সুমিতা মোদক, স্থানীয় সংবাদ: ঘাটালের উপর দিয়ে রেলপথ করতে হলে সবচেয়ে জরুরি যে জিনিসটি আগে করতে হবে তাহল ঘাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ। রেললাইন প্রতিবছর জলে ডুবে থাকবে এমন ভৌগোলিক পরিবেশে রেলপথ গড়ে তোলা খুব মুশকিল। ইতিহাস বলছে—ভারতবর্ষের মহান মনীষী ও আন্দোলনকারীদের প্রতি প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে, তৎকালীন বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে ‘রেলপথের জনক’ লর্ড ডালহৌসির উদ্যোগে ১৮৫৩ সালের ১৬ই এপ্রিল যে রেলপথের সূচনা (বোম্বে থেকে থানে) নিজেদের স্বার্থে- যাত্রাপথের সুবিধা, বাণিজ্যিক কারণে পর্যবসিত করেছিল যে ব্রিটিশ সরকার, আজ এর বিস্তার অনেক। আজ আমরা সেই বিজ্ঞানের আধুনিক নবজাগরণের মধ্যে অলসতার পর্যায়ে বিরাজমান, সমস্ত কিছুই আছে তবু যেন কাজ করার মানসিকতা নেই, মানবতার সৃষ্টি সকল অনেকটা অগ্রসর হলেও, ‘সিংহ শিশুর’ জন্মস্থান বীরসিংহ আজও রেলপথের হাত ধরা থেকে বঞ্চিত! হ্যাঁ, হতে পারে কিছু রাজনৈতিক পরিপন্থী মূলকভাব, কয়েক শ্রেণীর মানুষের বাণিজ্যিক স্বার্থ আর কিছু চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবী, অভিজ্ঞতাপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আগ্রহের সাথে আন্দোলনের অভাব!
ইতিহাস আমাদের অনেক কিছুই শেখায় কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা কিছুই শিখতে চাই না, ভুল হলে তার শোধন করে, তাই মানিয়ে নেওয়াই শ্রেয়! তাই আমরা চরম মুহুর্তে ভুলে যাই। এতোগুলো কথা লেখার কারণ একটাই, আজ বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘাটাল মহকুমায় রেলপথের দাবিতে যে জোরালো আন্দোলনের সূচনা, তা আগামী দিনে ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসুক তা প্রত্যেক শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিত্বই চাইবে! তবে ইতিহাসের ছাত্রী হিসেবে ইতিহাস থেকে কিছু শিক্ষা অর্জন করে, পরিপূর্ণ- পরিপূরকভাবে ভবিষ্যৎ সমাজ, ভূগোল কেন্দ্রিক পরিপন্থী এই আন্দোলনকে বিপরীতমুখী করলে তা মেনে নেওয়া যাবে না! তাই আগেভাগেই নিরপেক্ষভাবে কলম নামক অস্ত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম— প্রথমত, শুধু আন্দোলন করলেই হয় না, তার ভালো- মন্দ দিকটাও দেখা প্রযোজ্য, আজ এর পক্ষে অনেক আওয়াজ উঠছে ঠিকই, তবে সরকার জনগণের দাবি মেনে যতদিন এই প্রকল্পটিকে বাস্তবায়িত করতে সময় নেবে, ততদিন আন্দোলনকারীদের উচিত ম্যাপ তৈরি করে (পাঁশকুড়া- ঘাটাল, মেদিনীপুর- ঘাটাল, চন্দ্রকোণা রোড- ঘাটাল রেলপথ) যে পরিমাণ অরণ্য বিসর্জন হবে, আশেপাশের পতিত জমিতে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা, যাতে পরবর্তী সময়ে যাতে জল কষ্টজনিত কারণে খরার সম্মুখীন না হতে হয়। চাষিদের দিকটিও ভেবে দেখা ও বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরিকল্পনা রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত: রেলপথ শিক্ষিত যুবক- যুবতীদের কর্মের ব্যবস্থা করলেও বেশকিছু বাস চলাচল বন্ধ হলে, সেই সমস্ত বেকার ও তাদের পরিবারের জন্য ভাবা। তৃতীয়ত: গ্রামের মানুষদের রেলপথ ব্যবহার ও সচেতনমূলক বার্তা দেওয়া, না হলে বিপদ হতে পারে! যদিও ইতিহাস বলছে গরিব অল্প শিক্ষিত ব্যক্তিদের ইতিহাসের পাতায় খুবই কম পাওয়া যায়, সোনার চামচ মুখে দেওয়া ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পায় আর ওদের স্থান আজও শূন্য! চতুর্থত: হ্যাঁ, রেলপথ যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুস্থির- ক্লান্তিহীন, কম ভাড়ামূলক ব্যবস্থা যা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের মাস টিকিট হিসেবে সুবিধাজনক, এতে পুরো মুনাফা সরকারের, তাহলে খেটে খাওয়া বাস নির্ভরশীল মানুষগুলোর কী হবে? পঞ্চমত: সরকারি টাকা এমনিতেই বহু অকাজে ব্যয় হচ্ছে, সেই অর্থের হিসেব সব বেহিসেব হয়ে যায়। নইলে এতবছর ধরে আন্দোলন করেও ‘ঘাটাল মাষ্টার প্ল্যান’ আজও হল না। সেদিকটাও নজর রাখতে হবে।
দূষণবিহীন এই রেলপথ যদি প্রকৃতিকে ভালোবেসে ও ইতিবাচক দিক বজায় রেখে গড়ে ওঠে, তবেই উচিত নয়তো না! তাই আন্দোলনের পাশাপাশি নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করে দেখলে, আগামীতে প্রকৃতিকে আঘাত না করে তথা আবহাওয়ার দিকটি মাথায় রেখে করতে হবে। কেননা এর প্রভাব সকল মানুষের ওপরে পড়বে, আর ইদানিং, গরম বৃদ্ধি, জলস্তর নেমে যাওয়া এগুলো মানুষেরই কাজের ফলাফল, বাকি ভাবনাটা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল।