মনসারাম কর ও কুমারেশ চানক: একটি পা বিকল, চলার সম্বল দুটি লাঠি। লাঠির উপর ভর করেই ঘাটালের কুঠিকোনারপুরের বাসিন্দা রুনা মণ্ডল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে তিনি বি.এড এর ছাত্রী। ইচ্ছে স্কুল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষিকা হবেন। একান্ত সাক্ষাৎকারে রুনা জানান, পড়াশোনার জীবনে কখনই তিনি নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করেননি। স্কুল, কলেজে তাঁর অন্য সহপাঠীরাও তাঁকে অনেক সাহস জুগিয়েছে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সব সময় মানসিক শক্তি দিয়েছে, হাতে হাত ধরে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের সিঁড়ি চড়িয়েছে। রুনা জানিয়েছেন, তাঁর বাবা রবীন্দ্র মণ্ডল
পেশায় ক্ষুদ্র চাষি, মা-বাবা ছাড়াও পরিবারে রয়েছেন দাদা-বৌদি, কয়েকমাস আগেই দাদার বিয়ে হয়েছে। সংসারের খরচ চালাতে বাবা ও দাদা চাষবাসের ফাঁকে রাস্তার পাশে একটি ঠেলা গাড়িতে করে ডিম-ঘুগনি বিক্রি করেন। বেসরকারি কলেজে বি.এড পড়তে অনেক খরচ, তাই বাবাকে সাহায্য করতে রুনা নিজেও পড়াশোনার ফাঁকে টিউশন পড়ান। টিউশনের টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ মাসের শেষে যেটুকু টাকা পান তা দিয়ে নিজের বই,খাতা,কলম ও গাড়িভাড়া হিসেবে খরচ করেন। সম্প্রতি বি.এড কলেজে
যাওয়া-আসার সময় লাঠির উপর ভর করে যাওয়া-আসার ছবিতে তাঁর সংগ্রামী জীবনের কথা ফুটে উঠেছে জনমানসে।
রুনা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি বরদা চৌকানের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বি.এড পড়ছেন। বাড়ি থেকে দু’টি লাঠির উপর ভর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রথমে কুঠিকোনারপুর বাজারে পৌঁছাতে হয় তাঁকে। তারপর ওই দু’টি লাঠি নিয়েই ট্রেকার বা বাসে করে বরদা চৌকানে আসেন তিনি। বরদা চৌকান থেকে কলেজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিমি রাস্তা পৌঁছানোর জন্য অটো থাকলেও খরচ বাঁচাতে তিনি অধিকাংশ সময় হাঁটা
পথেই কলেজ পৌঁছান। খুব জরুরি না থাকলে অতিরিক্ত খরচ করে টোটোতে ওঠেন না। ঘাটাল কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এডুকেশন বিষয়ে বি.এ পাশ করেছেন। বাড়ি থেকে দৈনন্দিন লাঠি ধরে যাওয়া আসার সমস্যা থাকায় আত্মীয়-পরিজনদের সহযোগিতায় ঘাটালে থেকেই কলেজ জীবন পার করে এডুকেশন বিষয়ে বাঁকুড়া ইউনিভার্সিটি থেকে রেগুলারে এম.এ করেছেন।
প্রতিবন্ধকতা আর দারিদ্রতা ঘরে আটকে রাখতে পারেনি রুনাকে। সব বাধা পেরিয়ে নিজেকে এভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস আর নিষ্ঠা দেখে রুনার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন অনেকেই।