শুভম চক্রবর্তী, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: পৌরসভায় জনপ্রতিনিধিদের কার্যকালের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হলেও বিশেষ পৌরনিয়মকে অস্ত্র করে পৌরসভার কাজকর্ম চালাচ্ছিলের মেয়াদ উত্তীর্ণ জনপ্রতিনিধিরাই।এই ব্যবস্থার বিরোধীতা করে বার বার নির্বাচনের দাবি তোলে বিরোধীরা। অবশেষে পৌর নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ঘোষনা করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বাংলায় নির্বাচন এই প্রথম না হলেও, এবারের পৌর নির্বাচন কোথাও যেন বাকিদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন পর্যন্ত নির্বাচন মানেই যে চিত্রটি সার্বিকভাবে ফুটে উঠত তাহলো হয় বিরোধীদের দরাজ গলায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নচেৎ শাসকদলের জনদরদি কাজের খতিয়ান।
নির্বাচনী প্রচার এর অন্যতম অস্ত্র দেওয়াল লিখন,যাকে শাসক ও বিরোধী দলের নির্বাচনী ইস্তেহারের সংক্ষিপ্ত প্রতিরূপও বলা চলতো।
কিন্তু বাইশের পৌরনির্বাচনে সবকিছুতেই যেন অন্যরকম ভাব। সবকিছুতেই দেখা দিয়েছে ভিন্নতা।
সাধারণত দেখা যায় শাসক দল তাদের উন্নয়নের খতিয়ান জাহির করে দেওয়ার লিখনে আর বিরোধিতা নিন্দার ঝড় বইয়ে দেয়।কিন্তু এবারের চিত্র যেন উল্টো।
ঘাটাল মহকুমা জুড়ে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে অধিকাংশ দেওয়াল চিত্র গুলিতে যা দেখা গেল তা মোটামুটি এইরকম, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন ঠাসা কেন্দ্রের প্রতি বিরূপসমালোচনা-নিন্দা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন প্রকল্প বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভান্ডারের জয়গান আর কোথাও কোথাও দেখা গেল এই বছরের প্রচারের হিট “খেলা হবে” গানের ভাষা দিয়ে ভরা দলীয় প্রচার। অধিকাংশ জায়গাতেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজের বা সার্বিক স্বার্থ রক্ষা হয় এমন প্রতিশ্রুতি বাবদ একটি শব্দও ব্যবহার করতে ইচ্ছা হয়নি দলীয় নেতৃত্বদের।
অন্যদিকে শাসক দলের সমালোচনা থেকে সরে গিয়ে কার্টুন ছবিতে ভর করে আগাম প্রতিশ্রুতিতে দেওয়াল ভারতে ব্যস্ত গেরুয়া শিবির।ঘাটাল পৌরসভার পাঁচ,নয়,এগারোর এর মত বেশকিছু ওয়ার্ডের দেওয়াল লিখনের আবার দেখা গেল দেওয়াল লিখনে দলীয় প্রচার করতে টেনে নামানো হয়েছে বজরংবলী, ভীমের মতো ধর্মীয় আস্থার অবয়বদেরকেও। তালিকা থেকে বাদ পড়েনি ফিল্মি দুনিয়ায় সম্প্রতি আলোচিত চরিত্র বাহুবলী। পদ্মফুল হাতে ধরানো হয়েছে বাঙালির রসের সাগর গোপাল ভাঁড়ের হাতেও।এগুলি অবশ্যই অনেকের কাছেই বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বামপন্থী দল সিপিএম সকল উন্নাসিকতা ভুলে সবাইকে চমকে দিয়ে গত নির্বাচনে মিডিয়াতে টুম্পা সোনা ডিজে সহযোগে রিমিক্স গান পোস্ট করে প্রচার সারলেও এবারে সেই পথেও হাঁটতে রাজি নয়। জোটের পথে হাঁটবে নাকি দল একলা চলো রে নীতি গ্রহণ করবে সেটা বুঝে উঠতে না পারায় দেওয়াল লিখনে বেজায় আলস্য ছিল বাম কর্মী সমর্থকদের।অবশ্য হঠাৎ করেই দলীয় তরফে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার পর তড়িঘড়ি কয়েকটি দেওয়াল লিখনের নেমেছে বাম প্রার্থীরা। তবে যেকটি দেওয়াল তারা দখল করেছে সেগুলি ভরা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় ছন্দে ফেরানোর দাবিতে। সোমবার দলীয় তরফে প্রার্থী ঘোষনা করা হলেও।বামশিবির প্রচারে হাতিয়ার করেছে স্যোসাল মিডিয়ার ওয়াল।
এখনো পর্যন্ত বামপন্থী দল এসইউসিআই সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক প্রচার চালালেও দেওয়াল লিখন বা পতাকা টাঙ্গানোর কোনরকম উদ্যোগ ই নেয়নি।সেই সাপেক্ষে তামা নেমেছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে পথ মিছিল আর বিক্ষোভের পথে।
কংগ্রেসের নেতৃত্ব যতই দাবি করুক ঘাটাল শহরে তাদের দলীয় অবস্থা এখনও অটুট রয়েছে কিন্তু বাস্তব চিত্রটা বলছে অন্য রকম। এখনো পর্যন্ত ঘাটাল পৌরসভা কোন অডি দেখা মেলেনি তাদের প্রতীকে কোনোও দেওয়াল লিখন।
ঘাটাল মহকুমার পৌর নির্বাচনে আর খুব বেশিসময় বাকি নেই কিন্তু এখন পর্যন্ত শহর, শহরতলী এবং গ্রামাঞ্চলের দেওয়াল গুলি অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিতে কর্মী সংখ্যা যে কম এমন তা কিন্তু নয় উদ্দীপনাও প্রবল। তাহলে কি দেওয়াল লিখনের মত পুরনো পন্থা থেকে ক্রমশ মুখ ফেরাচ্ছেন মানুষ?নাকি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে স্যোসাল মিডিয়ার ওয়াল ভরাতে?