তৃপ্তি পাল কর্মকার ও বাবলু মান্না, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: এ যেন সিনেমার দৃশ্য। তবে বেশিরভাগ সিনেমায় মধুরেন সমাপয়েত থাকে। কিন্তু বাস্তবের এই সিনেমার কাহিনীতে আবার নতুন শুরু হল। শেষ কোথায় জানা নেই কারোর।
যাকে ঘিরে এই কাহিনীর সূচনা, তাঁর যখন মনে পড়ল সাজানো সুন্দর সংসার রয়েছে, সেই সংসারে পড়ে আছে তাঁর ছেলে, মেয়ে, স্বামী ততদিনে ২৫ টি বসন্ত কেটে গিয়েছে। আজ থেকে প্রায় বছর চল্লিশ আগে দাসপুর থানার নিশ্চিন্তিপুরের নিমাই দাসের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কালিদাসদেবী ওরফে কল্পনার। খেটে খাওয়া দরিদ্র নিমাইবাবুর সঙ্গে কালিদেবীর সুখী দাম্পত্যের মাঝে এসেছে দুটি সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বিবাহিত জীবনের চোদ্দ পনেরো বছরের মাথায় হঠাৎ করেই গোলমাল দেখা দেয়। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন কালিদাসদেবী। ছেলেমেয়েরা তখন দশ বারো বছরের। একদিন কালিদেবী বাপের বাড়ি যান, সেখান থেকে খবর আসে নিরুদ্দেশ হয়েছেন তিনি। চারিদিকে খোঁজ খবর করেও পাওয়া যায়নি। কয়েকবছর অপেক্ষা করে নিমাইবাবু বিয়ে করেন গায়ত্রীদেবীকে। গায়ত্রীদেবীর দুই সন্তান। এক ছেলে এক মেয়ে। এর মধ্যে হঠাৎ নিমাইবাবু খবর পান কালিদেবী কেরালার এক মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বাড়ি ফিরতে চাইছেন। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার আর্থিক সামর্থ্য নিমাইবাবুর নেই। তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। ১১ আগস্ট দাসপুর থানার পুলিশ কেরালা থেকে কালীদেবীকে ফিরিয়ে আনেন ও তার স্বামী ও পরিজনদের হাতে তুলে দেন।
২৫ বছর পর স্বামী ফিরিয়ে নিলেন স্ত্রীকে, এখানেই শেষ সিনেমার প্রথম অধ্যায়।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতেই খেই হারাল। কালিদেবীর সাজানো সংসার এখন গায়ত্রীদেবীর। মানতে পারছেন না তিনি কালি দেবীকে। বাড়িতে আসা থেকে উঠকো ঝামেলার যেন শেষ নেই। একে সতীন ফিরে এসেছে তার পরে দেখা গেল মাথার ছিট একটুও কমেনি কালীদেবীর। বাড়িতে আসা থেকে তার পুঁটুলি, ব্যাগ আঁকড়ে বসে আছেন, বিড়বিড় বকছেন, মাঝে মাঝেই উদুম খিস্তি দিচ্ছেন। খাবার দিলেও খাচ্ছেন না। ছেলে মেয়ের নাম বলছেন, কিন্তু কাউকে চিনতে পারছেন না। স্বামীর নাম বলছেন, চিনতে পারছেন না। কালিদেবীর ছেলে একবছর আগে মারা গিয়েছেন, সে কথা জানানো হয়নি তাকে। পাড়ার লোকজন দেখতে ভিড় জমালেও, কাউকেই চিনতে পারেন নি তিনি। এমন মানুষকে বাড়ি নিয়ে এসে বেশ ফাঁপরে পড়লেন নিমাইবাবু। গায়ত্রীদেবীর কথায় বিরক্তির সুর। বাড়িতে অভাব থাকলে উটকো ঝামেলা ছিল না। এবার সংসারে একজন বাড়তি মানুষের বোঝা এমনিতেই তার ভালো লাগছে না। তার ওপর এই পাগল মানুষের পিছনে কে পড়ে থাকবে, কে তার ওষুধ যোগাবে, কে যোগাবে খাবার? এই সব ভেবে ভেবে বিরক্ত গায়ত্রীদেবী বলেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। আর কালিদেবীকে হাজার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেও তার উত্তর নেই, কোথায় কিভাবে কেটেছে এতদিন, কিভাবে হারিয়ে গিয়েছিলেন, সব কিছুতেই নির্বাক তিনি। স্ত্রীকে ফিরে পেয়েও অসহায় দৃষ্টি নিমাইবাবুর।অদৃষ্টের ফেরে পঁচিশ বছর পরে স্বামীর ঘরে ফিরলেও আবার কী হারিয়ে যাওয়াই ভবিতব্য কালিদেবীর? সময় উত্তর দেবে।