সুইটি রায়: কোভিড–১৯ এখন বিশ্বজনীন আতঙ্ক। এর সর্বনাশা থাবা মানুষের কাছ থেকে শুধু তাদের প্রিয়জনদের কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে বেঁচে থাকা সাধারণ মানুষগুলোর রুজি-রোজগার, তাদের মুখের গ্রাসও। বিশেষ করে সেই সমস্ত দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষজনদের কাজের সুযোগও দৈনিক কাজের বিনিময়ে পাওয়া মজুরিই যাদের দু মুঠো ভাত জোগাড়ের একমাত্র উপায়। আর যাদের এমনিতেই দিন আনি দিন খাই অবস্থা তাদের বাড়ির সঞ্চয়ের ভাঁড় পরিপূর্ণ থাকবে এমন ভাবা বৃথা তাই স্বাভাবিকভাবেই এই কদিনে ফাঁকা হয়েছে তাদের লক্ষ্মীর ভাঁড়ও। ফলে জীবনধারণের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় এবং শিশু মহিলাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রগুলি জোগাড় করাই এই সমস্ত মানুষদের কাছে এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনিক সহায়তার পাশাপাশি প্রশাসনের সীমানার বাইরে ঘাটাল মহকুমা শাসকের আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করেছে এই দরিদ্র পরিবারগুলি কে। তাই হয়তো দেশজুড়ে চলা লকডাউনের ফলে সৃষ্ট খাদ্যসংকটের ছায়া এখনো পর্যন্ত এই অঞ্চলে সেভাবে পড়েনি।
এই করোনা পরিস্থিতিতে গরিব আদীবাসীদের সাহায্য করতে এবার উদ্যোগী হলেন ঘাটাল মহকুমা শাসকের অফিসে বিনামূল্যে ডব্লিউবিসিএস-এর পাঠ নিতে আসা ছাত্রছাত্রীরা। মহকুমার শাসক অসীম পাল এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্জুন পালের অনুপ্রেরণায় ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে প্রায় ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে দৈনন্দিন জিনিসপত্র একটি সম্ভার তুলে দিলেন। আজ ২০ এপ্রিল তাঁরা দাসপুর-১ ব্লকের ডিহিবলিহারপুর,সুজানগর ও লাওদা তালবাসা এই তিনটি গ্রামের প্রায় ৭০ টি পরিবারের ওই সমস্ত সামগ্রীগুলি তুলে দেন। এক একটি প্যাকেটের মধ্যে ছিল আড়াই কেজি চাল, ডাল, ২ কেজি আলু, মুড়ি, আটা, বিস্কুট, বিভিন্ন মশলা, তেল, সাবান, শিশুদের খাবার ইত্যাদি। তবে এই প্যাকেটে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জিনিস ছিল একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট।এই দলটির এক সদস্য স্নেহা বাঙাল জানান, লক ডাউনে মহিলাদের এই জিনিসটি কেনা বা সংগ্রহ করা খুবই অসুবিধেজনক। কিন্তু জিনিসটি অতিপ্রয়োজনীয়ও। তাই আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাহায্য করছেন অনেকেই কিন্তু এই বিষয়টি হয়তো অনেকেরই খেয়াল থাকে না। স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার ফলে একদিকে যেমন মহিলাদের খুবই সুবিধা হবে, অন্য দিকে তাদের মধ্যে পরিষ্কার থাকার সুঅভ্যাসও বজায় থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের জমানো টাকা থেকে এই উদ্যোগের কথা জেনে এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি পেয়ে বেজায় খুশি অনিতা টুডু, মহারানী হাঁসদা, সুকুমারী মুর্মুরা।
ঘাটাল মহকুমার এই ছাত্র ছাত্রীর দলটি মহকুমা দপ্তরের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফ্রি ট্রেনিং সেন্টারের নিয়মিত পড়াশোনা করেন। এই দলটির অপর এক ছাত্র শুভম মাইতির কথায়, আমাদের প্রিয় এসডিও স্যারকে এই সময়ে রোজ আমরা দেখছি দিন রাত এক করে গরিব মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের পড়াবার জন্য এখানে স্যারেরা একটি টাকাও নেন না। স্যারদের আমরা কিছুই দিতে পারি না। তাই স্যারের সেবার আদর্শকে সামনে রেখে আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম, যে এই দুর্দিনে সবাই নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী স্যাদের মতো করেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব । আর সেই ভাবনা থেকেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমরা খুশি স্যার আমাদের কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল জানান, আমাদের কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীদের এই কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ শুধু আমাদের কাছে নয়, সমগ্র ঘাটাল মহকুমার গর্বের বিষয়। ওরা যেভাবে ওদের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেটা সমাজের কাছে এক দৃষ্টান্তস্বরূপ।
ত্রাণ বিতরণে ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও সমগ্র কাজটি সুস্থভাবে সুসম্পন্ন করা নিশ্চিত করতে মহকুমাশাসক দপ্তরের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্জুন পালের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম এবং দাসপুর-১ বিডিও বিকাশ নস্কর।