দেবাশিস কুইল্যা: মন খারাপ! প্রাত্যহিক জীবনের ছন্দ পতন! ভাল লাগছে না? ভাল না লাগার বিষয়ই বটে। এ রকমভাবে লক্ষ্মণগণ্ডির ভেতর সময় কাটাত চায় না।
উপায়? হ্যাঁ উপায় আছে। সমাধানের চাবি আপনার, আমার সবার হাতে।
কাজে বেরোনোর তাড়া নেই। তবুও সাত সকালেই বিছানা ছাড়ুন। লেগে যান ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজে। এবার একটু প্রাণায়াম অভ্যাস করুন। অন্তত চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনি অনেকটাই তরতাজা হয়েছেন।
হাল্কা খাবার খান, আপনার কোনও কাজ নেই তো? অনেকেই বলবেন নেই। ভুল বলেছেন। আপনার বাড়ির দাওয়ায় বা ছাদে একটু যান। লক্ষ্য করুন আপনাদের বাতিল হওয়া জিনিসপত্র কেমন যেন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। গোছানোর উদ্যোগ নিন। খুঁজে পাবেন এমন কিছু যা ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগতে পারে। এরকম ভাবেই এক–একদিন বারান্দা, দুয়ার, জানলা দরজার কাছে যান। তারাই আপনাকে কাজ জুগিয়ে দেবে। অথবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দিকে চোখ বুলিয়ে নিন বা গোছগাছ করুন কোনও কোনও সময়। এরকমভাবে কত সকাল দুপুরের দিকে এগিয়ে গেল বুঝতেই পারবেন না।
খাওয়া দাওয়া সারুন। একটু বিশ্রাম নিন। ঘুমোবেন না কিন্তু। আপনার পছন্দের শিল্পীর বা ছবির গান শুনতে শুনতে বিকেলের দিকে এগিয়ে যান।
এই সময় ভাববেন এখন আর কী করি। না করার কিছু নেই। আকাশ দেখুন। আকাশ। সেই আকাশ দেখা হোক আপনার পছন্দের পুস্তকের পৃষ্ঠায়, বা আপনার জীবনের না করা কাজের বিবরণ ছবি এঁকে দেবে আপনারই ভাবনায় ডায়েরির পাতায় অথবা খাতায় হাতের কলমের আঁচড়ে। অথবা ভবিষ্যতের জন্য কিছু সৃষ্টি করতে অন্তত চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন আপনি বাইরে বেরিয়ে যেতে পারছেন না। সামাজিক দূরত্বের সাথে সাথে মানসিক দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। মন কেমনের ভাবনা। কুছ পরোয়া নেহি। খোঁজ খবর নিতে নেমে পড়ুন আত্মীয়–স্বজন, বন্ধু–পরিচিতদের। দেখবেন কত সহজ উপায়ে মনের গ্লানি ঘুচে যাচ্ছে। যারা এতদিন খোঁজ নিত না। এই সময়ের মধ্যেই লক্ষ্য করবেন তারাও কত কাছের জন হয়ে উঠেছে। বাড়ির কারও কারও সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব যদি থেকেও থাকে, এই সময়ই তা ঘুচিয়ে নিন। এটাই উপযুক্ত সময়। খোশমেজাজে গল্প করুন বাড়ির প্রত্যেকের সাথে। হ্যাঁ, এই সময় আর একটা কাজ আপনাকে করতে হবে। খুব মন দিয়ে বাড়ির ছোট–বড় সবার কথা গুরুত্ব সহকারে শুনতে চেষ্টা করে যান। আপনি নিজেই খেয়াল করতে পারবেন মনে মনে আপনি কত তরতাজা হয়েছেন।
রাত নটা থেকে দশটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় যান। পরের দিনের পরিকল্পনা করে একদম নয়। কেননা আপনার প্রতিদিনের কাজের এখন সুর–লয়–তাল সব কেটে গেছে। নতুন করে শুরু করবেন পরের দিন সূর্য উঠার আগেই বিছানা ছেড়ে। আমাদের ভারতীয়দের সনাতন আচার এটাই শিক্ষা দেওয়ার জন্য বলে।
এগুলোই আপনার মনের ভিতর একটা ভাল অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে। তখন মন খারাপ অনেক অনেক দূরে…।