সুইটি রায়👆স্থানীয় সংবাদ•ঘাটাল:নিজেকে সাজিয়ে তোলার প্রয়াস মানুষের চিরন্তন। যদিও এবিষয়ে নারীরা পুরুষদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। সাজগোজ এখন জীবনের অন্যতম অঙ্গ। ঘরোয়া টোটকা,রেমেডিতে আটকে না থেকে এখন নিজেদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এখন অনেকেই যান পার্লারে। আর এই সৌন্দর্যায়নের জন্য পাড়ার মোড়ে মোড়ে এখন প্রচুর পার্লার ও স্যালোনের ছড়াছড়ি। অবশ্য এই রূপচর্চা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে অনেক মহিলা সুযোগ পেয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব কর্তব্য সেরে নিজে কিছু রোজগার করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছেন অনেকেই বিউটি পার্লারের মাধ্যমে। কিন্তু গত একবছর ধরে চলছে করোনা পরিস্থিতি। প্রথমে টানা লকডাউন আর তারপর ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমতে না কমতেই আবার দ্বিতীয় ঢেউ, আবার লকডাউন। এই অবস্থায় কেমন আছেন বিউটিসিয়ানরা? দীর্ঘকাল পার্লার বন্ধ থাকার ফলে রোজগারও মোটামুটিভাবে বন্ধ, কীভাবে সামলাচ্ছেন নিজেদের? তাঁরাই বা কেমন আছেন যাঁরা সাজতে ভালোবাসেন? পার্লারে যেতে না পেরে তাঁদেরই বা কি অবস্থা?
ঘাটালের একটি জনপ্রিয় বিউটি পার্লার ‘রাজ বিউটি পার্লারের’ (৮১৪৫৭৮০০৩৭) কর্ণধার বৈশাখী দত্ত হড় বলেন, গত বছর থেকে এখন অব্দি মাত্র দু-তিন মাস পার্লার খোলা রাখতে পেরেছি। লোকসান তো হচ্ছেই তবে সুরক্ষা সবার আগে তাই মেনে নিতে হচ্ছে। ‘ঊর্বশী’র (৯৪৩৪৫০৯৮২৬) কর্ণধার প্রতিমা দত্ত জানান, গতবছর লকডাউন থেকে এখন অব্দি পার্লার প্রায় বন্ধ। মাঝে পুজোর সময় থেকে কিছুদিন খোলা থাকলেও অন্যান্য বছরের মতো লোকজন পাইনি। গত ১৫-১৬ বছরের অভিজ্ঞতায় অন্যান্য বছরে পুজোর সময় দুপুরে আমি বাড়ি ফেরার, খাওয়ার সময় পাই না। কিন্তু গতবারের চিত্র পুরো অন্যরকম। যদিও সরস্বতীপুজোর সময় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছিল অবস্থা। বিয়েতে ব্রাইডাল মেক-আপ এখন ট্রেন্ড, কিন্তু অতিমারী সেই ট্রেন্ডকেও অনেকটাই স্তিমিত করে দিয়েছে। ঘাটালের আর একজন বিউটিসিয়ান সোমা কপাট(৮৯৬৭৪২১৬৩৩) বলেন, আমি তিন বছর এই কাজের সাথে যুক্ত হয়েছি। এতদিন প্রয়োজন মতো মানুষের বাড়ি গিয়েই আমি কাজ করতাম। আশা ছিল গত পুজোতে নিজের পার্লার খোলার। কিন্তু মহামারী তা হতে দিল না। কাজই নেই পার্লার খুলেই কি লাভ! খড়ার পৌরসভার খড়ার মণ্ডলপাড়ার একটি চালু বিউটি পার্লার ‘কুইন বিউটি কেয়ার’(৯৭৪৯৭০২৭৬৭)। চারবছরেরই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পার্লারটি। যদিও পার্লারের কর্ণধার অনুপমা ঘোষ প্রায় সাত বছর যুক্ত এই কাজের সাথে। তিনি বলেন করোনা, লকডাউন কাজের ক্ষতি তো করছেই তবে সবথেকে কষ্টের জায়গা এটাই যে নিজের ভালোবাসার কাজ থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। এটা যেন নিজের পরিবারের থেকে দূরে থাকার মতোই বেদনাদায়ক। সবথেকে বড় কথা বিউটিসিয়ান হওয়ার সবথেকে বড় শর্ত হল সবসময় নিজেকে সময়ের সাথে আপডেট রাখা, অনেক অভ্যাস করা। কিন্তু এখন কাজ বন্ধ তাই অভ্যাসের থেকে অনভ্যাস বেশি। হঠাৎ কোনও কাজ এসে পড়লে ভুলচুকও হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রিয় কাস্টমাররাও বিরক্ত হচ্ছেন অনেকক্ষেত্রে। এতদিন পার্লার বন্ধ, সেভাবে কাজ নেই এসব ক্ষতি তো আছেই তার ওপর পার্লার থেকে যে সমস্ত বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি হত সেসবও বন্ধ। ডেট এক্সপায়ার হয়ে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে প্রচুর দামি জিনিস। খড়ারেরই আর এক বিউটিসিয়ান দীপিকা মণ্ডল(৮২৫০৪০৬১৬২) বলেন, আমি প্রায় আট বছর এই প্রফেশনে রয়েছি। নিজের পার্লার না থাকলেও সারাবছর কাজের কমতি থাকে না, ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই কাটে। তবে গতবছর থেকে বদলে গেছে সবকিছুই। সেভাবে কোনও কাজই নেই। সাজার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই মানুষের। আর তাছাড়া আমাদের কাজটাই এমন যে সেটা করোনাবিধি অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব মেনে করা সম্ভবই না। আর সবথেকে বড় কথা অনেকেই এটা ভাবতে শুরু করেছেন যে বাইরে তো বেরোচ্ছিই না তাহলে সেজেই কি লাভ? মাস্কেই তো মুখ ঢাকা। সাজগোজ তো অন্যকে দেখানোর জন্য সেই উপায়ই তো নেই এখন। তিনি আরও বলেন এই লকডাউনে তো একদমই কাজ নেই। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর যে কটা কাজের চুক্তি হয়েছিল সেসব তো কবেই বাতিল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে সত্যিই বড্ড ডিপ্রেশনে ভুগি। তবে আশা রাখছি যে গতবারের পুজোর সময় যেমন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল এবারেও তাই হবে।
ঘাটালের কেয়া বন্দোপাধ্যায়, মৌসুমি মহাপাত্র,কাকলি পাত্ররা বলেন, সাজগোজ আমাদের সবদিনই পছন্দের। আগে মাসে প্রায় দুবার যেতাম পার্লারে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। নিজেদের সাথে নিজের পরিবারের সুরক্ষার কথাও তো চিন্তা করতে হবে তাই কষ্ট হলেও নিজেদের আটকে রাখার চেষ্টা করছি। যতটা সম্ভব নিজের পরিচর্যা নিজে করার চেষ্টা করছি। আশা করি পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়িই স্বাভাবিক হবে। আমরা আবার মনের মতো করে সাজিয়ে তুলতে পারবো নিজেদের।।
•আমাদের ফেসবুক পেজ:https://www.facebook.com/SthaniyaSambad.Ghatal/
•ইউটিউব চ্যানেল:https://www.youtube.com/SthaniyaSambad
•আমাদের সংবাদপত্রের মোবাইল অ্যাপ:https://play.google.com/store/apps/details?id=com.myghatal.eportal&hl=en
•টেলিগ্রাম চ্যানেল:https://t.me/SthaniyaSambadGhatal