শ্রীকান্ত ভুঁইয়া ও প্রশান্ত দোলই: যাদের কোলে তুলে নেয়নি কেউ, অবহেলায় যারা লালিত ঘাটাল মহকুমার সামাটবেড়িয়া ও কুঞ্জপুর গ্রামের সেই [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] আদিবাসী শিশুদেরই আজ ২২ জুন বুধবার,আঁচলের ছায়ায় বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিলেন ঘাটাল মহকুমার সুলতাননগর গ্রামের আঁচল সংস্থার মায়েরা। আজ তাঁরা তাঁদের পঠনপাঠনের শাখা সহজপাঠের দ্বিতীয় কেন্দ্রটির শুভ উদ্বোধন করলেন ওই এলাকায়। সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার অদম্য প্রয়াস নিয়ে তাঁদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়েই একের পর এক সামাজিক এবং মানবিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করছে এই আঁচল৷
সুলতাননগর ও তৎসংলগ্ন আদিবাসী শিশুদের আর যাতে টিপসই দিতে না হয়, সেই অশিক্ষার অন্ধকার থেকে তাদের বের করে আনতে আঁচলের সভাপতি গীতারাণী মণ্ডল এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতার হাত। সেই হাত ধরেই টলোমলো হাতের বাঁকা অক্ষর সোজা হয়ে উঠছে ক্রমশ। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা তো দূরস্ত করোনা মহামারীতেও সুলতাননগরের বিনামূল্যের এই পাঠশালা সহজপাঠের পঠনপাঠন বন্ধ হয়নি। কেউ বা প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী কেউ বা দ্বিতীয়, তাদের দায়িত্ব সভ্যসমাজে যখন কেউই সেভাবে নিতে চাননি, আঁচলের গীতাদি তখন ভাষাগত সমস্যা এবং সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে ওই শিশুদের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। গীতাদি নামক মায়ের আঁচলের ছায়া জোটে শিশুগুলির। আজ আঁচলের সদস্যাদের উদ্যোগে বিনামূল্যের পাঠশালা সহজপাঠ আরও একটি শাখা সামাটবেড়িয়ায় উদ্বোধন হল। আঁচলের সদস্যা পম্পা দোলই ,তমালিকা দোলই, মিঠু ভৌমিক, বর্ণালী মান্না দায়িত্বে থাকবেন এই শাখার শিশুদের পাঠদানের কাজে। অনুষ্ঠান সীমিত। কিন্তু আয়োজন আত্মিক । আঁচলের সদস্যা সুপ্রীতি ব্যানার্জি র নিজের হাতের বানানো কেক কেটেই শুরু হলো এই পাঠশালা। ষোলোজন শিশুদের হাতে আঁকার খাতা, পেন, রং পেনসিল যেমন তুলে দেওয়া হলো, তেমনি মিষ্টি মুখের আয়োজনে তারাও আপন হয়ে উঠলো আঁচলের। এই শুভারম্ভে আঁচলের প্রায় ত্রিশজন সদস্যা ছাড়াও ছিলেন আঁচলের শুভানুধ্যায়ী মহুল পত্রিকার সম্পাদক কেশব মেট্যা এবং গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা রীতা দোলই। প্রথমদিনের ছবি আঁকা ও পরিচয়পর্বের আন্তরিকতায় একে অপরকে নিজের করে নিল আঁচল ও শিশুগুলি। কেউবা পড়ে প্রাথমিকে কেউ বা উচ্চপ্রাথমিক। যাদের লেখাপড়া সমাজ, দেশ, ভালোমন্দ চেনানোর শেখানোর দায়িত্ব কেউ নিলো না, তাদের এবার একটি আঁচল জুটলো৷ সত্যিকার মায়ের আঁচল।