সুদেষ্ণা ঘটক অধিকারী(এএনএম, দাসপুর-২ ব্লক): আমি বাস করি দাসপুর-২ নং ব্লকের সোনামুই গ্রামে (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা)। ভোর বেলা ঘুমটা ভেঙে গেলো, ৩১ জানুয়ারি থেকেই ভুগছি…। সত্যি বলছি এবার তোমাদের … চটকাতে ইচ্ছে করছে আমার। না রেখে ঢেকে আসল কথাটাই বলি,এলাকাটা একদম ভক্ত(ভণ্ড) বাবাজিতে ছেয়ে গেছে। এরা নিজেরা হরি হরি করে আপনার রাতের ঘুম থেকে দিনের শান্তি,আপনার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ, পড়াশোনা সব কাড়তে পারে। আমরা নাকি শিক্ষিত সমাজে বাস করছি,যেখানে ৬০ ডেসিবেলের উপর শব্দে কেত্তন করে আপনার সুষ্ঠ জীবন ব্যহত করা হয়,আপনার ছেলে মেয়ের পড়াশোনা তছনছ করা হয়। আমরা সরকারিভাবে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে থাকলে পালস্ পোলিওতেও মাইক ব্যবহার করি না।আর এরা??!! তাছাড়া এটা একটা অসুস্থ পরিবেশের উদাহরণ।
নিজের ইচ্ছেমত ধর্ম পালন যে কেউ করতেই পারে,এতো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া…আরে বাবা তুমি ‘হরি’ বলছো কী তুমি ‘হরো’ বলছো,আমার তাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই,আমাকেও যে সে কথা বলতে হবে,শুনতে হবে এমন টা তো কথা নয়। …যত্তো সব ভণ্ডামি!
প্রশাসন কী করে কী জানি!কেন কোনও পদক্ষেপ নেয়না এ ব্যাপারে? ইচ্ছে করলে পঞ্চায়েত প্রশাসনও এই সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান করতে পারে,বলতেই বা হবে কেন? তাঁদের কান নেই? পঞ্চায়েত লাগোয়া এমন কেত্তন মাসে দু পাঁচটা তো হচ্ছেই, মনে হয় না যে-এলাকায় একনাগাড়ে ৩-৪ দিন ধরে এতো জোড়ে মাইক বাজবে কেন?
আমার তো কানের ৩ পেশির সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গেছে, কিন্তু ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা ১৮ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে, বেচারি খুব কষ্ট পাচ্ছে,সাফার করছে,গতকাল থেকে সারাদিন দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছে,কামনা করছে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাক,ওরা থামুক,ও একটু পড়তে পারুক।আমি ভাবলাম একটা দিন বুঝি, মানিয়ে নিই,এতো চলছে চলবে…
আমার মাথাটা জাস্ট কাজ করছে না,প্রচণ্ড ধরে গেছে ভোর থেকে, আর পারছি না হরিকে ফ্রন্ট লাইনে রেখে এই ভণ্ডামিগুলো,অসভ্যতাগুলো সহ্য করতে!
ছিঃ!
উপরের লেখাটি সুদেষ্ণাদেবী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্টের উত্তরে বর্তমান অধিকাংশ অষ্টপ্রহর কেন করা হয় তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন উমাশঙ্করবাবু
উমাশঙ্কর নিয়োগী (প্রাবন্ধিক ওঅবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নন্দনপুর হাইস্কুল): অষ্টপ্রহর কীর্তন নব্বুই শতাংশ এই ভেবে করিয়ে থাকেন:-(১) নিজের করা পাপ স্খালন হবে বলে। (২) আমার কত্ত টাকা হয়েছে দেখাতে। (৩) দেখ, কতো বড় ভক্ত হয়েছি জানাতে। (৪) টাকার বিনিময়ে নিজে একবারও নাম জপ না করে পূণ্যার্জন করা যায় তা প্রচার করতে। (৫) রগরগে ফ্লিমি গানের সুরে কত ভাবে ঈশ্বরের নাম করা যায় তা জন সমক্ষে তুলে ধরতে। (৬) হরে কৃষ্ণ থেকে ‘হড়ে কিস্ নো ও ও’ রাধাগোবিন্দ জয় ‘ অমার্জিত উচ্চারণে কীভাবে রাধা গো! বিন্দ জয়, শুনেও চুপ করে থাকতে হয় তা জানান দিতে। ( ৭) রেওয়াজহীন, ভক্তিহীন, নেশায় চুরচুর জগাই মাধাইয়ের হেঁড়ে গলায় নাম সংকীর্তন কত সুমধুর হয় তা জনতার দরবারে তুলে ধরতে। (৮) বড় তামাক, বা রঙিন তরল পানে ভক্তি সুধারসে হৃদয় কীভাবে প্লাবিত হয়ে কীর্তনাকারে নির্গমন হয় তা দেখানোর উদ্দেশ্যে। (৯) নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে নরণারায়ণ সেবা (পড়ুন কাঙালিভোজন) করিয়ে তাদের মুখ থেকে আয়োজন ও পরিবেশিত খাদ্যের নিন্দা শোনার জন্যে। (১০) অতি উচ্চগ্রামে ডিজে বাজিয়ে নিজের ভক্তিপ্রাবল্য জাহির করা ও কীর্তনীয়ার কণ্ঠের ত্রুটি ঢাকা দেবার প্রচেষ্টায় মানুষের অভিশাপ কুড়ানোর উদ্দেশ্যে।
ব্যতিক্রমীরা নমস্য ও শ্রদ্ধার পাত্র।