়ক করলেন দিলীপ মাজি, বিকাশ কররা।