খবর ছিল তৈরি হচ্ছে বদলির চিঠি। শিক্ষার স্বার্থে ছাত্র ও শিক্ষক অনুপাতে অতিরিক্ত শিক্ষকদের পাঠানো হবে সেই সব বিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষক প্রয়োজন। প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের ৮ টি জেলায় মোট ২৮৭৩ জন শিক্ষককে তাদের বর্তমান বিদ্যালয় থেকে তুলে অন্য বিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
এই বদলি নিয়েই জেলায় জেলায় আজ ৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষকদের ত্রাহিত্রাহি রব। ৫ ফেব্রুয়ারিই শিক্ষকদের বর্তমান বিদ্যালয় ছেড়ে বদলির চিঠিতে লেখা বিদ্যালয়ে যোগদিতে হবে। আর তার অন্যথা হলে নেমে আস্তে পারে চাকুরি জীবনে কালো ছায়া। পড়াশোনা শিকেয় তুলে শিক্ষকরা নিজেদের চাকরি বাঁচাতেই ব্যস্ত। বছরের পর বছর ধরে যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন হঠাৎ সেই বিদ্যালয় ছেড়ে আজকেই অন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যোগদান! বিষয়টি মেনেনিতে পারেননি ছাত্রছাত্রী,গ্রামের মানুষ, অভিভাবক কেউই।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে শিক্ষকরা এই অনৈতিক বদলীর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ঘাটালের খড়ার বিদ্যাসাগর চক্র, ঘাটাল পশ্চিম চক্রের মতো বেশ কয়েকটি এস আই অফিসে তালাও ঝুলিয়েও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ঘাটাল-ক্ষীরপাই সড়কে ওই একই দাবিতে পর অবরোধেও সামিল হয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সব চাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই বদলিতে বাদ যাননি শাসক দলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা নেতৃরাও। দাসপুর-১ ব্লকের নাড়াজোল-২ চক্রের তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দোলই কিংবা ঘাটাল পশ্চিম চক্রের তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক সোমেশ চক্রবর্তী তাঁদেরকেও বদলীর চিঠি ধরানো হয়েছে। শাসক দলের এহেন কাজে ক্ষুব্ধ শিক্ষক সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা।
রাজ্য শিক্ষা দপ্তর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই একটি বিজ্ঞপ্তি (বিজ্ঞপ্তি নম্বর 80-SE/EE/10M-70/2018 Dated 1st February 2019) বার করেছে। এই বিজ্ঞপ্তি নাকি এতটাই শক্তিশালী জার বলে সহজেই যেকোন প্রাথমিক শিক্ষককে ইচ্ছে মত জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পাঠানো যায়।
এই অনৈতিক বদলীর প্রতিবাদে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের সাথে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতানেত্রীরাও সরব হয়েছেন। ঘাটাল পশ্চিম চক্রের তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের নেতা সোমেশ চক্রবর্তী জানান,তাঁদের সাথে কোনো আলোচনা না করেই হটচট এই বদলীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষকদের তরফে তাঁরা ঘাটাল বিদ্যাসাগর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে চাবি দিয়েছেন। এদিকে নাড়াজোল-২ চক্রের নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষে সেই চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে একটি লিখিত ডেপুটেশন দেওয়া হয়। শিক্ষকদের এই অনৈতিক বদলীর সত্বর স্থগিতাদেশের দাবিতে ছিল তাঁদের এই ডিপুটেশন।
তবে নাড়াজোল-২ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অর্ঘ মজুমদার সাফ জানিয়েদেন এই বদলিতে তাঁর কিছু করার নেই। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের পাঠানো বদলির চিঠি অনুযায়ী তাঁর চক্রে ১৭ জন শিক্ষকে নানা স্কুলে বদলি করে পাঠানো হয়েছে।
তবে এই বদলি নিয়ে আওয়াজ তুলে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করতে চলেছে প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশান (WBPTTA)।
ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই সাফ জানিয়েছেন, তাঁরা এইভাবে বদলির নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পাশাপাশি সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টে মামলার প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন। এদিন এই মর্মে আইনজীবীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সারা হয়েছে। যে সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক তাঁদের বদলি মানতে চান না তাঁরা চাইলে মামলায় সামিল হতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।