তৃপ্তি পাল কর্মকার, সম্পাদক, ‘স্থানীয় সংবাদ’: ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভায় নির্বাচন নির্বিঘ্নে হলেও চেয়ারম্যান নির্বাচন কিন্তু [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]সুষ্ঠুভাবে হবে না মনে হয়। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব সাংগঠনিক জেলা কমিটিকে প্রত্যেক পুরসভার চেয়ারম্যানের জন্য পছন্দের ক্রম অনুযায়ী কয়েকটি করে নাম পাঠাতে বলেছে। সেই নাম বাছাই নিয়েও তৈরি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা ও
মতানৈক্য। প্রত্যেক পুরসভা থেকে বিভিন্ন লবির মাধ্যমে একাধিক নাম উঠে আসায় সমস্যায় পড়েছে দলের সাংগঠনিক জেলা।
রাজ্য নেতৃত্ব চাইছে, ঘাটাল পুরসভা থেকে অজিতরঞ্জন দে’কে চেয়ারম্যান করতে। কারণ ঘাটাল পুরসভার নির্বাচিত ১৭ জন কাউন্সিলারের মধ্যে এক মাত্র অজিতবাবুকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে চেনেন। দীর্ঘ দিন থেকে রাজনীতি করলেও নানা ভাবে বঞ্চিত অজিতবাবু। তাই তাঁকে ‘যোগ্য সম্মান’ দিতে
এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যাও তাঁকে চেয়ার করতে পারেন বলে অনেকই অনুমান করছে। সেজন্য চেয়ারম্যানের দৌড়ে অজিতবাবু অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু পিছিয়ে নেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা দলের মধ্যে ঘাটাল মহকুমায় সবচাইতে কম ভোটে জেতা বিভাসচন্দ্র ঘোষ। যেহেতু তিনি এর আগে দু’বার চেয়ারম্যান ছিলেন তাই তিনিও ওই পদের দাবিদার রয়েছেন। কিছু দিন আগে সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদকপদ থেকে সরাসরি তৃণমূলে যোগ দেওয়া বর্তমানে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলার তুহিনকান্তি বেরাকে অনেকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাইছেন। এত জনের নাম ভেসে আসায় দলের একাংশ ‘সাত ভাগ্নিকে মারার থেকে এক ভাগ্নাকেই মারার নীতেএগোতে চাইছে’। তাঁরা এবার বলছেন, বন্দনা চৌধূরীর পর ঘাটাল পুরসভায় কোনও মহিলা চেয়ারম্যান হননি। তাই এবার মহিলা চেয়ারম্যান করা উচিত। সেজন্য ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সুপ্রভা ঘোষকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রোজেক্ট করতে চাইছেন তাঁরা।
চন্দ্রকোণা পুরসভা এলাকায় ছাত্র নেতা সৌরভ চক্রবর্তীকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাইছেন অনেকে। সৌরভবাবু রাজনৈতিকভাবে এখনও নিষ্কলঙ্ক। শান্ত মেজাজের যুবক। মার্জিত কথা বলেন। রাজ্যের অনেক নেতা মন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভবাবুর ভালো যোগাযোগ। তাই কাজ আদায় করে আনার সম্ভাবনাও থাকবে। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে অনেকেই দলের শহর সভাপতি প্রদীপ সাঁতরাকেও চাইছেন। চন্দ্রকোণা পুরসভায় এত ভালো ফল করার পেছনে নাকি প্রদীপবাবুর অন্যতম অবদান রয়েছে। তাই একটি লবি তাঁকেও চাইছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান পদের স্বাদ এর আগে অরূপ ধাড়া পেয়েছেন। তাই ওই পদটিকে পরিবার থেকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না তিনি। সেজন্য আগে থেকেই তিনি তাঁর মা মেনকা ধাড়াকে ৮ নম্বর থেকে দাঁড় করিয়ে বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন। তিনি ভোট গণনার আগে থেকেই বলে বেড়িয়েছেন বলে জানা গিয়েছে, এবার চন্দ্রকোণা পুরসভায় এক জন মহিলা চেয়ারম্যান হবেন। এটা থেকে পরিষ্কার তিনি এবার কাকে চেয়াম্যান করতে চাইছেন!
আধুনিক মনস্ক, দক্ষ সংগঠক হিসেবে রামজীবনপুর পুরসভায় কল্যাণ তথা রানা তেওয়ারিকে চেয়ারম্যান হিসেবে দলের ইয়ং জেনারেশন চাইলেও দলের জেলা নেতৃত্ব উত্তম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রোজেক্ট করেছে। দলের কাছে, উত্তমবাবুর জীবনপঞ্জীটি নাকি গ্রহণযোগ্য। রামজীবনপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান নির্মল চৌধুরীর নামটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
শারীরিকভাবে কিছুটা স্থূলকায় হলেও ক্ষীরপাই পুরসভার বহু বারের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দুর্গাশঙ্কর পান কিন্তু রাজনৈতিক কূটকৌশলে মোটেই স্থূল নন। প্রবাদ রয়েছে, ঠাণ্ডা মাথায় প্রচুর বুদ্ধি ধরেন। তাই অনেকে বীরেশ্বর পাহাড়িকে চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করলেও শেষ লগ্নে যদি ফের দুর্গাবাবু চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে পড়েন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, রাজ্য পর্যন্ত দুর্গাবাবুর হাতটা অনেকটাই লম্বা। জেলা ও রাজ্যের একাংশও দুর্গাবাবুকেই চাইছেন বলে জানা গিয়েছে।
অরূপ রায় বিজেপির কাছে হেরে যাওয়ার ফলে খড়ার শহরে চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় দাবিদার সে অর্থে কেউ নেই। বেশিরভাগই বীরসিংহ হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অদ্যুৎ মণ্ডলকেই চেয়ারম্যান হিসেবে চাইছেন।
কিন্তু এসব অঙ্কও যে কোনও সময় বদলে যেতে পারে। কারণ, দলটা যখন তৃণমূল। দলের জেলা কমিটির সভাপতি আশিস হুদাইত বলেন, চেয়ারম্যানদের নাম রাজ্য থেকে অনুমোদন হয়ে আসবে। তাই এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।