কাজলকান্তি কর্মকার[অতিথি প্রতিবেদক]: সম্প্রতি ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে ওই কলেজের [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রচুর যুবক-যুবতী রক্তদান করেছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান পরিচালনা নিয়ে কয়েকজন তৃণমূল নেতা যে ধরনের ব্যবহার করেছেন তাতে যার-পর-নাই অপমানিত, বিরক্ত, অসন্তুষ্ট ওই কলেজের অধিকাংশ অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা সহ ঘাটাল মহকুমার বাসিন্দারা। ওই দিনের বিশেষ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল—
✔কলেজে যোগ্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা থাকলেও ‘বহিরাগতদের’ দিয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করা হয়েছে। অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের অনুষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।
✔শুধু তাই নয়, কলেজের এক অধ্যাপক তথা কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অবিনাশ গায়েনকে এক তৃণমূল নেতা হুমকির সুরে অপমান করে কার্যত তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোন কাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে ছিলেন। যেটা কলেজের কোনও অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাই মেনে নিতে পারেননি। অবিনাশবাবু বলেন, বিষয়টি আমি গভর্নিংবডিতে জানাব। এর প্রতিকার হওয়া দরকার।
✔কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী নিয়মিত সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চা করেন। কলেজের এনসিসি বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে তাঁদের পারফর্ম্যান্স দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। কিন্তু তাঁদেরকে কোনও রকম সুযোগ না দিয়ে ঘাটাল শহরের একটি নৃত্য স্কুলের দ্বারায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করানো হল। এতে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করেছেন।
✔কলেজের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরে জনপ্রতিনিধির তকমায় সারা জেলার তৃণমূল নেতাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। ওই রক্তদান অনুষ্ঠানের নামে প্রকারন্তে ওই ভাবে দলীয় সম্মেলন করানোটাকে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। ওই কলেজের এক অধ্যাপকের ভাষায়, বর্তমানে নেতাদের একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাঁরা তুলসী মঞ্চের উদ্বোধনে উপস্থিত হয়েও মঞ্চ ‘আলোকিত’ করতে ছাড়েন না। সেই মঞ্চে উঠে এমন বক্তব্য রাখেন তা একজনও মন দিয়ে শোনেন না। সেজন্যই তাঁরা ওই রক্তদান শিবিরের মতো সাধারণ অনুষ্ঠানে এসেও বক্তব্য দিতে ছাড়েননি।
ওই কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারীকে (দেব) ওই দিনে নেতারা যে সমস্ত আচরণ করেছিলেন তা জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। কারণ, দেব কিছুদিন আগে কলেজে গিয়ে জানিয়েছিলেন, কলেজে যাঁরা পড়ান তাঁরা উচ্চ শিক্ষিত। পড়ুয়ারাও বেশ শিক্ষিত। তাই কলেজটা কলেজের মতো করে চলুক। সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্নাও জানিয়েছেন, ওই দিন রক্তদান শিবিরে কিছু ঘটনা অনভিপ্রেত হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি আমারও খারাপ লেগেছে। কলেজের অর্থনীতির অধ্যপক অমিত রায় ওই দিনের ঘটনায় ব্যথিত। তিনি বলেন, আমি ওই দিন রক্তদান শিবিরে ছিলাম না। তবে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের কাছ থেকে যা শুনেছি সেটা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে।
ওই ঘটনার পরই কলেজের গভর্নিংবডির এক সদস্য কমিটি থেকে পদত্যাগ করার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই কলেজে এসেছিলাম। কিন্তু চোখের সামনে নেতারা কলেজে যে ধরনের পার্টিবাজি করলেন সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। গভর্নিং বডির ওই অবিতর্কিত সদস্য বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমার পক্ষে বডিতে থাকা সম্ভব নয়।