মহকুমায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন সর্বস্তরের মানুষ

মন্দিরা মাজি👆স্থানীয় সংবাদ•ঘাটাল: ঘাটাল মহকুমায় দিন দিন আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের বয়স ১৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ঘাটাল মহকুমায় গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই কম বয়সী যুবক-যুবতী বা গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা ঘাটাল মহকুমার মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক কালে ঘাটাল মহকুমায় যে কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা দেখা গিয়েছে প্রত্যেকের বয়সই ৩০ এর নীচে। এই কম বয়সীদের আত্মহত্যার ঘটনা মহকুমার সর্বস্তরের মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। এবার দেখে নেওয়া যাক বিগত কয়েক সপ্তাহে মহকুমায় কোথায় কে এবং কীভাবে আত্মহত্যা করেছেন।
৭ মে সকালে দাসপুর থানার বাঁকিবাজারে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। ওই যুবকের নাম রঞ্জিত মান্না(৩৩)। তবে এই মৃত্যু নিয়ে পুলিশ এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। ২৩ এপ্রিল শুক্রবার দাসপুর থানার আলিপুরে রুপালি মণ্ডল(৩০) নামে এক গৃহবধূ সিলিং ফ্যানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার দুদিন আগে অর্থাৎ ২১ এপ্রিল ওই থানারই ডিহিপলসাতে এক অল্পবয়সী যুবক ঠিক একইভাবে নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। মৃত ওই যুবকের নাম সুমন খাঁড়া(২১)। পরিবারের লোকজনের অনুমান, প্রণয়ঘটিত কারণে এই কাজ করেছেন সুমন। ওই মাসেরই ১৬ এপ্রিল শুক্রবার দাসপুর থানার সামাটে অভীক মাইতি নামে ১৯ বছরের এক যুবক আত্মহত্যা করেন। সেটিও প্রেম ঘটিত কারণে বলে পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এরই ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঘাটালের মনোহরপুর গ্রামে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃত যুবকের নাম বাহাদুর কান্ডার (২৬)। বাহাদুর পারিবারিক অশান্তির কারণে আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের অনুমান। আবার ১৩ এপ্রিল দাসপুরের ঘনশ্যামবাটির এক গৃহবধূর শোবার ঘর থেকে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ এপ্রিল একই রকম দুটি ঘটনা ঘটে। দাসপুর থানার সুরানারায়ণপুর গ্রামে পুকুর পাড়ে হিজল গাছের ডাল থেকে এক আদিবাসী যুবকের ঝুলন্ত দেহকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মৃত ওই যুবকটির নাম প্রশান্ত সিং (২১)। ওই একই দিনে ঘাটাল থানার দীর্ঘগ্ৰামে সাবিত্রী মণ্ডল নামে বছর ২৭ এর এক গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার হয় তার শ্বশুর বাড়ি থেকে।
আত্মহত্যা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন, ভয়, ভুল ব্যাখ্যা ও কুসংস্কার রয়েছে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু হতাশা, মানসিক চাপ কাজ করে। কিন্তু যখন সেটা অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে যায় তখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে মনস্তাত্ত্বিকদের অভিমত। মনস্তাত্ত্বিকরা বলেন, মৃত্যুর সিদ্ধান্তটা সাধরণত হঠাৎ করে নেন তাঁরা। কোনও এক প্রিয় জনের কাছ থেকে আঘাত পেয়ে অভিমানে বা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেও তিনি আত্মহত্যা যখন করতে যান সেই মুহূর্তে তিনি যেমন তাঁর অতীত ও ভবিষ্যতের কথা ভুলে যান। ভুলে যান অন্যান্য প্রিয়জনদের কথাও। মৃত্যুটাই সেই সময় তার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
মানুষটি মারা যাওয়ার পর পরিবারের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে এবং মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন পরিজন-পরিচিতরা। বিশেষত মা-বাবার নিজের সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগে। ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুশান্ত কুইল্যা বলেন, ১৮-৩০ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে পুঁথিগত শিক্ষা থাকলেও তারা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে সমাজের বিভিন্ন বাধাবিঘ্নের দিকগুলি কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয় না। বাস্তব সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বোধের অভাব থাকে তাদের মধ্যে। বাস্তব পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে মৃত্যুকে বেছে নেয়। এক্ষেত্রে কমবয়সীরা আবেগপ্রবণ হয়ে বিশেষত প্রণয়ঘটিত কারণে আবার বড়োরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। আর এইসব থেকে মুক্তি পেতে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আত্মহত্যা করে।
নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের স্পেশাল এডুকেটর অভেদানন্দ প্রাণীগ্রাহী বলেন, প্রেমঘটিত কারণ, পারিপার্শ্বিক চাপ এবং পারিবারিক অশান্তির জন্য কিছু কিছু মানুষ খুব বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। নিজেদের সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ফলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সম্প্রতি যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলি ঘটেছে তাদের মধ্যে অভীক ও সুমন রাজনগর ইউনিয়ন হাইস্কুলের ছাত্র। দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্বও ছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রায় সময় একসাথে দেখা গেছে তাদের। ওই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক অভিজিৎ কাপাস ছাত্রছাত্রীদের এহেন হঠকারি সিদ্ধান্তে খুবই মর্মাহত। শিক্ষক সমাজ এবং তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই কাজে বিস্মিত, উদ্বিগ্ন ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ধৈর্য্য ও সময় এই দুটো জিনিসের উপর কখনও বিশ্বাস হারানো উচিত নয়। ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা দরকার। তাহলে যাই ঘটুক না কেন বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে আলোচনা করলে আত্মহননের মতো ঘটনা ঘটবে না। সেই সঙ্গে অভিজিৎবাবু, সকলকে সদর্থক চিন্তা ভাবনা করার পাশাপাশি নেতিবাচক চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়ারও পরামর্শ দেন।

👆 আমাদের ফেসবুক পেজএবংইউটিউব চ্যানেলটিলাইক করুন। প্রতি মুহূর্তে ঘাটাল মহকুমার খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম নিউজ গ্রুপেও যোগদান করতে পারেন।লিঙ্ক: https://t.me/SthaniyaSambadGhatal ওখানে যোগদান করলে আপনার মোবাইল নম্বর গ্রুপের অন্য কেউ জানতে পারবেন না।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

•‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সাংবাদিক। ঘাটাল মহকুমার যেকোনও খবর আমাকে সরাসরি পাঠাতে পারেন। মো: 9933998177/ 9732738015