উমাশঙ্কর নিয়োগী: ক্ষণজন্মা পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক অনন্যসাধারণ চরিত্র। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে এখন পর্যন্ত তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। অক্ষয় মনুষ্যত্বের জীবন্ত বিগ্রহ ঈশ্বরচন্দ্র জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানব সেবায় আত্ম নিয়োগ করেছিলেন। কারোর কাছে তিনি করুণাসাগর দয়ারসাগর। কেউ তাঁকে বিদ্যাসাগর বলতে অধিকতর পছন্দ করেন আবার কেউ তাঁকে সর্বোত্তম হিউম্যানিস্ট মনে করেন। বাংলা গদ্য সাহিত্যের যথার্থ শিল্পী এমন অভিমত অনেক পোষণ করেন। আবার কারোর কাছে তিনি গ্রামেগঞ্জে শিক্ষা প্রদীপ জ্বালানোতে বিশেষ করে নারী শিক্ষা প্রসারে প্রবাদপ্রতিম পথিকৃত। আর পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা ও সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগরকে কে না চেনেন!
বিদ্যাসাগরের অতুলনীয় মাতৃভক্তিই বোধকরি স্ত্রী জাতির প্রতি তাঁর এক বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ এবং নারী জাতির দুঃখ বিমোচনের প্রাণপণ প্রয়াসের উৎস মুখ। নারীর উপর ধর্মীয় ও সামাজিক অত্যাচারের মূল কারণ যে নারীর শিক্ষা হীনতা তা মর্মে মর্মে অনুভব করেছিলেন। তাই তিনি সারা জীবন মূলত নারী সমাজের হিতসাধনে উৎসর্গ করেছেন। আইন সিদ্ধ ভাবে বিধবা বিবাহ প্রচলন,স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার, বাল্য বিবাহ রোধে তিনি শ্রম দিয়েছেন, অকাতরে প্রয়োজনে ঋণ করে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন। যে বিদ্যাসাগরের নারী জাতির প্রতি এত শ্রদ্ধাবোধ তাঁর দাম্পত্য জীবন কেমন ছিল?
জগৎ বিখ্যাত বহু মানুষের স্ববিরোধিতা একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রূপে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের স্ত্রীরা এইসব বড়ো মাপের মানুষের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারেননি। শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদা, পেরি কুরী ও মাদাম কুরী এঁরা সহধর্মিণী। কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগম, শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র, কিশোর কুমার ও রুমা গুহঠাকুরতা, বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা দেবী প্রমুখের দাম্পত্যজীবন সুখের নয়। রবীন্দ্রনাথ কতগুলো কবিতা মৃণালিনীকে শুনিয়ে তৃপ্তি পেয়েছেন সে খবর আমরা জানি না। বিদ্যাসাগর মশাই তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে কর্ম ক্ষেত্রে কতদূর প্রাণিত হয়েছিলেন? স্ত্রীকে নিজের যোগ্য সহধর্মিণী করে গড়ে নিতে পেরেছিলেন? তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল? স্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন?
আসছি এসব প্রসঙ্গে। আগে তাঁর জীবনের কিছু ঘটনা জেনে নেওয়া যাক। বীরসিংহ গ্রাম থেকে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ১ জুন সংস্কৃত কলেজের ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৮৩৩ পর্যন্ত এই শ্রেণিতে পড়তেন। ১৮৩১ সালে এগারো বছর বয়সে তাঁর উপনয়ন হয়। যখন তাঁর তেরো বছর বয়স তখন থেকেই ঠাকুরদাস পুত্রের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। ঈশ্বরচন্দ্র সাহিত্য শ্রেণিতে পড়েছেন ১৮৩৩ থেকে ১৮৩৫ পর্যন্ত। ১৮৩৩ সালে জোর কদমে পাত্রী দেখা চলছে। বিদ্যাসাগরের মৃদু আপত্তি ঠাকুরদাসের দৃঢ় ইচ্ছের স্রোতে খড়কুটোর মতো ভেসে গেল।
খোঁজ পাওয়া গেল রামজীবনপুরে আনন্দচন্দ্র অধিকারীর একটি বিবাহ যোগ্য কন্যা আছে। পাত্রী দেখতে গেলেন ঠাকুরদাস। পছন্দও হল। আনন্দচন্দ্রের একটি যাত্রার দল ছিল। বাড়িতে মা ঠাকুমার কাছে যাত্রাদলের অধিকারীর মেয়েকে বিয়ে করতে আপত্তি জানান ঈশ্বরচন্দ্র। ঠাকুরদাস আমল দিলেন না। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মনস্থ করে আনন্দচন্দ্র বীরসিংহে এলেন পাকা কথা বলতে। এসে ঠাকুরদাসের ছোট্ট মাটির ঘর খড়ের চাল, বেকার ছেলে, গরিব বাপ, বড় সংসার এসব দেখে, ‘পরে আলোচনা করে কথা বলব’ বলে চলে গেলেন আর এলেন না। এরপর তাঁর সম্বন্ধ হয়েছিল জগন্নাথপুরের চৌধুরী বাড়িতে। চৌধুরীরা ঈশ্বরচন্দ্রকে তাদের বাড়ির উপযুক্ত জামাই হিসেবে বিবেচনা করলেন না। ঠাকুরদাস হতাশ হলেন। ঘটকী রামমণি ঠাকরুণকে লাগানো হল। ঘটকী খবর নিয়ে এল ক্ষীরপাইয়ের শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের বিবাহ যোগ্য মেয়ের। ঈশ্বরচন্দ্রের ঠাকুমা দুর্গাদেবীও রামমণি ঠাকরুণ মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ঈশ্বরচন্দ্রের সঙ্গে ভট্টাচার্য মশাইয়ের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব রাখলেন। শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নের কথায়, ‘ভট্টাচার্য মহাশয় ক্ষীরপাই গ্রামের মধ্যে ক্ষমতায় মান্যে ও সদ্ব্যয়ে সর্ব প্রধান লোক ছিলেন।’ ঠাকুরদাসের অবস্থা শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের অজানা ছিল না। জামাই হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্রকে তাঁরও খুব একটা পছন্দ ছিল না। কেবল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্বান বলে ভট্টাচার্য মশাই পারস্পরিক কথাবার্তার পর বিয়ের দিন স্থির করলেন। তাঁর মেয়ে দিনময়ী দেখতে বেশ সুশ্রী ছিলেন। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের কোনও এক মাসে ঈশ্বরচন্দ্রের বিয়ে হয়ে গেল। ঈশ্বরচন্দ্রের বয়স তখন চোদ্দ আর দিনময়ীর আট বছর কয়েক মাস।
দৃঢ়চেতা শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্য তেজস্বী, দান ইত্যাদি সৎকর্মে উৎসাহী, অসীম সাহসী, বলশালী ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন। এই গুণগুলো তাঁর কন্যার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল। দিনময়ী নাতবৌ হিসেবে দুর্গাদেবীর কাছে ও পুত্রবধূ হিসেবে ভগবতীদেবীর কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের দাম্পত্যজীবন কি সুখের ছিল?
১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র ও দিনময়ীর প্রথম সন্তান নারায়ণচন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেন। বিবাহের ১৬ বছর পরে সন্তান। দিনময়ী বন্ধ্যা মনে করে বিদ্যাসাগরকে দ্বিতীয় স্ত্রী আনার পরামর্শ পরিবার থেকে দেওয়া হলেও তিনি তা মেনে নেননি। দিনময়ীর প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার না থাকলে এমনটা হত না। তাছাড়া তিনি বহুবিবাহ বিদ্বেষী ছিলেন। বীরসিংহ গ্রামে নারায়ণচন্দ্রের অন্নপ্রাশন খুব ধুমধাম সহকারে হয়েছিল। এরপর বিদ্যাসাগর খুব ধনশালী— এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৫২ সালে বাড়িতে ডাকাত পড়ে। সদর দরজা ভাঙ্গার সময় বাড়ির সবাই খিড়কি দরজা দিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। বিদ্যাসাগর পুত্রকে নিয়ে দিনময়ীকেও খিড়কি দরজা দিয়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু দিনময়ী বিদ্যাসাগরকে একা ফেলে রেখে যাননি। দিনময়ীর কাছে পুত্র ও নিজের জীবন অপেক্ষা স্বামীর জীবন মূল্যবান মনে হয়েছিল।
বিদ্যাসাগর ও দিনময়ীর সন্তান সংখ্যা পাঁচ। ক্রমানুসারে এক ছেলে ও চার মেয়ের নাম নারায়ণচন্দ্র, হেমলতা, কুমুদিনী, বিনোদিনী ও শরৎকুমারী। হেমলতার সঙ্গে গোপাল সমাজপতির, কুমুদিনীর সঙ্গে অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের, বিনোদিনীর সঙ্গে সূর্যকুমার অধিকারীর আর শরৎকুমারীর সাথে কার্তিকচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। সামাজিক রীতি মেনে এদের বিয়ে হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দিনময়ীর কোনও অভিযোগ ছিল না। মাঝে মধ্যে দিনময়ী কলকাতায় এসে কিছু দিন থেকে যেতেন। জাতপাত নির্বিশেষে সকলের প্রতি তাঁর স্নেহ ভালোবাসা ছিল।
উদার স্নেহময়ী সমাজিক গৃহকর্মে পারদর্শী পতিগতপ্রাণ দিনময়ীর বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে পুত্র নারায়ণচন্দ্রকে কেন্দ্র করে। বিবাহিত জীবনের ষোল বছর পরে জন্মানো প্রথম সন্তানের প্রতি স্নেহান্ধ ছিলেন তিনি। নিষেধ করলেও পুত্রের অন্যায় কাজে সহায়তা করতেন। বিদ্যাসাগর মশাই এটা মেনে নিতে পারেননি। বিদ্যাসাগরের পারিবারিক জীবন ছিল দুঃখে ভরা। স্ত্রী পুত্র ভাই আত্মীয় সকলের কাছ থেকে তিনি আঘাত পেয়েছেন। তাঁর গ্রামের লোকেরাও তাঁকে আঘাত করতে কম করেনি। ১২৭৬ সালের ১২ অগ্রহায়ণ তিনি তিনটি চিঠি লিখেছেন। একটি মা ভগবতী দেবীকে অন্যটি দিনময়ীকে এবং অপরটি গ্রামের মানুষ গদাধর পালকে। ভগবতীদেবীকে জানিয়েছেন, ‘ক্ষণকালের জন্যও সাংসারিক কোনও বিষয়ে লিপ্ত থাকিতে বা কাহারও কোনও সংস্রব রাখিতে ইচ্ছা নাই।’ দিনময়ীকে লিখেছেন, ‘আমার সাংসারিক সুখ ভোগের বাসনা পূর্ণ হইয়াছে। … এক্ষণে তোমার নিকটে এজন্মের মত বিদায় লইতেছি এবং বিনয় বাক্যে প্রার্থনা করিতেছি যদি কখনও কোন দোষ বা অসন্তোষের কার্য করিয়া থাকি দয়া করিয়া আমাকে ক্ষমা করিবে।’ গদাধর পালকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘নানা কারণ বশতঃ স্থির করিয়াছি আমি আর বীরসিংহে যাইব না।’
আচ্ছা, দিনময়ী কি এই চিঠি পড়ার পর স্বামীর অনভিপ্রেত কাজ থেকে নিজেকে বিরত করেছিলেন? গদাধর পালকে লেখা চিঠির খবর তিনি শোনেননি? কেন বিদ্যাসাগর সাংসারিক জীবনের প্রতি বীতস্পৃহ সে খবর জানতে চেয়েছিলেন? প্রবল জেদে দিনময়ী ছেলের দুষ্কর্মে সবরকম সাহায্য করতেন। প্রয়োজনে নিজের গয়না বন্ধক দিয়ে পুত্রকে অর্থের জোগান দিয়েছেন। এসব খবর বিদ্যাসাগরের অজানা ছিল না। ১২৭৬ সালের পর তিনি স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কোনও চিঠি লেখেননি। দিনময়ীও না। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে চিঠি লেখালেখি বন্ধ হয়ে গেল। ১২৭৬ সালের পর দীর্ঘ ১২ বছর বেঁচে ছিলেন দিনময়ী। বাক্যালাপও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দিনময়ী মেয়েদের মারফত যা কিছু জানিয়েছেন। বীরসিংহে বিদ্যাসাগর যাননি। ১২৮২ সালে উইল করলেন বিদ্যাসাগর। এর পর দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন কিন্তু উইলের কোনও রকম পরিবর্তন করেননি। দিনময়ীর জন্য মাসিক ৩০ টাকা বরাদ্দ করা ছিল উইলে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই মাসোহারা সর্বোচ্চ ছিল। পুত্র নারায়ণচন্দ্র সম্পর্কে উইলে তিনি লিখেছেন,‘আমার পুত্র বলিয়া পরিচিত শ্রীযুত নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যয় যারপর নাই যথেচ্ছাচারী ও কুপথগামী।’ এই পুত্রই বিদ্যাসাগর ও দিনময়ীর দাম্পত্যজীবনকে মরুভূমিতে পরিণত করেছিল।
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি দিনময়ী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর রক্তাতিসার হয়েছিল। দেশের চিকিৎসায় রোগ তো সারলোই না পরন্তু বেড়ে চলল। শেষ পর্যন্ত কলকাতায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন বিদ্যাসাগর। এব্যাপারে তাঁর অর্থ ব্যয়ের কার্পণ্য ছিল না। কলকাতার ডাক্তারবাবুরাও কিছু করতে পারলেন না। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও দিনময়ী পুত্রের চিন্তায় ব্যাপৃত ছিলেন। যে পুত্রকে সারা জীবন বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে সর্বদা দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন সেই পুত্রকে তাঁর পিতার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে মরতে চেয়েছেন। হেমলতাকে দিয়ে শেষ বারের মতো কিছু বলার জন্য স্বামীকে ডেকে এনেও কিছু বলতে পারেননি। কেবল অশ্রু বিসর্জন করেছেন আর কপালে করাঘাত করেছেন। কৃতকর্মের অনুশোচনা নয়, ক্ষমা প্রার্থনাও নয়। বিদ্যাসাগর স্ত্রীর মৃত্যুশয্যার পাশে দাঁড়িয়ে বলে ছিলেন, ‘তাই হবে; তার জন্য ভাবতে হবে না।’
দিনময়ীর জীবনাবসান হল ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগস্ট রাত্রি নটার সময়। শাস্ত্র মেনে কলকাতাতে দিনময়ীর শ্রাদ্ধশান্তি সম্পন্ন হয়। শ্রাদ্ধ করেন নারায়ণচন্দ্র। বীরসিংহেও ব্রাহ্মণগণ যথারীতি আপ্যায়িত হন। দিনময়ীর মৃত্যুর পর বিদ্যাসাগরের মানসিক অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন ক্ষুদিরাম বসু,‘শেষ জীবনে গার্হস্থ্য ব্যাপারে মতের অমিল হওয়ায় স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতেন। কিন্তু মৃত্যুকালীন অসুখের সময় যথেষ্ট শুশ্রূষা করেন ও তাঁর মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছিলেন। আমরা গিয়ে দেখে বুঝলাম তাঁর মনে বেশ আঘাত লেগেছে।’
কর্মক্ষেত্রে ব্যবসায়ে সমাজে প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন বিদ্যাসাগর। পারিবারিক ক্ষেত্রেও তাঁর এই লড়াই ছিল একারই। দিনময়ী তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্বের জন্য বিদ্যাসাগরকে কোনও রকম মানসিক সহায়তা করেননি। বরং জীবনভর তাঁর মতের বিরুদ্ধে কাজ করে, নিজের জেদে অটল থেকে মানসিক যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলেছেন। এর ফলে দিনময়ীর সঙ্গ তাঁর কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল।
পত্নীর মৃত্যুর পর বিদ্যাসাগরের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই এই মহামানবের মৃত্যু হয়। শেষ বয়সে ভীষ্ম পিতামহ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পরিবার আত্মীয় স্বজনের চাহিদার অবজ্ঞার অপমানের শর বিদ্ধ হয়েছেন। শরশয্যায় থেকে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করেছেন তাঁর প্রিয় জন্মস্থান বীরসিংহ আর সমরাঙ্গন কলকাতা থেকে বহু দূরে কার্মাটারে। তাঁর মৃত্যুর এক মাস পরে বঙ্গবাসী শোক সভার আয়োজন করে তাও কেবল তাঁর একার জন্য নয় সঙ্গে রাজেন্দ্রলাল মিত্রেরও শোকসভা পালন হয়েছিল। তাঁর শিক্ষা প্রসারের ভূমিকা মনে রেখে বাঙালি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মুখে স্থাপিত বিদ্যাসাগরের মর্মর মূর্তির মুণ্ডচ্ছেদন করেছে দু- দুবার। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত কলেজ অভ্যন্তরের মর্মর মূর্তি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আলকাতরা দিয়ে কালিমালিপ্ত করেছে। বাজারে বড়ো মানুষের কেচ্ছা কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাস বেস্টসেলার হয়। বিদ্যাসাগরের দাম্পত্যজীবন অবলম্বনে কোনও উপন্যাস লেখা হবে হয়তো। বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ পরেও তাঁকে ছোট করার প্রয়াস অব্যাহত আছে। আসলে তিনি এত বড়ো আর আমরা এতো ছোট যে তাঁর বিশালত্ব আমাদের অনেকের কাছেই অসহনীয়। [•মোবাইল নম্বরগুলিতে কল করে উমশঙ্করবাবুকে প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।মো: ৯৪৭৪৪৪৯০৯০/৮১১৬০৬৮৩২২।]
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]।