তৃপ্তি পাল কর্মকার:এবার দাসপুরের গেঁড়িবুড়ি মেলা হচ্ছে না। করোনা জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলেই এবার ওই মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে মেলা বন্ধ থাকলেও গেঁড়িবুড়ির মন্দিরের পুজো যেমন চলে এবছরও চলবে বলে জানানো হয়েছে।[•এই খবর সম্পর্কিত ভিডিওটি দেখতে চাইলে ▶এখানে ক্লিক করতে পারেন।]
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিখ্যাত মেলা এই গেঁড়িবুড়ির মেলা। ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের দাসপুর বাস স্টপ থেকে দেড় কিলো মিটার দূরে দাসপুর-সাগরপুর রাস্তার উপর বলিহারপুরে ওই মেলাটা বসে। মেলাটিকে আমজনতা গেঁড়িবুড়ির মেলা হিসেব জানলেও মেলাটির পোশাকি নাম ধর্মরাজের মেলা। এই মেলার একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। মেলাটি পরিচালনা করে ওই গ্রামের পণ্ডিত পরিবার। ওই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, বেশ কয়েক পুরুষ আগে ওই পরিবারের কোনও সদস্যের স্বপ্নাদেশ হয়।
সেই স্বপ্নাদেশে এক দেবী জানান তিনি পাশের শিমুলিয়ার মজুমদার দীঘির জলের মধ্যে রয়েছেন। প্রায় ৪০০ স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরই শিমুলিয়ার দীঘি থেকে তুলে আনেন আঠারোটি ঠাকুরের মূর্তি। তার মধ্যে দেবীদুর্গার মূর্তিটি কালো-কালো গেঁড়ি তথা গুগলি দ্বারা আবৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাই সেই থেকে গেঁড়িবুড়ি নামটাই রয়েছে।
গেঁড়িবুড়িকে পুকুর থেকে উদ্ধার করার পর যে পুজোর সূচনা হয়েছিল সেই সময় থেকে কিন্তু ওখানে কোনও মেলা হত না। ‘ওলে ফুটে বোল’, এলাকার মানুষের দাবি, ওল দিয়ে মানত করলে কথা না বলা বাচ্চার মুখে বোল ফোটে, ভালো হয় চামড়ার নানান রোগ। ওই পরিবারের সদস্যরা বলেন, বিছানায় প্রস্রাব করে তাদের জন্য ধর্মরাজের কাছে মানত করলে সেই বাসনা কানায়-কানায় পূরণ হয়। এই ভাবে মানতকারীরা সুফল পাওয়ার ফলে কয়েক শ বছর আগে থেকেই পণ্ডিত পরিবারের দৈবীমাহাত্ম্যা ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে থাকা মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেন। অনুমান, তারপর হয়তো পুজো দিতে আসা মানুষদের জনসমাগমেই প্রায় ৩০০ বছর আগে শুরু হয় মেলা।
মেলাটিতে মূলত কৃষি কাজ ও মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বেশি বিক্রি হয়। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ চারা গাছ বিক্রির স্টল আসে। পাশাপাশি খাবারের দোকান এবং স্টেশনারি জিনিসপত্রের স্টলও প্রচুর থাকে বলে জানা গিয়েছে। বেচাকেনা ভাল জমে বলে দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতা বিক্রেতারাও আসেন। কিন্তু করোনার জন্য এবার সবই বন্ধ থাকছে।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]।