স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন: ড.পুলক রায়

ড. পুলক রায়: আজ ১৫ ই আগস্ট। স্বাধীনতা দিবস।
প্রতিবছর আজকের দিনটি এলে শ্রদ্ধায়মাথা নুয়ে আসে সেই বীর বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে।
আজ সর্বত্র ই উড়বে স্বাধীনতা র পতাকা পতপত করে। পৃথিবীর এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও ভারতবর্ষের মানুষ এই বিশেষ দিনটি পালন করবে শ্রদ্ধা জানিয়ে। পতাকা তলে দাঁড়িয়ে গদগদ কন্ঠে আমরা উচ্চারণ করবো সেই বীর বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের কথা যারা একদিন ” জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্ত ভাবনাহীন” করে প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছিল। আমরা তাদের ত্যাগের কথা বলবো আত্মবলিদানের ইতিহাস তুলে ধরবো।হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কথা বলবো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা পাশে থাকার কথা বলবো। কিন্তু সত্যি আমরা আজও সবাই সবাইকে কি ভালোবাসতে পেরেছি!
আমার মনে হয় এই স্বাধীনতা দিবস, কয়েকদিন আগে রাখী বন্ধন উৎসব বা আরও এ ধরণের উৎসব এগুলো আমার মনে হয় সাজানো গোছানো এক একটি সুগন্ধি বাক্সের মতো আমাদের কাছে।যখন যে দিনটি আসে বাক্স থেকে খানিকটা সুগন্ধি ছড়িয়ে দিই,সদাশয়ী হয়ে বিলিয়ে দিই সেই গন্ধ।হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মন্ত্র আওড়ে দিই। আসলে আমার মনে হয় আমরা নিজেকেই সেভাবে ভালোবেসে উঠতে পারিনি আজও।না হলে এতো সরকারী প্রচার সত্বেও এই সংকটময় কালে আমরা বেরিয়ে পড়ছি যত্র তত্র।মুখে মাস্ক নেই। থাকলেও তা ঝুলছে থুতনীর নীচে। আমরা বুঝতে ই পারছি না শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনছি না পাশাপাশি আরো সবাইকে এই বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
কোভিড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারি।
আজ স্বাধীনতা দিবসের দিনে সে সব উদাহরণ টানছি না। শুধু ‘ হাতে হাত কাঁধে কাঁধ’ কথাটা উচ্চারণ করলে বুকটা ব্যথায় টনটন করে ওঠে।
যেটা বলতে যাচ্ছিলাম। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আমাদের দাস পুরের মানুষও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য,প্রভাংশু পাল এঁদের জন্মস্থান যেমন এখানে তেমন ক্ষুদিরামের ও অনেকটা সময় কেটেছে এই দাসপুরে তাঁর দিদি র বাড়ীতে। গুপ্তসমিতিতে যোগদান আর সত্যেন্দ্রনাথ নাথ বসুর সাহচর্য বিপ্লবী দের অর্থের প্রয়োজনে দাসপুরের সিমলা দিঘি পাড়ে ডাক লুন্ঠন এক ঐতিহাসিক ঘটনা।দাসপুরের গোকুলনগরের প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য আর খাঞ্জাপুরের প্রভাংশু পাল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাসকে হত্যা করেছিলেন প্রহরী পরিবৃত ব্যূহ ভেদ করে।প্রভাংশু পালাতে পেরেছিলেন কিন্তু প্রদ্যোৎ ধরা পড়ে গিয়েছিলেন।প্রভাংশুর খবরের জন্য নির্মম অত্যাচার সহ্য করে ও মুখ দিয়ে একটি কথাও বের করতে পারেনি ব্রিটিশ পুলিশ প্রদ্যোতের।প্রদ্যোতের ফাঁসি হয়েছিল।আজ চারপাশে দলাদলি অন্ধ স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কথা মনে করে এই স্বাধীনতা দিবসের দিনে পতাকা তলে দাঁড়িয়ে মনে হয় এতোবড় মহৎপ্রাণ এতো অল্প বয়সে তাঁরা কোথা থেকে অর্জন করেছিলেন!প্রভাংশু পরে বলেছিলেন আমি যে এতদিন ধরে পৃথিবীর জল আলো বাতাস অনুভব আস্বাদন করতে পারছি তা সব ই ঐ প্রদ্যোতের জন্যে।চোখ বাষ্পাকুল হয়ে আসে এই আত্মত্যাগের কথা মনে হলে।
দাসপুরের চেঁচুয়াহাটে দারোগা হত্যা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পুলিশের নির্মম গুলিচালনায় ১৪ জন শহীদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল কংসাবতী র জল। সালটা ১৯৩০ ৬ ই জুন।
স্বাধীনতা দিবসের দিনে সমস্ত বীর সংগ্রামী দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাসপুরের এই মৃত্যুঞ্জয়ীবীরদের উদ্দেশ্যে আমার শতকোটি প্রণাম জানাই।  

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!