সৌমেন মিশ্র, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: সত্যিই হয়তো কন্ঠ ওর রুদ্ধ হয়ে আসবে, ওর সামনের দিনগুলো হয়তো আরও অন্ধকারে ডুবে দুঃস্বপ্নে [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] ভরে যাবে, আর এই ভেবেই মায়ের চোখে জল। আজকের দিন ওর মা বাবার জয়ের দিন। তবুও আগামীর কথা ভেবে দাসপুর থানার রাজনগরের(Rajnagar) এই মা মনমিতা মন ঠিক রাখতে পারছেন না।
১৬ বছর ধরে অনেক লড়াই অনেক বঞ্চনা গঞ্জনা সহ্য করে ছেলে দেবপ্রসাদকে এবার ২০২৪ এ জীবনের প্রথম সবচেয়ে বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক পরীক্ষায়(madhyamik exam) বসাতে পেরেছেন মা মনমিতা ও বাবা শিবপ্রসাদ পাঠক। তবে চোখের জলে তাঁরা জানাচ্ছেন ছেলের এই প্রথম পরীক্ষায় বসা হয়তো শেষ পরীক্ষা। তাঁদের ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না এই ৮৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী বিশেষ চাহিদা(special child) সম্পন্ন এই ছেলেকে নিয়ে বড় কিছু আশা করতে। আরও উচ্চ শিক্ষায়(higher education) শিক্ষিত করতে। মা মনমিতা জানাচ্ছেন ছেলে দেবপ্রসাদ হাঁটাচলা সেভাবে করতে পারে না। নিজে হাতে খেতেও অনেক সময় নেয়। চোখের সমস্যার কারণে নিজে দেখে পড়তে পারে না। পড়ে শোনালে বেশ মনে রাখে। নিজে লিখতেও পারে না। সেই ছোট্টো থেকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া। স্কুল যেতে ও খুব পছন্দ করে। বাবা শিব প্রসাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সহায়কের কাজ করেন। বদলীর চাকরি। ছেলে এবার ২০২৪ এ মাধ্যমিকে বসেছে। নিজে লিখতে না পারায় রাইটার পেতেও সমস্যা। কেউ এগিয়ে আসেনি। অনেক কষ্টে এক শিক্ষক এগিয়ে এসেছেন তাঁর ছেলে এখন দেবপ্রসাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার রাইটার। বাবার কর্ম সূত্রে সকালে বেরিয়ে রাতে বাড়ি ফেরা। মায়ের পক্ষে আর একা এই ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া হয়নি। বাড়িতে গৃহ শিক্ষক কেউ পড়াতে আসতে চায়না। ছেলের পড়ার ইচ্ছে অনেক। তারই মাঝে অনেক লড়াই করে ছেলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ছেলের মাধ্যমিকে ভালো ফল করা নিয়ে আশাবাদী বাবা ও মা। কিন্তু তারপর? এমন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের(students) জন্য উচ্চ শিক্ষার তেমন কোনো ব্যবস্থার খোঁজ পাচ্ছে না তাঁরা। দেবপ্রসাদ এবার দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর ইউনিয়ন হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সিট পড়েছে নাড়াজোলে(narajol)। মায়ের কোলে চড়ে শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে বাংলা পরীক্ষার দিয়ে বাড়ি ফিরে সে জানিয়েছে বাংলা পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে। বাবা বাংলা প্রশ্ন পত্র ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করেছেন সে সব উত্তর গুছিয়ে বলেছে বাবাকে। মায়ের চোখের জল বাঁধ মানছে না। ছেলে যে পড়তে চায়। কে পড়াবে তার এই ছেলেকে। বাবা বলছেন ছেলে আমার ভীষণ ভালো ভীষণ মায়ার। ছেলে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। এরই মাঝে পরের পরীক্ষার প্রস্তুতিও চলছে। এখন দেখার দাসপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম এই রাজনগরের মনমিতা ও শিবপ্রসাদের ছেলে দেবপ্রসাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে যায় নাকি আর পাঁচটা প্রতিবন্ধী ছেলের মতো বিশেষ চাহিদা থাকলেও সে চাহিদা লোক দেখানো আধুনিকতার অন্ধকারে তলিয়ে যায়!