পাপিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: অন্ধকার গলি থেকে আলোর উত্তরণ। একদা চোলাই মদের ব্যবসা কেন্দ্রে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হল বিদ্যাসাগরের মৃত্যু দিবস। ঘাটালের গোপমহল গ্রামের মালিক পাড়া তথা বিদ্যাসাগর পল্লীতে বিদ্যাসাগরের মৃত্যু দিবস পালন করল ক্ষুদে পড়ুয়ারা। কয়েকমাস আগে এই মালিক পাড়ার নাম বদলে রাখা হয়েছিল বিদ্যাসাগর পল্লী। আজ ২৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার সেই পাড়া থেকেই একদল পড়ুয়া বিদ্যাসাগরের মৃত্যু দিবস স্মরণ করল। ঘাটালের গোপমহল গ্রামের ওই বিদ্যাসাগর পল্লীর বাচ্চারা পড়াশুনা থেকে দূরেই থেকেছে বরাবর। তার কারণ হিসেবে দায়ী ওখানকার পরিবেশ, পরিবারের গাফিলতি, আর্থিক অক্ষমতা। এছাড়াও ওই পাড়ায় একটা সময় রমরমিয়ে তৈরি হত মদ, বসত চোলাই মদ খাওয়ার আসর। পাড়ার মহিলা সমেত বাচ্চারা প্রমীলা বাহিনী তৈরি করে ওই মদের সমস্ত ভাটি ভেঙে পাড়ায় মদ তৈরির কারবার পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় আশপাশে বেশ কয়েকটি গ্রামে তারা একইভাবে হানা দিয়ে সব ভাটিগুলোকে তছনছ করে দিয়েছে। আজও এই সব গ্রামগুলোতে প্রকাশ্যে মদ তৈরি তো দূরে থাক মদ বিক্রি পর্যন্ত হয় না। এইসমস্ত পরিবেশ পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে বাচ্চারা সুস্থ সংস্কৃতির দিকে যে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রকৃষ্ট উদাহণ এই পড়ুয়ারা। মৌসুমী, লাবণী, বিক্রমের মত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা পুরোনো সবকিছুকে পেছনে ফেলে এই ২০২১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল। কয়েক বছর আগেও এই সাফল্য ওই পাড়ার কাছে ছিল কল্পনাতীত। বেশিরভাগ ছেলেরাই প্রাইমারি স্কুল ছাড়ার সাথে সাথেই পড়াশুনা ছেড়ে কাজে চলে যেত। কিন্তু আজ ওই সমস্ত পড়ুয়াদের যে স্কুল ছুট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে এই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেছে এটা ভেবে অবাক ওই পাড়ার অনেক অভিভাবক।
২০১২ সালেই ওই পাড়ার সমস্ত বাচ্চাদের নিয়ে, বিভিন্ন পরিকল্পনা করে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। মাঝে মধ্যেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফিস্ট এমনকি বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান পরিদর্শনের মত সুযোগ ও রাখা হয়েছিল ওই পড়ুয়াদের আনন্দ ও নানান বিষয় জানার উদ্দেশ্যে। এই ধরনের কার্যক্রম চালানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন শুকদেব দোলই, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপেশ মালিক, প্রতাপ মালিক সহ আরো কিছু সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা।
পড়াশুনা চালাবার উদেশ্যে যে পাঠশালা খোলা হয়েছে তার যার নাম দেওয়া হয়েছে বোধোদয়। ওই পাঠশালার পড়ুয়ারা এবং অভিভাবকরা পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব দোলই-এর কাছে দাবী জানিয়েছে যেন বাচ্চাদের পড়াশুনা চালানোর জন্য একটি আলাদা রুম করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং যারা এইবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, পরবর্তীকালে যাতে তাদের দেখে পাড়ার আরও পড়ুয়ারা উদ্বুদ্ধ হয় তার জন্য পরীক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। অবশ্য জয়দেববাবু এই বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তিনি বাচ্চাদের কথা রাখবেন আশ্বাস দিয়েছেন।