অরুণাভ বেরা: রেজাল্ট বেরানোর প্রায় ৯ মাস পর দুই নম্বর বেড়ে যাওয়ায় মাধ্যমিকে রাজ্যে নবম স্থান দখল করল ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের ছাত্র অনির্বাণ রায়। তথ্য জানার অধিকার আইন অনুযায়ী আবেদন করে চ্যালেঞ্জ জানাতেই তার দু নম্বর বাড়ে। সম্প্রতি স্কুলে তার ওই রেজাল্ট এসেছে। রাজ্যে প্রথম দশের মধ্যে অনির্বাণ স্থান করে নেওয়ায় খুশি ওই স্কুল থেকে শুরু করে ঘাটাল মহকুমার বাসিন্দা।
২০১৮ সালের মাধ্যমিকে ৬৭৯ নম্বর পেয়ে রাজ্য একাদশ স্থান দখল করেছিল। ওই নম্বরে খুশি ছিলেন না তাঁর বাবা ডাঃ মলয় রায়। তাই তিনি অনিবার্ণর খাতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন। আর টি আই করতে ইংরেজিতে দুই নম্বর বেড়ে হয় ৬৮১। তবে এতেও খুশি নন মলয়বাবু। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে মোট আরও চার-পাঁচ নম্বর বেশি হওয়া উচিত ছিল।
অনির্বাণের বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক নাম্বারগুলি হল, বাংলায়-৯১, ইংরেজিতে-৯৬, অংকে-১০০, জীবনবিজ্ঞানে-১০০, জড়বিজ্ঞানে-১০০, ইতিহাসে-৯৬ ও ভূগোলে-৯৮। তার মোট প্রাপ্ত নাম্বার ৬৮১। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মলয় রায়ের ছেলে অনির্বাণ। মা ববিতা রায়, নার্সিং স্টাফ। মলয়বাবু বলেন, অনিবার্ণ টেস্ট পরীক্ষাতেও একই নাম্বার পেয়েছিল। অন্যান্য ছাত্রছাত্রীর টেস্টের তুলনায় নাম্বার বাড়লেও অনির্বাণের একই নম্বর বাড়েনি। আর কয়েক নাম্বার বাড়লে তখনই রাজ্যে প্রথম দশে স্থান করে নিত অনির্বাণ।
বরাবরের মেধাবী ছাত্র অনির্বাণের ইচ্ছে আই.আই.টি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করবে। নতুবা মেডিক্যালে ভাল পজিশন হলে পছন্দমত কলেজে সুযোগ পেলে ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করবে। এই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে সে। মাধ্যমিকের প্রস্তুতি হিসেবে সারাদিনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পড়ত সে। সব বিষয়েই টিউশন ছিল তার। অতীতেও বহু পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে অনির্বাণ উত্তীর্ণ হয়েছে। মলয়বাবু বলেন, অনির্বাণ চতুর্থ শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম ২০ জনের মধ্যে স্থান করে কলকাতায় সংবর্ধনা পায়। মেদিনীপুর থেকে পরিচালিত বিজ্ঞান ও মেধা অন্বেষণ পরীক্ষায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পরপর তিনবছর প্রথম হয় সে। সেখানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আরামবাগ থেকে আয়োজিত ইংরেজি মেধা অন্বেষণ পরীক্ষায় সংবর্ধনা পেয়েছে অনির্বাণ। ন্যাশনাল ট্যালেন্ট সার্চ পরীক্ষায় ঘাটাল থেকে অনির্বাণ নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা দিয়েছে। অবসর সময়ে গান শুনতে ভালবাসে অনির্বাণ। এছাড়াও থ্রিলার ও কল্পবিজ্ঞানের গল্প পড়তে ভাল লাগে তার। তাকে স্কুল ও টিউশনের সমস্ত শিক্ষকই বিশেষভাবে সহযোগিতা করত। তবে বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের রসায়নের শিক্ষক শান্তনু ঘোষের সহযোগিতা অনির্বাণকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে সে জানায়। উচ্চমাধ্যমিকেও অনির্বাণ কৃতিত্ব গড়তে পারবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী সে। দেরীতে হলেও অনির্বাণ রাজ্যে প্রথম দশের মধ্যে স্থান করে নেওয়ায় তার পড়াশোনার উৎসাহ ও একাগ্রতা আরও বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তবে মলয়বাবুর আক্ষেপ, যদি প্রথম অবস্থায় খাতাগুলি ঠিকমতো করে দেখা হত তাহলে আমার পুত্র সরকারিভাবে সংবর্ধনা পেত এবং সেই সঙ্গে সহ অন্যান্য উৎসাহগুলি পেতে পারত।