সৌমেন মিশ্র,স্থানীয় সংবাদ,ঘাটাল: নিজেকে ভগবান দাবি করে বট গাছের টঙে মহিলা, গাছ থেকে নামাতে ছুটল প্রশাসন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ওই মহিলাকে নামাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ঘাটাল ফায়ার ব্রিগেডের। দাসপুর থানার আনন্দগড়ে জামাইবাবুর বাড়িতে পুজো করছিলেন আরতী সিং। তারপর হঠাতই নিজেকে ‘ভগবান’ হিসেবে দাবি করে পাশেরই এক বট গাছের মগ ডালে চড়ে বসেছেন ওই মহিলা।
আরতীদেবীর স্বামীর বাড়ি কেশাপাঠ এলাকায়। স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন তিনি। বছর পঁয়তাল্লিশ বয়সী এই মহিলা দীর্ঘদিন ধরেই আনন্দগড়ে দিদি গীতা সিং এর কাছে থাকেন। আজ ৭ জুলাই সকাল ৯টা নাগাদ এই কান্ড ঘটনা তিনি। স্থানীয়রা জানান, তাঁকে গাছে উঠতে কেউই দেখেননি। কিন্তু গাছে উঠে চিৎকার করতেই বিষয়টি নজরে আসে সবার। প্রথমে দিদি জামাইবাবু সহ ওই এলাকার বাসিন্দারা গাছ থেকে নেমে আসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু অনুরোধ কানে যায়নি আরতীদেবীর। ফলে বাধ্য হয়েই পুলিসকে খবর দেওয়া হয়।
এদিকে ওই মহিলাকে দেখার জন্য পাশাপাশি গ্রাম থেকে শয়ে শয়ে মানুষ ভিড় করেন। দাসপুর থানার পক্ষে ও সি অমিত মুখোপাধ্যায় খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘাটালের দমকলে জানান। এদিকে গাছের নিচেই বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন। অমিতবাবু তৎপরতার সাথে বিদ্যুৎ দপ্তরে জানিয়ে ওই এলাকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করান। ততক্ষণে ওই মহিলা গাছের টঙে উঠে বসে চিৎকার শুরু করছেন। হাত ছেড়ে অঙ্গভঙ্গি করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘাটাল মহকুমার অগ্নি ও জরুরি পরিসেবা কেন্দ্রের সাব অফিসার সৌরভ মণ্ডল দমকলের একটি ইঞ্জিন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁর কর্মী ও অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে ওই মহিলাকে গাছ থেকে নামানোর চেষ্টা শুরু করেন।
মহিলা কোনোভাবেই গাছ থেকে নামতে রাজি নন। পরিবার জানায় তিনি মানসিকভাবেও কিছুটা ভারসাম্য হীন। অনেক কষ্টে জীবন বাজি রেখে অফিসাররা মহিলার কাছে পৌঁছালেও মহিলা নিজেকে দেবী মনসা বলে সাপের ফনার ন্যায় হাত পাকিয়ে গাছের মধ্যেই অফিসারদের আঘাত করতে থাকেন। কিন্তু সৌরভবাবুর নেতৃত্বে অফিসাররা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আঘাতের পর আঘাত খেয়ে মহিলার সাথে ভাব জমাতে থাকেন এবং তারই ফাঁকে দক্ষতার সাথে মহিলাকে দড়ির মধ্যে আবদ্ধ করতে থাকেন।
এভাবে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে ওই কাজ। তার পর অতি যত্নে মহিলাকে গাছ থেকে একেবারে অক্ষত অবস্থায় নামাতে সক্ষম হন সৌরভবাবু ও তাঁর টিম,ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা। মহিলাকে নামিয়ে তাঁকে দাসপুর পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা অফিসারের হাতে তুলে দেন। অফিসার ওই মহিলার পরিবারকে নির্দেশ দেন এর পর থেকে অর্চনা দেবীকে তাঁরা যেন চোখে চোখে রাখেন এবং সরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করান। সব মিলিয়ে আজকের এই ঘটনায় প্রশাসনের সমস্ত দপ্তরের অফিসারদের তৎপরতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।