এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

E-Paper

ঘাটালের বিধায়কের সঙ্গে মহকুমা শাসকের বিরোধ তুঙ্গে

Published on: February 16, 2020 । 10:49 PM

তৃপ্তি পাল কর্মকার, সম্পাদক, ‘স্থানীয় সংবাদ’: ‘ঘাটাল মহকুমায় আইসিডিএস কর্মী নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে’— এই অভিযোগ তুলে ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই। ১৫ ফেব্রুয়ারি শঙ্করবাবু এসডিও’র বিরুদ্ধে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে জেলা শাসক থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ আসার ফলে শনিবার জেলাশাসকের অফিসে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকাটি অনুমোদিত হয়নি বলে জানা গিয়েছে। যদিও ওয়াকিবহাল সূত্রের খবর, এবারের নিয়োগের জন্য প্যানেলটি দুর্নীতি মুক্ত হয়েছে। বিধায়কের সুপারিশ মেনে অযোগ্য প্রার্থীদের নেওয়া হয়নি বলেই বিধায়ক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।  এবিষয়ে ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জেনেছি। তবে এটুকু বলতে পারি,  আমি কোনও অনিয়ম করিনি।

ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকের কয়েক শ’ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল ২০১৮ সাল থেকে। আগের মহকুমা শাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধানের আমলে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা এবং নম্বর ট্যাবুলেশন হয়েছিল। তারপর লোকসভার নির্বাচন সহ কয়েকটি কারণের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হয়নি। বর্তমান মহকুমা শাসকের আমলে সেই ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইন্টারভিউ শুরুর আগে থেকেই শঙ্করবাবু শুধু ঘাটাল ব্লকের জন্য নয়, মহকুমার বাকী চারটি ব্লকের বেশ কিছু প্রার্থীর নাম ইন্টারভিউ বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেন। শঙ্করবাবু সেটা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, আমি বিধায়ক তাই সারা রাজ্যের  জনপ্রতিনিধি হিসেবে যেকোনও এলাকার প্রার্থীদের নাম চাকরির জন্য সুপারিশ করাটা অন্যায় নয়। এটা ডেকোরামের মধ্যে পড়ে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা জানান, মহকুমা শাসকের নির্দেশ মতোই ইন্টারভিউয়ের পর মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্যানেল তৈরি হয়। প্যানেল তৈরি হওয়ার পরই মহকুমা শাসকের দপ্তরে গিয়ে সেই প্যানেলটি দেখতে চেয়ে প্যানেল লিষ্টটি শঙ্করবাবু বাড়ি নিয়ে চলে যান।   ওই প্যানেলে শঙ্করবাবুর সুপারিশ করা প্রার্থীদের নাম ছিল না বললেই চলে। তখনই বিধায়কের ‘মুড অফ’ হয়ে যায়। এর পরই দেখা যায়, ঘাটাল ব্লকের সেই চূড়ান্ত প্যানেলটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করছে। বিধায়ক বলেন, আমি মহকুমা শাসককে প্যানেল চাইতেই পারি, উনি দেবেন কেন? তারই পাশাপাশি বিধায়ক জানিয়েছেন, তিনি ওটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়েননি। এসডিও ওই নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রচুর দুনীর্তি করেছেন। তাই এসডিওই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যানেলটি ছেড়েছেন।

তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক কমিটির এক নেতা বলেন, আমাদের দলের এক ‘বড়দা’ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের জন্য যে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন সেটা আমাদের কাছেও খবর এসেছে। ‘বড়দা’ কখনও বাজারে বলেছেন, মহকুমা শাসকের অফিসের উন্নয়ন তহবিলে টাকা দিতে হবে আবার কাউকে বলেছেন, পার্টি ফাণ্ডে টাকা লাগবে। কিন্তু কোনও টাকাই আমাদের দলীয় পর্যায়ে আসেনি। ঘাটাল ব্লক কমিটির ওই নেতা বলেন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যানেলটি প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর আমরা কনফিউজড হয়ে যাই।  অসীমবাবু এর আগে মুর্শিদাবাদে ছিলেন। তাই তারপরই আমরা বর্তমান মহকুমা শাসকের পূর্বতন কর্মস্থল মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কারণ, যিনি দুর্নীতিপরায়ন হবেন তিনি সবক্ষেত্রেই হবেন। মুর্শিদাবাদে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অসীমবাবু কাজ পাগল মানুষ। উনি সকাল ১০টা রাত ৮টা পর্যন্ত অফিসে বসে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন। ওনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগই ওঠেনি। বরং ‘বড়দা’র বিরুদ্ধে টাকা তোলার বহু অভিযোগ উঠেছে, তিনি একটা প্রস্রাব খানা তৈরি হলেও কমিশন খান। বিডিও অফিসে দু’তিন লাখ টাকার রঙ হলে সেখানেও তাঁর পছন্দ মতো ঠিকাদার নিতে হয়, না হলে তিনি রিঅ্যাক্ট করেন। মেলা-খেলা সবেতেই কমিশন চাই ‘বড়দার’, এমনকী পারিবারিক বিবাদ মেটানোর ক্ষেত্রেও দলের নামে টাকা দাবি করেন, সেই টাকা দলের ফাণ্ডে কখনই জমা পড়ে না। আমরা তৃণমূল দলটা করি, তবুও বলেছি ওই ‘বড়দা’র আমলে কোনও কাজ স্বচ্ছ হয়েছে—এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না। তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক কমিটিরওই নেতা বলেন, এটাই আমাদের খেদ রয়ে গেল। দলটাকে শেষ করে দিচ্ছেন ‘বড়দা’।  এখন বলছেন পঞ্চায়েত এলাকার কাজের ঠিকার বিষয়টিও এবার থেকে তিনি দেখবেন। কেন? দলে উনি ছাড়া কি সবাই অযোগ্য? নাকি এর পেছনে অন্য রসদ রয়েছে?

প্রসঙ্গত, বর্তমান মহকুমা শাসক নিজের উদ্যোগে ঘাটাল মহকুমা শাসক চত্বরে প্রচুর উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। মহকুমার বিভিন্ন সঙ্গতিপূর্ণ মানুষকে অনুনয় বিনয় করে মহকুমার অনেক সম্পদ করেছেন। নষ্ট হতে বসাপ্রায় ৬০-৭০ বছরের পুরানো নথি সংরক্ষণ করেছেন। অব্যবহৃত রুমগুলি পরিষ্কার করে বেশ কয়েকটি রুম বার করেছেন। সংস্কারের কাজগুলি সরকারি প্রোজেক্টের মাধ্যমে  করাতে হলে বেশ কয়েক বছর লেগে যেত। পূর্বতন মহকুমা শাসক রাজনবীর সিং কাপুরের আমলে অনেকগুলি প্রোজেক্ট পাঠানো হয়েছিল। সেগুলো এখনও অনুমোদন হয়েই আসেনি।  জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রেও নজির সৃষ্টি করেছেন। নথির সরলীকরণ করেছেন। তফসিলি উপজাতিদের বিগত ৯ বছরে শংসাপত্র  (২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত) ইস্যু হয়েছিল মাত্র ১৫০০। বছরে গড়ে ১৬৬ টি করে। আর অসীমবাবুর আমলে মাত্র ৯ মাসেই ২১০০ জন তফসিলি উপজাতিদের শংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। দাসপুর-১ ব্লকের জনার্দনপুরের আদিবাসী যুবক রাকেশ নায়েক বলেন, আমরা এই মহকুমা শাসককে ভগবান মনে করি।

ঘাটাল ব্লকের তৃণমূলের ৯৫ শতাংশ নেতা  অঙ্গনওয়াড়ির বিষয় সহ অন্যান্য ইস্যুতে শঙ্করবাবুর ‘ঔদ্ধত্য এবং দলকে গোপন করে, দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার’ — এই নীতি মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু তাঁরা বেরিয়েও আসতে পারছেন না।  তাঁরা অঙ্গনওয়াড়ির নিয়োগ এবং উন্নয়নের বিষয়ে  মহকুমা শাসকের পাশে রয়েছেন। তৃণমূলের ঘাটাল শহর সভাপতি অরুণ মণ্ডল তো কিছু দিন আগে সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, এই মহকুমা শাসক সত্যিই ব্যতিক্রম। বেশ ভালো কাজ করছেন। একই  কথা বলেন ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা আইনজীবী দয়াময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, অসীম পাল একটি ব্যতিক্রমী মহকুমা শাসক। ইনি সততার সঙ্গে মহকুমার অনেক ভালো কাজ করে চলেছেন।

তৃপ্তি পাল কর্মকার

আমার প্রতিবেদনের সব কিছু আগ্রহ, উৎসাহ ঘাটাল মহকুমাকে ঘিরে... •ইমেল: [email protected] •মো: 9933066200 •ফেসবুক: https://www.facebook.com/triptighatal •মোবাইল অ্যাপ: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.myghatal.eportal&hl=en ইউটিউব: https://www.youtube.com/c/SthaniyaSambad

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now