অনিন্দ্য গোস্বামী, অতিথি সাংবাদিক, ‘স্থানীয় সংবাদ’: গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে চন্দ্রকোণা থেকে একটি যুবক নিখোঁজ হয়ে যান তার বাড়ির লোকজন এবং বন্ধুবান্ধব এই নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন এবং স্থানীয় সংবাদও এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করে। গতকাল (১৯ সেপ্টেম্বর) যুবকটি বাড়িতে ফিরে আসেন। ফেসবুকে জনৈক ব্যাক্তির একটি পোস্ট দেখতে পাই যেখানে যুবকটির বক্তব্য অনুযায়ী তাকে কোনো এক ডেলিভারি বয় ডেকে নিয়ে ঠিকানা জিজ্ঞেস করার ছলে স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে এবং গাড়িতে করে নিয়ে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে ও ‘ট্রান্সপ্লান্ট’ শুনতে পায়। এরপর ওকে প্রায় ১০০ বার সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয় এবং মাস্ক পরা দুজন ব্যক্তি এসে ইনজেকশন দেয়, ইনজেকশনের ব্যথায় ও ক্রমশ অবশ পড়ে এবং বিগত তিন দিন কোন কিছু খেতে দেয়া হয়নি। অপহরণকারীরা ব্লাড স্যাম্পেল কালেক্ট করে এবং সেটি পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পরবর্তীকালে তার স্যাম্পেল ম্যাচ না করায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ছেলেটি বর্ধমান থেকে আরপিএফ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়িতে ফিরে আসে। [পলাশ চক্রবর্তী নামে ওই যুবকের পুরো পোস্টটি নীচে দেওয়া হল।]
এই বিষয়ে পাঠকদের সামনে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে তুলে ধরতে চাই।
প্রথমতঃ চন্দ্রকোণার রাস্তায় ডেলিভারি বয় সঙ্গে সাক্ষাৎকার হয় এবং মুখে একটি গ্যাস স্প্রে করে অজ্ঞান করতে অন্ততপক্ষে ৪-৫ সেকেন্ড সময় লাগবে এই সময়ের মধ্যে সে কিছুটা হলে চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারত বা পালাতে পারতো এবং এই ঘটনার সাক্ষী কেউ না কেউ থাকতোই কারণ প্রকাশ্য রাস্তায় ওদের কেউ দেখতে পেল না এটা হতে পারে না। ডেলিভারি বয় ও গাড়িটি ওই সময়ে যে রাস্তা দিয়ে গেছে সেটা একটু পাশাপাশি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই বোঝা যাবে।
দ্বিতীয়তঃ এরকম কখনো শোনা যায়নি যে কাউকে অপহরণ করে তার ব্লাড চেক করা হচ্ছে কোন কিছু ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য। এইরকম করতে গেলে একটা বড় র্যাকেট প্রয়োজন হয়। এরা কাউকে অপহরণ করে প্রয়োজন না হলে ছেড়ে দেয় নাকি যাতে সে বাইরে বেরিয়ে সবাইকে ওদের সম্পর্কে জানিয়ে দিতে পারে। এই গল্পটা হজম হলো না।
তৃতীয়তঃ ওর যদি জ্ঞান ছিল না তবে “ট্রান্সপ্লান্ট” কথাটি শুধু মনে থাকল আর কোন কিছুই মনে থাকল না এটা কিভাবে হয়?
আমার যেটুকু ধারণা ছেলেটি কোনভাবেই অপহরণ হয়নি বাড়িতে কিছু বকাবকি বা সমস্যার জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ওর বাড়ির লোক বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এত পরিমাণে প্রচার করেছে ও তখন ঠিক করে কী বলে বিষয়টা ম্যানেজ করবে তখনই ওর এই অপহরণের গল্পটা মাথায় আসে কিন্তু সমস্যা হল এই গল্পের মধ্যে এত পরিমাণ মিসিং লিংক আছে যে গল্পটা দাঁড়াচ্ছে না। ওকে যদি অজ্ঞান করা হয় বা ইনজেকশন দেয়া হয় তাহলে ওর ব্লাড স্যাম্পেল নিয়ে পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে ওকে ঠিক কী ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।
যাই হোক এই অস্থির সময়ে প্রত্যেক বাবা-মার উচিত সন্তানের সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার করা যাতে সে তার সমস্ত কিছু সমস্যা বাবা মার সাথে শেয়ার করতে পারে। তাকে এই ধরনের সস্তা ব্ল্যাকমেল না করতে হয়। ইংরেজিতে “escapism” বলে একটা শব্দ আছে যার অর্থ হলো কোনও অপ্রীতিকর বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসা বা কোনো ফ্যান্টাসির খোঁজে বেরিয়ে পড়া। আশাকরি সবাই এটা বুঝতে পেরেছেন। এই ঘটনার ফলে হয়তো ডেলিভারি বয়দের সম্পর্কে কেউ ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে সেটা ছেলেটির নিজেই সামনে এসে বলা দরকার আসল ঘটনা কী হয়েছিল।
পলাশবাবুর পোস্ট:
‘‘সন্ধান মিললো নিখোঁজ চন্দ্রকোনার যুবকের।
গত ১৬.০৯.২০২৩ তারিখ বেলা ১১ টা নাগাদ কিছু জিনিস কেনাকাটার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বাজার যাওয়ার পথে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় চন্দ্রকোনা পৌরসভার খিড়কিবাজারের যুবক অনুভব সেন মোদক ।
উদ্ধারের পর অনুভবের কথা থেকে জানা যায়,রাস্তায় একটি অজানা ডেলিভারি বয় এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়, ডেলিভারি বয়টি একটি ঠিকানা জানতে চাওয়ার সময় হঠাৎ অনুভবের মুখে একটি গ্যাস স্প্রে করে ,গ্যাসের প্রভাবে অনুভব চোখে আবঝা এবং ধীরে ধীরে অন্ধকার দেখতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায় যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে বুঝতে পারে যে সে একটি চলমান মারুতির ভ্যানের মধ্যে রয়েছে। জ্ঞান ফেরার পর চিৎকার করতে থাকলে তাকে ইনজেকশন ইঞ্জেক্ট করা হয় ,সে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে ,যখন পরবর্তী জ্ঞান ফিরে তখন সে বুঝতে পারে সে একটি অন্ধকার ঘরে শুয়ে রয়েছে, পুনরায় চিৎকার চেঁচামেচি করলে দুজন মাস্ক পরিহিত ব্যক্তি এসে সিগারেট ছ্যাঁকা দিতে থাকে এবং পুনরায় ইনজেকশন ইঞ্জেক্ট করার মাধ্যমে অজ্ঞান করে দেয়।
হাতে প্রায় ১০০ সিগারেটের ছ্যাঁকা এবং ইনজেকশনের ব্যথা যন্ত্রণায় হাত ক্রমশ অবশ হয়ে পড়ে অনুভবের। বিগত তিনদিন কোন কিছু খেতেও দেয়া হয়নি , অপহরনকারীরা ব্লাড সাম্পেল কালেক্ট করে এবং সেটি পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পরবর্তীকালে অনুভব “ট্রান্স-প্লান্ট” শব্দটি শুনতে পায় । আজ সকালে তাকে জানানো হয় যে তার ব্লাড সাম্পেল ম্যাচ না করায় সে মুক্ত। দুপুর একটা নাগাদ তাকে বর্ধমানের রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয় সেখান থেকে অনুভব রেলস্টেশন এর কাছে গিয়ে একটি আরপিএফ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘরে খবর পাঠায় এবং পরবর্তীকালে বাড়ির লোক তাকে উদ্ধার করে।’’