সুই্টি রায়: ঘাটাল মহকুমা শাসকের অফিসের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রের বিরুদ্ধে ‘কাল্পনিক’ অভিযোগের চক্রান্ত কি ফাঁস হতে চলেছে? এরকমই জল্পনা শুরু হয়েছে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে। সম্প্রতি ঘাটালের অর্জুন পাল নামে এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন চন্দ্রকোণার এক ভোটার। ওই অভিযোগ তুলে তাঁকে নির্বাচনের ওই পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি বদলিরও দাবি তুলেছেন ওই ভোটারটি। সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে কোনও যোগ নেই এমন এক ভোটারের কাছ থেকে ওই ধরনের অভিযোগ পেয়ে সন্দেহ হয়েছে অনেকেরই।
অজুর্নবাবু চন্দ্রকোণা বিধানসভার রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন। সম্প্রতি অর্জুনবাবুর বিরুদ্ধে চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের ভগবন্তপুরের শশীভূষণ জুনিয়ার বেসিক স্কুলের ভোটার(অংশ নম্বর ১২ এবং ক্রমিক নম্বর ৮৪৫, ভোটার আইডি নম্বর: WUQ0036798) গুণধর রুইদাস দেশ ও রাজ্যের চিফ ইলেকশন কমিশনার, রাজ্যপাল এবং জেলা শাসকের কাছে একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সারবর্তা, অর্জুনবাবু দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার। নানা কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, শাসক দলের দলদাস হয়ে কাজ করেন। বিরোধীদের কোনও অভিযোগ শোনেন না পরন্তু বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের নানা ভাবে হুমকি দেন। তাই তাঁকে অবিলম্বে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে বদলি করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন ওই ভোটার।[অভিযোগপত্রটি ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করতে পারেন]
কোনও আধিকারিকের দুর্নীতিপরায়ন হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু গুণধরবাবুর অভিযোগের ধরন দেখে অনেকেই বিস্মিত। তাই অর্জুনবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগটি সরকারি আধিকারিকদের একাংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করেছেন বলে অনেকই অনুমান করছেন। মহকুমা শাসককের দপ্তরের কর্মীদের একাংশ বলেন, অভিযোগপত্রটি একটু খুঁটিয়ে দেখলেই প্রত্যেকেই সহজে অনুমান করতে পারবেন গুণধরবাবুকে শিখণ্ডি করে কেউ ওই কাজ করেছেন। মহকুমা শাসকের অফিসের একাংশ কর্মীদের যুক্তি—
•গুণধরবাবু পেশায় চর্মকার। জুতো সেলাই করেন। টোটো চালান। পড়াশোনা মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত করেছেন। সাধারণ ভোটার। কোনও রাজনৈতিক দলেরই কোনও পদে নেই, এমনকি বুথ কমিটির সদস্যও নন। তাই স্বাভাবিক কারণেই এই অভিযোগ তিনি করতে যাবেন না।
•তাই রিটার্নিং অফিসার পদটি ‘খায় না গায়ে মাখে ’ সেটাই তিনি জানেন না। তিনি যে ধরনের জীবনযাত্রা যাপন করেন তাতে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট পরিচালনার জন্য কাকে কোন পদে নিয়োগ করা হল তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা হওয়ার কথা নয়।
•অভিযোগপত্রটিতে চোস্ত ইংরেজিতে ডেমিঅফিসিয়াল ভাষায় লেখা হয়েছে। অর্থাৎ একজন আধিকারিক নিজেদের দপ্তরের মধ্যে যে ভাষায় চিঠি-চাপাটি লেনদেন করেন সেই লজিকে লেখা হয়েছে। অথচ গুণধরবাবু ইংরেজি লিখতে-পড়তেই পারেন না।
•দেশ ও রাজ্যে চিফ ইলেকশন কমিশনার, রাজ্যপাল এবং জেলা শাসকের কাছে অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা আনার জন্য অভিযোগপত্রের নীচে ঠিকানা না নিয়ে ভোটার কার্ডের নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেটা সাধারণত কেউ দেন না। পরিবর্তে পুরো ঠিকানা দিয়ে থাকেন। কিন্তু অভিযোগ পত্রে গুণধরবাবুর কোনও ঠিকানা দেওয়া নেই। প্রশ্ন, যিনি অভিযোগ পত্রে ভোটার কার্ডের নম্বর দিলেন, নাম ও বাবার নাম দিলেন সেখানে তিনি পুরো ঠিকানা দিলেন না কেন?
আমরা ‘স্থানীয় সংবাদ’-এর পক্ষ থেকে এনিয়ে গুণধরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাদের কাছ থেকে সমস্ত বিষয়টি শুনেই কার্যত আকাশ থেকে পড়ে যান। তিনি জানিয়ে দেন, ওই ধরনের কোনও অভিযোগ তিনি করেননি। ওই এলাকার তৃণমূল, বিজেপি এবং সিপিএম নেতাদের কাছ থেকে গুণধরবাবুর সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গুণধরবাবুর রাজনৈতিক কোনও পরিচিতিই নেই। সাধারণ ভোটার মাত্র। রাজনৈতিক নেতারাও জানিয়েছেন, গুণধরবাবু নির্লিপ্ত মানুষ। ওই ধরনের ঝুটঝামেলায় যাওয়ার কথাই নয়।
তাহলে কেন এই অভিযোগ? মহকুমা শাসকের অফিসের কয়েক জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছেন অর্জুনবাবু। যে কোনও কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করেন। গত নির্বাচনেও নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তাঁর একটা সুনাম রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিঙের ছাত্র অর্জুনবাবুর উদ্যোগেই কিছুদিন আগে ঘাটাল মহকুমা অফিসের নতুন ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। এছাড়াও ফ্রি বিসিএস কোচিংও তাঁরই উদ্যোগের ফসল। ওই সৎ আধিকারিকের জনপ্রিয়তা নিয়ে কয়েকজন খুবই ঈর্ষান্বিত বলে জানা গিয়েছে। তাঁরাই এই কাজটি করতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এবিষয়ে অর্জুনবাবুর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা শাসক(নির্বাচন) গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঘাটালের মহকুমা শাসককে বিষয়টির তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।