সৌমেন মিশ্র: প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য নিজের বেশিদূর পড়াশোনা করা হয়নি ঘাটাল ব্লকের হরিশকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দা সুধীরচন্দ্র দোলইয়ের। শেষ বয়সে স্কুলের উন্নয়নের জন্য ৫০ হাজার টাকা দান করলেন ওই কৃষক। ওই টাকার জন্য অবশ্য স্কুলকে কোনও রকম প্রস্তাব দিতে হয়নি। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি নিজেই অযাচিত হয়ে প্রতিবেশী গ্রামের মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ হাইস্কুলে গিয়ে ওই টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, হঠাৎ করে ওই বৃদ্ধ আমাদের স্কুলে উপস্থিত হয়ে জানান তিনি স্কুলের জন্য কিছু টাকা দিতে চান। প্রস্তাবটা প্রথমে শুনে আমাদের খটকা লাগছিল। পরে তিনি ব্যাখ্যা করে বলতে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয়নি।
প্রথম দিন বৃদ্ধ স্কুলে জানতে এসেছিলেন স্কুল তাঁর দেওয়া টাকা নেবে কিনা। তার পরের দিনই সুধীরবাবু তাঁর জমি বিক্রি করার ৫০ হাজার টাকা নিয়ে স্কুলের হাতে তুলে দেন। তাপসবাবু বলেন, ওই বৃদ্ধ তাঁর মা সুশীলাবালা দোলইয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ওই টাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। সুধীরবাবুর এই উদ্যোগে আমরা অত্যন্ত খুশি।
ওই বৃদ্ধের স্ত্রী নেই। দুই ছেলেকেও জমিজমা লিখে দিয়ে নিজের নামে কয়েক কাঠা জমি রেখেছেন। সুধীরবাবু বলেন, সেই জমির কিছুটা বিক্রি করেই স্কুলের হাতে ওই টাকা তুলে দিলাম। সুধীরবাবুর প্রতিবেশি সুব্রত দোলই বলেন, বরাবরই সুধীরবাবু এলাকার নানা উন্নয়ন ও সেবা মূলক কাজে সাধ্যমতো থাকার চেষ্টা করেন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তিনি পাড়ার সমস্ত গরুকে*আমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতেন।
[*আমরা যেমন প্রতিবেশী মানুষদের নেমন্ত্রণ করে খাওয়াই, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে প্রতিবেশী পরিবারের গরুদের একটা ফাঁকা মাঠে জড়ো করে জাবনা, সবুজ ঘাস সহ গরুদের মুখরোচক জিনিস খাওয়ানো হত। এটাকে ‘ভগবতী’ ভোজ বলা হয়। ওই বৃদ্ধ সেটাই করতেন।]