দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ[প্রতিবেদক, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল]: আজ এই সচেতন সমাজে আধুনিকতার মরশুমে এমন এক ধরনের মানুষ বসবাস করেন যাঁরা শারীরিক দিক থেকে কিছুটা দুর্বল। আমিও রয়েছি তাদের মধ্যে। আমার পরিচয় আমি-দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু আমি আমার সকল প্রতিবন্ধকতার প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে বেঁচে থাকতে চাই আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই। আমি অন্যকে অবলম্বন করে বাঁচতে চাই না। আমি চাই সবার সাথে একসাথে মিলেমিশে বাঁচতে। আমাদের মত মানুষকে কেউ দেখলে করুণা
করুক এটা আমি আশা করি না। কিংবা কেউ আমাদের উপর দয়া করুক এটাও আশা করি না। বরং আমরা চাই সকলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিক আমাদের দিকে। আমাদের প্রতিবন্ধীর তকমা দিয়ে কেন সকলে দূরে সরিয়ে রাখবে, এই সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে? আমিও তো এক নাগরিক। আমি কেন আমার প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত হব? শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, ব্যবসা, চাকরি সবেতেই আমরা সমান পারদর্শী। তবু প্রতিবন্ধকতার দোহাই দিয়ে সরকার আজ আমাদের বন্দি রেখেছেন নিছক এক ভাতাতে। আমরা যদি সত্যিই অপারগ
হতাম আমাদের শরীরের একটা অঙ্গ বিকল হওয়া সত্বেও কিভাবে এই সমাজের গোলকধাঁধা আর স্বার্থপর মানুষগুলোর সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি? আজ এই প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় আমাদেরও সমান ভাবে অভিযোজিত হতে হচ্ছে। নইলে যে আমরা পিছিয়ে পড়বো! স্কুল কলেজ থেকে সব জায়গায় সকলে এড়িয়ে যান আমাদের। অনেকেই বিরক্তির চোখে দেখেন আমাদের। এইসব থেকে মুক্তি চাই আমরা। আমরা যে সকলের মতোই সাধারণ, এই সান্ত্বনা টা নিজেদেরকে মেনে নিতে হয়। কিন্তু, সকলে জোর করে আমাদের উপর চাপিয়ে দেন প্রতিবন্ধীর খোলস। যে খোলস সব সময়ই আমাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখে সুস্থ সমাজ থেকে। যার ফলস্বরূপ আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি ক্রমশ। আমরা সাহায্য চাই আপনাদের। আমাদের পাশে থেকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে সকলে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে আপনারা বলুন-তোমরাও কিছু কম নয়! আমরা যারা চোখে দেখি না, কানে শুনিনা, মুখে কথা বলতে পারিনা তারা সবই
প্রকাশ করি অনুভূতির মাধ্যমে।
আমরা শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও মনের জোর হারাইনি। মানসিকভাবে আমরা আরও দৃঢ় হওয়ার চেষ্টা করি। সকলের সাথে মিশে গিয়ে বন্ধু হওয়ারও চেষ্টা করি। কিন্তু, এ সমাজ প্রতিনিয়ত আমাদের আলাদা করে রাখতে চায়। আমাদেরও তো অনুভূতি আছে, উপলব্ধি করার ক্ষমতা আছে! আমরা বুঝতে পারি আমাদের পরিবার আমাদের নিয়ে কত কষ্ট পায়, কত যন্ত্রণা পায়। কিন্তু তাঁরা কোনও দিন আমাদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন না এসমাজের মত। বিভিন্ন সেমিনারে, মিটিঙে সমাজের বিশিষ্টদের গলা ফাটিয়ে বলতে শুনেছি প্রতিবন্ধী বলে কিছু হয় না। আমরা সবাই সমান আমাদের প্রত্যেকের উচিত ওদের পাশে থাকা। মুখে বলা এ কথাগুলো সত্যিই যদি আমাদের ওপর প্রয়োগ হত তা হলে কত সুন্দর হতো আমাদের জীবন। আমরাও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম। নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতাম। আমাদের দেখে তাচ্ছিল্য ঘৃণার পরিবর্তে আমরা যদি পেতাম পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব বোধ আর সম্প্রীতির বন্ধন তবে সেইদিন সত্যিই জ্বলে উঠত আমার আপনার সকলের মনের আলো। দূর হতো আমার সমস্ত দৃষ্টিহীনতা। তাই আমাদের মতো মানুষদের পাশে থাকুন।বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করুন। তবেই এ সমাজ থেকে দূর হবে প্রতিবন্ধকতার ক্ষত।আমরা চাই বেঁচে থাকার প্রকৃত স্বাধীনতা।দূর হোক মনের সকল প্রতিবন্ধকতা। •দেবেন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ি দাসপুর থানার সুপা পুড়শুড়ি। মো: ৮১৭০৯৭০১০৯