কেন মনে রাখিনি আজকের দিনটা? কেন মনে রাখিনি ৫৭ বছর আগে আজকের দিনেই এগারোটি প্রাণের বলিদান হয়েছিল শুধুমাত্র বাংলা ভাষার জন্য।
আজ ১৯ মে বাংলা ভাষা দিবস। যে ভাষা দিবসের বলি হয়েছিলেন দশ জন তরুণ সহ এক তরুণী। ২১ ফ্রেবুয়ারি আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘটা করে পালন করি। সেখানেও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছেন আমাদের ভাইরা। সেই ভাষা আন্দোলন নাড়িয়ে দিয়েছিল তামাম দুনিয়াকে। তাই ২১ ফ্রেবুয়ারি দিনটিকে দুনিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে। কিন্তু আজকের দিনটা কতটা জানি আমরা? অনেকেই জানিনা। চলুন, যারা আজকের দিনটা নিয়ে সেভাবে জানি না, তাদের জন্য একবার ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখে নিই।
অসমের দুই উপত্যকা ব্রহ্মপুত্র এবং বরাক। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার প্রধান ভাষা অসমীয়া, বরাক উপত্যকার প্রধান ভাষা বাংলা। দেশভাগের পর রেফারেণ্ডামের মাধ্যমে অসমীয়া ভাষা অধ্যুষিত সুরমা ভ্যালি পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে পড়ে। বাংলা ভাষা অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা উপত্যকা আসামেই থেকে যায়। অসমের রাজ্য ভাষা কি হবে সেই মর্মে অসম প্রদেশ কংগ্রেস অসমীয়াকে অসম রাজ্যের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে প্রস্তাব রাখে ১৯৬০ সালের ২১ ও ২২এপ্রিল তারিখে।
১৯৬০ সালের জুন মাসে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, খুব তাড়াতাড়ি অসমীয়া ভাষাকেই অসম রাজ্যের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য একটি বিল আনা হবে। জুলাই মাসের প্রথমেই শিলচরে অসমীয়া ভাষা ব্যাতীত অনান্য ভাষা এবং নিখিল আসাম বাংলা ভাষার সম্মেলন ডাকা হয়, কেন্দ্রকে অনুরোধ করা হয়, অসম রাজ্যের রাজ্য ভাষা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এরপর ভাষা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাল হল আসাম।
অসমীয়া ভাষা অধ্যুষিত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় শুরু হল বাঙালি খেদাও। কাতারে কাতারে বাঙালিরা অসম ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে আসতে শুরু করল। ১৯৬০ সালের ১৫ আগষ্ট শোকদিবস পালিত হল কলকাতায়। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু শান্তির বার্তা নিয়ে গোবিন্দ বল্লভপন্থকে আসাম পাঠালেন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মানুষ পন্থের প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন। ১৯৬০ সালে ১০ অক্টোবর রাজ্যভাষা হিসেবে অসমীয়া ভাষা স্বীকৃতি পেল। উপেক্ষিত রয়ে গেল বাংলা ভাষা।
অসমীয়া ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৯৬১ সালের ১৯ মে গণ আন্দোলন শুরু হয়। উত্তাল আসামের শিলচর রেল স্টেশনে প্রতিবাদীদের ওপর গুলি চালায় আসাম পুলিশ। ১২ জনকে গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে ৯ জন, ২ জন পরে মারা যায়। নিহতদের মধ্যে১০জন তরুণ ১জন তরুণী। ২০ মে শবদেহ নিয়ে শোকমিছিল করে শিলচরের মানুষ।
এই আন্দোলনের পর আসাম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য এগারোটি প্রাণের বলিদান বিফলে যায়নি। তাই আজকের দিনটি বাংলা ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।