সৌমেন মিশ্র,রাজনগর:ভোরের আলো ফোটার সাথে নজরে এল শতাধিক গ্রামবাসী কেউ হাতে জাল টেনে কেউ বা খালি হাতেই নদীতে মাছ ধরতে ব্যস্ত। একটু সামনে যেতেই বোঝা গেল সবই চিংড়ি। নদীর জল ছেড়ে চিংড়িগুলো যেন প্রাণ বাঁচাতে ভেসে পাড়ের দিকে উঠে আসছে। প্রায় নিস্তেজ সেই চিংড়িদের মহানন্দে কোঁছড়ে,বালতিতে ধরে রাখছে এলাকাবাসী।
ঘটনা দাসপুর থানার কংসাবতীর তীরবর্তী নাড়াজোল,বালিপোতা,সামাট,হোসেনপুর,যদুপুর,রাজনগরের মত গ্রাম গুলোর। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল এ ঘটনা শুধুমাত্র আজকের নয়। মাসে কমপক্ষে ২/৩ বার নদীতে এমন চিংড়ি মাছ ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটে। যদুপুর গ্রামের তারকনাথ অধিকারী বললেন,সাধারণত ভোর ৪টার পর নদীতে মাছ ভেসে ওঠে। আজও সাড়ে চারটা নাগাদ নদীতে গেলে আমরা দেখি চিংড়ি মাছ ভেসেছে। এমন ভাবে মাছ সবদিন ভেসে ওঠে না। আজ যেমন ভেসেছে আবার এখন সপ্তাহ খানেক আর মাছ ভাসবে না। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেল,কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারাই এই ব্যাপারটা ঘটে। হারাতলা,মগরা বা নাড়াজোল এলাকায় নদীতে বিশেষ ধরনের কিছু কেমিক্যাল প্রয়োগকরে দেয় ওই ব্যবসায়ীরা। তার ঘন্টাখানেকের মধ্যে মূলত চিংড়ি মাছই ভেসেউঠে। তখন তারা একটা নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে জাল ফেলে বেশ ভালো পরিমান মাছ ধরে আড়তে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সেই কেমিক্যাল মিশ্রিত জল নদীর স্রোতে বয়ে চলে। নদীর গতিপথ সামাটের দিকে হওয়ার ফলে সেই বিষক্রিয়ার প্রভাব সামাট,হোসেনপুর,যদুপুর রাজনগর এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। যার ফলে সকাল অবধি এই সব এলাকা চিংড়ি মাছ ভেসে উঠতে দেখা যায়। পরিবেশবিদদের মতে,এইভাবে যথেচ্ছপরিমানে নদীর চিংড়ি মেরে ফেলা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রজাতির চিংড়ির বিলোপ ঘটবে। তাছাড়া এই বিষক্রিয়ায় নদীর জলও দূষিত হচ্ছে। এই জল পরীক্ষা না করে কোনোভাবেই ব্যবহার করা উচিত হবে না। শুধু জল নয়,এই বিষক্রিয়ায় ভেসে ওঠা চিংড়ি মাছ খাদ্য হিসাবে কতটা নিরাপদ সে বিষয়েও সন্দেহ আছে চিকিৎসকদের। বিষয়টি আমরা দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সভাপতি সুনীল ভৌমিকের নজরে আনি। সুনীল বাবু বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।