তৃপ্তি পাল কর্মকার, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: ঘাটাল রবীন্দ্রশতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হচ্ছেন ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী(দেব)। আজ ২৪ আগস্ট এই মর্মেই রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে একটি চিঠি এসেছে। এছাড়াও কলেজের কমিটিতে এবার স্থান হচ্ছে ঘাটাল শহরের যোগদা সৎসঙ্গ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক গৌরীশঙ্কর বাগ এবং প্রতাপপুর হাইস্কুলের শিক্ষক সুশান্ত মণ্ডলের।
এনিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য দেব ঘাটাল কলেজের সভাপতি হলেন। ২০২০ সালে ওই কলেজের সভাপতি ছিলেন তৎকালীন বিধায়ক শঙ্কর দোলই। ওই বছর ১৪ আগস্ট কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতির পদ থেকে ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলইকে সরিয়ে সংসদ
সদস্য দীপক অধিকারী তথা দেবকে আনা হয়। কিন্তু তিনি কলেজের দায়িত্ব নিতে না নিতেই তাঁকে সরিয়ে দিয়ে শঙ্করবাবু ফের সভাপতি হন।
২০১৬ সালে ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয়বার জয়লাভ করার পরই শঙ্করবাবু ঘাটাল বিধানসভার সমস্ত রাশ নিজে হাতে নিয়ে নিজের মতো করেই পরিচালনা করতে শুরু করেন। ফলে নিজে কলেজের সভাপতি পাশাপাশি নিজের ছেলেকে ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়ে দেন। আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের নেতা সায়ন সেনগুপ্ত বলেন, বিধায়কের পুত্র হওয়ার সুবাদে ঘাটাল কলেজে একই ‘ছাত্র’(?) নিয়ম বিরুদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। ছাত্র সংসদটিকে
আড্ডা খানায় পরিণত করেছেন। তৃণমূলের কাউন্সিলার হয়ে কলেেজর টিআইসি তাঁকে কিছু বলার সাহস পাননি। আমরা স্মারকলিপি দিয়েও কিছু সুরাহা হয়নি। ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লক্ষ্মীকান্ত রায় নিজে তৃণমূলের কাউন্সিলার হওয়ায় তিনি শঙ্করবাবু এবং তাঁর পুত্রের সমস্ত রকম ‘অন্যায়’কে চোখ বুজে মেনে নিতেন বলে অভিযোগ।
শঙ্করবাবু বিধানসভায় হেরে যাওয়ার পরই তাঁর একের পর এক ডানা ছাঁটা শুরু হয়েছে। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলাতেও শঙ্করবাবু এবং তাঁর অনুগামীদের স্থান দেওয়া হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শঙ্করবাবু এক সময় যে দলের মধ্যে থেকে অন্যান্য নেতাদের উপর অত্যাচার করেছেন তাঁরই ফলস্বরূপ এই ডানা ছাঁটা প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয় তাঁর অনুগামীদের পর্যায়ক্রমে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঘাটাল কলেজে শেষ স্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ২০১৩ সালে অবসর গ্রহণ করলে টিআইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন ঘাটাল কলেজেরই ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক লক্ষ্মীকান্ত রায়। বছর চারেক আগে বাগনান কলেজের এক অধ্যাপক ড. চন্দন দে লিয়েন নিয়ে ঘাটাল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলান। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তিনি ওই দায়িত্ব ছেড়ে আবার তাঁর পুরানো কলেজে ফিরে গেলে সেই থেকে লক্ষ্মীবাবু ফের টিআইসি’র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন ড. মন্টুকুমার দাস। ৬ জুলাই তাঁর ঘাটাল কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার কথা ছিল। কিন্তু কলেজে এত দিন গভর্নিং বডির সভাপতির পদ শূন্য থাকায় তিনি যোগদান করতে পারেননি। সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলেন,আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে মন্টুবাবুকে আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দেখতে পাব।
মন্টুবাবু পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। অধ্যাপক হিসেবে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। তিনি প্রথমে গড়বেতা কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে তিনি গোয়ালতোড় সাঁওতাল বিদ্রোহ সার্ধশতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ঘাটাল মহকুমার অনেকেই গড়বেতা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। গড়বেতা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা বলেন, পদার্থবিদ্যার দক্ষ অধ্যাপক হিসেবে মন্টুবাবু অত্যন্ত জনপ্রিয়। এদিকে গোয়ালতোড় সাঁওতাল বিদ্রোহ কলেজের বর্তমান অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা বলেন, মন্টুবাবু প্রশাসক হিসেবেও দক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বিষয়টিকে সবসময়ই প্রাধান্য দেন। অনিয়মকে কোনও ভাবেই রেয়াত করেন না। কলেজের মোট চারজন সরকারি নমিনি থাকেন। আজ ২৪ আগস্ট তিন জনের নাম এসেছে। শিক্ষক বিকাশ করের নামটি কয়েক দিনের মধ্যেই এসে যাবে বলে জানা গিয়েছে।