কাজলকান্তি কর্মকার https://linktr.ee/Kajalkanti: এবারের উচ্চমাধ্যমিকে পাস করতে না পারা ছাত্রছাত্রীরা গতকাল ১৩ জুন ২০২২ রাজ্যের কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করেছিল। তাদের মূল দাবি, তাদেরকেও পাস করিয়ে দিতে হবে। বিগত দুই বছরের করোনা পরিস্থিতির জন্য বহু ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাই স্কুলগুলি সহযোগিতা না করলে নম্বরের এতো ছড়াছড়ি হত না বলে অধিকাংশ শিক্ষাবিদরাই মনে করেন। তা না হলে এই জেলারই একটি স্কুলের বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রীর নাম মেধা তালিকায় কথা ছিল না। বিভিন্ন সোর্স থেকে জানা গিয়েছে, মেধা তালিকায় এতো জনের নাম ওঠায় ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকারাই এখন অস্বস্তি বোধ করছেন। অস্বস্তি বোধ করার কারণটাও সঙ্গত। তাঁরা জানেন, কোন জাদু বলে হঠাৎ করে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা রাতারাতি এতো মেধাবী হয়ে গিয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার কোনও স্কুল থেকে মেধা তালিকায় নাম ওঠা অবাক হওয়ার কিছু নেই। একটি স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে সমতা দেখে স্কুলের মানটি বোঝা যায়। কোনও একটি স্কুলের বহু ছাত্রছাত্রীর নাম যদি মেধা তালিকায় ওঠে তাহলে ধরেই নিতে হবে স্কুলটি পড়াশোনায় খুব ভালো। কিন্তু ওই স্কুলটির নাম এই নিরিখে এর আগে কখনও শোনা যায়নি। অতীতের রেজাল্টের ধারাবাহিকতাও এতোটা উজ্জ্বল নয়। ওই স্কুলের আগামী দিনের রেজাল্ট বিষয়টি আরও পরিস্কার করে দেবে।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের ঘাটাল মহকুমার অধিকাংশ স্কুলে কী হয়েছিল সেটা অনেকেই জানেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা বই খুলে বোর্ডে লিখে দিয়ে নিজেদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নম্বর বাড়াতে সহযোগিতা করেছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল হোম সেন্টার হওয়ার জন্য। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই ভাবে সহযোগিতা করে ভালো করেছিলেন না কি প্রকারন্তে ছাত্রছাত্রীদের অন্য দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি এত ছাত্রদরদিই হবেন তাহলে করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের ধারাবাহিক পড়াশোনার খোঁজ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভিতটা ঠিক করে দিতে পারতেন। পরীক্ষার সময় টুকলিবাজি করানোর দরকার হত না। ঘাটাল ব্লকের লছিপুর হাইস্কুলের শিক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, এভাবে পরীক্ষার সময় ছাত্রছাত্রী বই খুলে বলে দেওয়াটা আমি সমর্থন করি না বলে আমাকে কথাও শুনতে হয়েছে। শুধু সৌরভবাবু নন, রামকৃষ্ণ মিশনের মতো কিছু আদর্শবাদী স্কুল বই খুলে বলে দেওয়া বা বোর্ডে লিখে দেওয়ার মতো ‘ছাত্রদরদ’ দেখায়নি। গতকাল যে ছাত্রছাত্রীগুলি আন্দোলন করেছিল তাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও হয়তো বিবেকের তাগিদে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা করেননি। এটাও তো বাস্তব সত্য, ওই স্কুলগুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি অন্যান্য স্কুলের মতো একটু ‘সহানুভূতিশীল’ হতেন তাহলে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের এই দশা হত না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পরামর্শ মতো, পরের বছর পরীক্ষায় বসতে হত না। একটা বছর নষ্ট হত না।
আমি বলছি না, যেসমস্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বই খুলে বলে দিয়ে, বোর্ডে রচনা বা বড় প্রশ্নের উত্তর লিখে দিয়ে খারাপ করেছিলেন। কিম্বা যে সমস্ত স্কুল, কড়া নজরদারির মধ্যে পরীক্ষা নিয়েছিল তারা ভালো কাজ করেছিল। ব্রাত্য বসু বলেছেন, পরীক্ষায় সবাই পাশ করে না। এটা একদম সত্য! কিন্তু ঠিকঠাক পরীক্ষা হলে কত শতাংশ ফেল করতেন সেটা ব্রাত্যবাবু নিশ্চয়ই জানতেন। আর এটাও বাস্তব সত্য সমস্ত স্কুলই যদি হোম সেন্টারে নিজেদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা করত তাহলে এবার অন্তত ব্রাত্য বসু বলার সুযোগ পেতেন না, ‘পরীক্ষায় সবাই পাশ করে না…।’
তাই আমার বলার, স্কুলের সিদ্ধান্তের ভুলে এতগুলো ছাত্রছাত্রীর একটা বছর নষ্ট হতে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। একই যাত্রায় পৃথক ফল হবে কেন?
Home এই মুহূর্তে ব্রেকিং গতকাল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়ার আন্দোলন অনেকটাই যুক্তি...