আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধা মা চম্পক লতা দেবী দরজা গোড়ায় বসে ছেলে অসিত মাইতির খাবার নিয়ে। বেলা গড়িয়ে গেলেও ছেলের দেখা মেলে না। ছেলে কোথায়? উত্তরে বৃদ্ধা বলেন আজ রাজনগরের হাট,হাট সেরে ছেলে কোন্ একটা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ফল খায়িয়ে তবে বাড়ি ফিরবে বলে গেছে।
ছেলেকে সারা গ্রাম চেনে বাবাজি নামেই। চালচুলোহীন এই বাবাজির বাড়ি দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সামাট গ্রামে। বছর পঁয়তাল্লিশের অসিতবাবু বিয়ে আর করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ছিপছিপে শীর্ণকায় অসিত বাবু ওরফে বাবাজি কিশোর বয়সেই নবদ্বীপে দীক্ষিত। নিরামিষ ভোজি বাবাজির সারাটা দিন কাটে নরনারায়নের সেবা করেই। আয় বলতে, হাটে হাটে সব্জী বিক্রি। তাথেকে যা পান অধিকাংশটাই ব্যয় করেদেন স্কুলে স্কুলে বিদ্যার্থীদের নানা ধরনের খাবার খাইয়ে।
শুধুমাত্র স্কুল বললেও ভুল,মাঝে মধ্যেই বাবাজি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পরমান্য পায়েসও এলাকাবাসীদের মধ্যে বিতরণ করেন। এলাকা বা এলাকার বাইরের বিভিন্ন মন্দির বা আশ্রমে মাঝে মধ্যেই গাড়ি করে সব্জী নিয়ে হাজির হয়েযান।
রাজনগর এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই বাবাজি এখন ভীষণ পরিচিত মুখ। বাবাজির দৌলতে ছাত্রছাত্রীরা নানা ধরনের পুষ্টিকর ফল যেমন আঙুর,আপেল,কমলালেবু,কুল,পানিফল,পেয়ারা,কলা প্রায়সই পায়। কখনও আবার বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলের জন্য নানারকম সব্জী নিয়েও আসেন।
সামাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সীমা ঘাঁটি জানান,তাঁদের বিদ্যালয়েও বাবাজি প্রায়ই নানান ফল,সব্জী,পায়েস নিয়ে হাজির হন। বাবাজি তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের ভীষণ ভালোবাসেন। প্রথমটায় খাবার নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিন্তুবোধ থাকলেও এখন আর ভয় পাই না। বাবাজি ছাত্রছাত্রীদের খুব পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশন করেন।
তবে জানাগেছে এইসব আয়োজন দেখে এর পিছনে কিছু অসৎ উদ্দেশ্য আছে ভেবে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা বাবাজিকে নিষেধও করেদিয়েছেন।
তাঁর এই কাজের উদ্দেশ্য কী? এ বিষয়ে বাবাজিকে প্রশ্ন করা হলে বাবাজি বলেন,এতদিন ভগবানের সেবা করে আমি এটুকুই বুঝেছি,মানুষের সেবা করা মানেই ভগবানের সেবা করা। আর ছোটো ছোটো নিস্পাপ শিশুদের মধ্যেই ভগবান বিরাজ করেন। আমি সেই দেবতারই পূজা করছি। আমার সব্জী ব্যবসার মূল লক্ষ্যই জীবের সেবা। আমি সংসার ধর্ম জীব সেবার কারণেই ত্যাগ করেছি।
মোবাইলে নিয়মিত খবর পড়তে এইখানে ক্লিক করুন Whatsapp