নিজস্ব সংবাদদাতা: আবার দেব? তৃণমূল আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যের লোক সভাকেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করার পর ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের জন্য চলচ্চিত্র অভিনেতা দেব তথা দীপক অধিকারীকে প্রার্থী করায় অনেকেই যেন বিষণ্ণ!দেব প্রার্থী হওয়ায় ঘাটালের অধিকাংশ মানুষ খুশি নন। কারণ দেব যদি আবার প্রার্থী হয়ে ভোটে জিতে ঘাটালের লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন তবে আবার পাঁচ বছর এই অতি ব্যস্ত মানুষটির দেখা পাওয়া দুষ্কর হবে বলে মনে করছেন ঘাটালের আপামর জনতা। যদিও বিগতদিনে ঘাটালে যত এম.পি হয়েছেন তাঁদের তুলনায় দেবকে ঘাটালে অনেক বেশি দেখা গিয়েছে। এলাকায় আসার দিক দিয়ে তিনি পূর্বসূরীদের থেকে অনেক এগিয়ে শুধু তাই নয়, ঘাটালের বন্যা কবলিত মানুষের পাশে যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব ছুটে এসেছিলেন, সে কথা বানভাসী ঘাটালবাসী ভোলার কথা নয়।
তবুও ঘাটালের জনগণের চাহিদা দিনদিন যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে পরবর্তীকালে দেব জনগণের সেই চাহিদা পূরণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জনগণের দাবি, ঘাটালের এম.পি যেই হোন, তিনি যেন ঘাটালের সবকিছুতেই না হলেও বড় বড় অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়। সার্বিক সমস্যায় তাঁকে ডাকলেই যেন সহজে দেখা পাওয়া যায়। শুভেন্দু অধিকারি বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো যদি একটা এম পি অফিস বানিয়ে মাসে একটি নিদিষ্টি দিনে সাংসদের দেখা পাওয়ার ব্যবস্থা থাকত তাহলেও সাধারণ মানুষের দেবের প্রার্থী হওয়াকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকত না। তৃণমূলের ওই সাংসদের কোনও অফিসই নেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র এলাকায়। আর সাধারণ মানুষ সাংসদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন, এমন ঘটনা বিগত পাঁচ বছরে কারোর ঘটেনি। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা সাংবাদিকরাও অধিকাংশ সময়ে তাঁকে ফোনে পাননি। সেই অভিজ্ঞতার আর পুরনাবৃত্তি হোক সেটা অনেকেই চাইছেন না।
অন্যদিকে পার্লামেন্টে দেবের উপস্থিতি বলার মত নয়। তিনি যে ঘাটালের জন্য পার্লামেন্টে গলা ফাটাবেন, তার ফুরসৎ তিনি পান না। কারণ তিনি অতি ব্যস্ত একজন অভিনেতা। অভিনয়ই তাঁর প্রধান পেশা। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই অভিনয়কেই তিনি প্রাধান্য দেবেন। এবং সেটা করতে গিয়ে দেবের পক্ষে সক্রিয় রাজনীতি করা হয়ে ওঠে না। ফলে রাজনীতি প্রিয় ঘাটালের মানুষের হৃদয় থেকে তিনি অনেকটাই দূরে থেকে গিয়েছেন। তাই বলিউডের এই হার্টথ্রব অভিনেতা এবার ঘাটালবাসীকে কতটা খুশি করতে পারবেন সে বিষয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
যদিও তৃণমূল নেতারা দেব ফের প্রার্থী হওয়ায় সরাসরি কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি দিলীপকুমার মাজি বলেন, আমরা তৃণমূলের সৈনিক। যেই প্রার্থী হোন না কেন তাঁকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ঘাটাল লোকসভায় মোট ভোট পড়েছিল ১৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯০৯টি ভোট। তার মধ্যে দীপক অধিকারী ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৯৬টি ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইয়ের সন্তোষ রানাকে দু লক্ষ ৬০ হাজার ৮৯১ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন। সন্তোষবাবু ভোট পেয়েছিলেন চার লক্ষ ২৪ হাজার ৮০৫টি। মোট ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিলেন কংগ্রেসের মানসরঞ্জন ভুঁইঞা। তিনি ভোট পেয়েছিলেন এক লক্ষ ২২ হাজার ৯২৮টি। সবচাইতে কম ভোট পেয়েছিলেন পিডিএসের গঙ্গারাম শাসমল। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল এক হাজার ৭৫৮।