মন খারাপ বিজেপির কর্মীদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ‘স্থানীয় সংবাদ’ ঘাটাল: গত বছর এই সময়ে [‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]একরাশ আশায় আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বিজেপি কর্মীদের আজকে ভীষণ মন খারাপ। একবছর আগে যে উন্মাদনা নিয়ে বিধানসভায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপির কর্মীরা, আজ তাদের ছন্নছাড়া অবস্থা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই শুরু হয়েছিল বিজেপির সবচেয়ে বড় উত্থান। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ ও বিরোধী দল হিসেবে সিপিএমের কন্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে আসার সাথেসাথেই তীব্র হয় বিজেপির আশার আলো। ২০১৯ সাল থেকে মানুষ ভাবতে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিই ভবিষ্যৎ, আর তার সাথে যুক্ত হয় নরেন্দ্র মোদীর স্ট্রংম্যান ভাবমূর্তি।
পার্টি অফিস তো দূরের কথা যেসমস্ত গ্রামে এক কিলোমিটারের মধ্যে বিজেপির একটা পতাকাও ছিল না সেখানেও বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে ভোটে এগিয়ে যায়। ঠিক যেন দশবছর আগের ২০০৯ লোকসভার ছবি, যেমনটি সেইবার তৃণমূল কংগ্রেসের জোয়ারে বাংলা জুড়ে সিপিএমের শেষের শুরু হয়। যেন বাংলার মানুষ মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল ক্ষমতা পরিবর্তন করবেই।
২০১৯ লোকসভা ভোটের পর শুরু হলো বিজেপির সংগঠন তৈরির খেলা, হঠাৎ করে ক্ষমতার এই গন্ধে তখন বিজেপির প্রেমী-অপ্রেমী সবাই আসতে চায়। তৃণমূল কংগ্রেসের ঘোর দূর্দিন তখন, তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসের ভিড় ফাঁকা। বিজেপির বুথ সভাপতিরাই কোথাও কোথাও যেন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের কানধরে উঠবোসও করতে হয়েছে বিজেপির নব্য প্রতিনিধিদের হাতে। একটু উঠতি নেতারা পুকুর বোজানো ইত্যাদি থেকেও তোলা আদায় করে ফেলেছে ততদিনে।
এমনটা নয় যে তখন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা বিজেপির বিরুদ্ধে ছিল, কোথাও কোথাও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপিকে মনপ্রাণ ঢেলে চেয়েছিল তারা। চন্দ্রকোনার কল্লা, মহেশপুর, মহাবালার মতো মুসলিম প্রধান গ্রামগুলোতে বিজেপির পতাকা দেখা যাচ্ছিল মুসলিম যুবকদের হাতেই।
মাস খানেক কাটতে না কাটতেই বিজেপির সবচেয়ে বড় আপদ CAA NRC হাজির হল। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র চলে এলো এই আইন। আইনে যাই থাকুক আর যতটাই প্রয়োগ হোক বিজেপির সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছিল এই আইন, আজ প্রায় আড়াই বছর পরেও সেই আইনের আওতায় একজনের নাগরিকত্ব বাতিল হলো না কিন্তু ২০২১ এ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল।
এই আইনের চেয়েও বিজেপির বড় ক্ষতি করেছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের মুসলিম বিরোধী কথাবার্তা। আতঙ্কের সম্পূর্ণ ফায়দা হাসিল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নিঃশব্দেই একটা বড় ভোট কেটে গিয়েছিল সেদিন। শুধু মুসলিম নয় কাগজ না থাকলে কি হবে সেই ভাবনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে জেতানোর জন্য বহু ছেলে তাদের চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিল লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে। হয়তো তাদের ভাবনা ছিল চাকরি হবে, শিল্প বাণিজ্য হবে পশ্চিমবঙ্গে।
একে একে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ভীড় করে ঢুকছে বিজেপি পার্টিতে, তবে সেটা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ কম হয়নি। বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা কি চাইছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না সেদিন আর আজও।
যাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে বিজেপি করতে আসা তারাই যদি বিজেপিতে ঢুকে যায়, “তবে বিজেপি করে কি লাভ” এই অঙ্কটা ঘুনপোকার মতো বিজেপিকে দূর্বল করে দিয়েছিল। নিচুতলার কর্মীদের অবজ্ঞা করে কোলকাতার অফিস থেকে ঠিক হয়েছিল কে টিকিট পাবে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তনদের টিকিট দিয়ে সেদিন নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছিল বিজেপি। আর এই সুযোগে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে মাঠে নেমেছিল, সঙ্গে ছিল পিকের টিমের পক্ষপাতহীন সমীক্ষা। দোষত্রুটি সামলে তৃণমূল কংগ্রেস যতটাই এগিয়েছে ততটাই বিজেপি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে স্তবকদের কথা শুনে , হাবে ভাবে তাদের ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সাধারণ মানুষের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে বা বিজেপি সরকার কি কি কাজ করছে সেই সব কথা বাদ দিয়ে CAA নিয়ে সভা আর আলোচনা হয়েছে অনেক সময় ধরে যার নিট ফল শূন্য। তৃণমূল স্তরের বিজেপির উচ্চ স্তরের সাথে যোগাযোগ বলতে উপর থেকে আসা নির্দেশ পালন করা যাকে ওয়ান ওয়ে বলা যেতেই পারে। আর সেইসময়ে পিকের টিম চা দোকানী থেকে টোটোওয়ালা সবার থেকে জেনে নিয়েছে এলাকাবাসীর মতামত। ভোটের ফলাফল কি হবে প্রশান্ত কিশোর বলে দিয়েছিলেন অনেক আগেই, অক্ষরে অক্ষরে সে কথা মিলেও গেছে।
তবে ভোটের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা বুঝতে পেরেছিল রাজনীতিতে তাদের জন্য একটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভীষণ অভাব যে সর্বশক্তি দিয়ে তাদের জন্য লড়াই করবে। একটি বছর কেটে গেছে, এতো রক্তক্ষয়ের পরেও না প্রধানমন্ত্রী না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেউ একটিবারের জন্যও নিহত আহত কর্মীদের বাড়িতে পা দেননি। ফল প্রকাশের পর যাদের দোকান, বাড়ি, ব্যবসায় আঘাত লেগেছে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজনের হাতে, তাদের নূন্যতম ক্ষতিপূরণের কথাও ভাবেননি (ক্ষেত্র বিশেষ ছাড়া) ভোটের সময় কোটি কোটি টাকা খরচ করতে আসা বিজেপি নেতৃত্ব। এখানেই শেষ নয় বরং আরও একবার আশাহত হয়েছে বিজেপির যুবকর্মীরা। তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ বা এনডিএ সরকারের অধীনে একটা দুটো মন্ত্রক নিয়ে গ্রাম বাংলার বহু তৃণমূল কংগ্রেসের ছেলেদের কাজ দিয়ে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির এতো গুলো রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার হাতে থাকা সত্ত্বেও কোনো বিজেপি কর্মী কোথাও কাজ পেয়েছে বলে শোনা যায় নি। ক্ষোভে অভিমানে বা নিজের নিজের পেটের তাগিদে অনেকই তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকার তলায় আশ্রয় নিয়েছে।
এর পরের গল্প সবাই জানে, পৌর ভোটের সময় বুথে বুথে এজেন্ট পর্যন্ত ছিল না অনেক জায়গায়। যতই ভোট চুরির অভিযোগ করুন উপর তলার নেতারা, নিচুতলার কর্মীরা পাশে নেই সেটা অস্বীকার করা অসম্ভব। উল্টে সিবিআই তদন্তের নামে যে খেলা চলছে তাতে সেটিং হয়ে গেছে বলেই বেশিরভাগ বিজেপির কর্মী সমর্থকদের বিশ্বাস। হাজার টাকার ঝলমলে ঝাড়বাতি যেন টিমটিমে প্রদীপের আলোয় পরিনত হয়েছে মাত্র এক বছরেই।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: ss.ghatal@gmail.com •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।