তৃপ্তিপাল কর্মকার ও মনসারাম কর: বছর তিরিশের সাগরিকার জীবনের লড়াই নজির গড়েছে ঘাটালে। তিনি এখন চন্দ্রকোণা-কলকাতা দূরপাল্লা বাসের কন্ডাক্টর। হাবড়ার একজন উচ্চশিক্ষিত মহিলার এই ধরণের পেশাকে বেছে নেওয়ার মানসিকতাকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন ঘাটালের মানুষ। স্বপ্নের সিঁড়ি সাজাতে কোনও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই থেমে থাকেননি তিনি। অভাবের সংসারে ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর দুই বোন এক ভাইকে নিয়ে লড়াইটা শুরু। টিউশন পড়িয়ে স্নাতক পাশ করার পর মেলেনি চাকরি। তখন কিছুদিন হতাশায় কাটালেও তাঁর সংগ্রামী জীবনের কষ্টের ধাক্কা তাঁকে আরও লড়াকু করে তোলে। টিউশন করার পাশাপাশি শুরু করেন আলু-সব্জীর ব্যবসা। বড় কিছু করার জন্য তখন থেকেই তিল তিল করে জমাতে থাকেন উপার্জনের টাকা। পরে ঘাটাল থানার নতুক গ্রামে বিয়ে হয় সাগরিকার। বিয়ের পর একটি যাত্রীবাহী বাস কেনার ইচ্ছে হয়, নতুন বাস কেনার মত টাকা না থাকায় চন্দ্রকোণা-কলকাতা যাত্রীবাহী বাসটি লিজ নেন তিনি। কন্ডাক্টর হিসেবে সেই বাসের টিকিট কাটার ব্যাগটি নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। চন্দ্রকোণা থেকে ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছাড়ে বাসটি। দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে গিয়ে তাঁকে ভোর তিনটের আগে উঠতে হয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে এত ভোরে উঠে ডিউটি করা যাবে না বলে চন্দ্রকোনার কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। ভোর তিনটায় উঠে বাসি পাঠ সেরে অন্ধকার থাকতে থাকতেই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যেতে হয়। এতটা পথ পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছায় সকাল ৯ টায়। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে প্রথমেই টিকিট বিক্রির হিসেবের দিকে তাকান। তারপর সেখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ পাশের একটি পার্কে শিশুদের সাথে খেলাধূলা করে কিছুটা সময় কেটে যায়। দুপুর বেলা ১২ টা ১০ নাগাদ ফের বাস ছাড়ে চন্দ্রকোণার দিকে। বেলা চারটেয় গন্তব্যস্থলে পৌঁছে হিসেবপত্র শেষ করে ভাড়া বাড়িতে ফেরেন সাগরিকাদেবী।
বাসের কন্ডাক্টরি পেশায় যুক্ত হওয়ার জন্য অসন্তুষ্ট বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। বাসের মধ্যে অনেকে মহিলা কন্ডাকটরকে দেখে অবাক হন, আবার কেউ কেউ প্রশংসাও করেন। সব কিছুকে সামলে সাগরিকা মন দিয়েই করে চলেছেন তাঁর কন্ডাক্টরির কাজ। তবে এত কিছু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দূরপাল্লাবাসে কন্ডাক্টরি করা যে সোজা ব্যাপার না তা মানেন সকলেই। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বিকাশ কর জানিয়েছেন, সাগরিকাদেবীর এই কাজ সত্যিই খুব কঠিন, তাঁর এগিয়ে চলাকে সমর্থন জানিয়েছেন বিকাশবাবু। তিনি বলেন, একজন মহিলা পরিবহন শ্রমিক হিসেবে সাগরিকার যে কোনও সমস্যার পাশে শ্রমিক সংগঠন থাকবে।
Home এই মুহূর্তে বিশেষ প্রতিবেদন দূরপাল্লা বাসের মহিলা কন্ডাক্টারির পেশায় সমাজে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত গড়লেন উচ্চশিক্ষিতা ঘাটালের...