তাঁর জন্মস্থান ঘাটাল মহকুমার বীরসিংহে । তাঁরলেখা দিয়ে আমাদের অক্ষর পরিচয় শুরু। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর মূর্তি ভাঙা হ’ল। মাটিতে খান খান হয়ে পড়ে আছে তাঁর প্রস্তর মূর্তি। বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী পালনের তোড়জোড় চলছে রাজ্যজুড়ে। তারই মাঝে এই ঘটনা। বীরসিংহ গ্রামে গিয়ে দেখা গেল যে সেখানকার মানুষজন ক্ষোভে ফুঁসছেন। বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্ম ভিটায় বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ঘটনা খুবই লজ্জাজনক। ঘটনাটা যারাই ঘটাক না কেন তারা বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। এলাকার বাসিন্দা তথা ঔষধ ব্যবসায়ী গৌতম বক্সি বলেন, আমরা সর্বস্তরের মানুষ দল মত নির্বিশেষে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বীরসিংহ গ্রামের বাসিন্দা এবং ঘাটাল কলেজের অধ্যাপক প্রসাদ ঘোষ বলেন যে, এই ঘটনার নিন্দা করার ভাষা নেই। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এমন যাতে আর না ঘটে দেখতে হবে। কোলাঘাট কোলে ইউনিয়ন হাইস্কুলের শিক্ষিকা এবং গ্রামের বাসিন্দা নবনীতা ঘোষ বলেন, যারা মূর্তি ভেঙেছে তারা একটু হলেও পড়াশোনা জানে। তারা কি অন্ধ? বীরসিংহের বাসিন্দা অনিকেত চক্রবর্তী বলেন, এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। এই ঘটনা ভাবতেও পারছি না। ওই গ্রামের কৃষক তারক রায় বলেন, যে যতটুকু লেখাপড়া শিখেছি তা বিদ্যাসাগরের জন্য। এই ঘটনায় খুব খারাপ লাগছে। ঘাটালের বুদ্ধিজীবী মহল তীব্র নিন্দা করেছেন এই ঘটনার। বিদ্যাসাগর সমিতির ঘাটাল শাখা সম্পাদক তাপস পোড়েল, সহ সভাপতি গৌরীশঙ্কর বাগ তীব্র নিন্দা করে বলেছেন সংস্কৃতি কতটা নিচে নেমেছে ভাবা যায় না। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক প্রশান্ত সামন্ত বলেন, ফ্যাসিস্ট কাজের মত এই ঘটনার নিন্দা করার মত ভাষা পাচ্ছি না। যারা এর সাথে যুক্ত তাদের চিহ্নিত করা উচিত। অধ্যাপক লক্ষ্মণ কর্মকার বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মূলে কুঠারাঘাত করা। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ভবিষ্যতে এর মাশুল দিতে হবে। শিক্ষক দুলাল কর বলেন, এই ঘটনা লজ্জাজনক। মনীষীর মূর্তি ভাঙা সংস্কৃতিকে মেনে নেওয়া যায় না। যেই করুক এর তীব্র প্রতিবাদ প্রয়োজন। দন্দীপুর মন্মথ হাজরা বিদ্যামন্দির উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শৈবাল ঘোষ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোথাও এই ধরনের ঘটনা আমাদের লজ্জার বিষয় এর তীব্র প্রতিবাদ প্রয়োজন। বিশিষ্ট আইনজীবী দেবপ্রসাদ পাঠক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর চোখা বক্তব্যে বলেন, সাধারণ মানুষের মাথায় উঠে নাচছে রাজনৈতিক দলগুলি গুণ্ডামি করছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে আর সাধারণ মানুষ মূক হয়ে থাকবে প্রতিবাদ করবে না, এ সব রাজনৈতিক দলকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। শৈবাল ঘোষ জানান আজ ১৫মে বিকেলে এনিয়ে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা হবে। একই দিনে বীরসিংহ গ্রামের মানুষজন প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করবে। অন্যদিকে আজ ১৫ মে বিকেলে ঘাটালের কুশপাতা বাসস্টপ থেকে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত একটি অরাজনৈতিক প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছেন কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনকারী তথা যুক্তিবাদী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।