এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

গতিশীল যুগে যে কোনও পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলন বা শ্রদ্ধা জানানোর মান্ধাতার আমলের পদ্ধতির অবসান হোক

Published on: July 13, 2019 । 8:15 AM

তৃপ্তি পাল কর্মকার:স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অচল করে দিয়ে যেকোনও আন্দোলন বা শ্রদ্ধা জানানোর পুরানো পদ্ধতির এবার অবসান হওয়ার সময় এসেছে।
সারা ভারতের কোন কোন জায়গায় এই সংস্কৃতি রয়েছে সেটা তথ্য দিয়ে বলা মুশকিল। কিন্তু আন্দোলন করা বা কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য যে আমাদের এই বঙ্গে ‘প্রতিষ্ঠান অচল’ করে রাখার একটা প্রবণতা রয়েছে সেবিষয়ে নতুন করে কাউকে বলার দরকার হবে না। তবুও প্রাসঙ্গিকতার কারণে কয়েকটি উদাহরণ না দিলে বিষয়টি সম্পূর্ণ হবে না।
ধরা যাক, কোনও গঞ্জে বা শহরে কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা ভূতপূর্ব সদস্য মারা গেলেন। এই বাংলার একটা প্রচলিত চল রয়েছে, মৃত ব্যক্তি যে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁর মৃত্যু উপলক্ষ্যে সেই এলাকার সেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠান এক দিন সম্পূর্ণ দিবস বা অর্ধ দিবস বন্ধ রাখা হয়। যদি না রাখা হয় তাহলে সংগঠনের সেই সদস্যকে নাকি প্রকৃত সম্মান বা শ্রদ্ধা জানানো হয় না। বাস্তবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ওই সদস্যটি যখন বেঁচে ছিলেন এবং হয়তো দীর্ঘ দিন অসুস্থতায় ভুগছিলেন তখন সংগঠনের সদস্যদের কোনও হুঁশই ছিল না। তখন হয়তো কোনও সদস্যই তাঁর খোঁজ রাখারই প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু মারা যাওয়ার পরই শ্রদ্ধা জানানোর তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।
সমস্ত দোকান বন্ধ করে রেখে তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি কী করে যে শ্রদ্ধা জানানো হয় তার গহীন অর্থ এখনও অনেকেই খুঁজে পাননি। সত্যিই যদি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আন্তরিক ইচ্ছে থাকে তাহলে অন্যভাবেও শ্রদ্ধা জানানো যেতে পারে।
যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর একটি ছবি সংগঠন সদস্যদের দোকানে টাঙিয়ে রাখা যেতে পারে। কিম্বা যদি আরও একটু বেশি করে শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছে হয় তাহলে সংগঠনের পক্ষ থেকে সেই মৃত সদস্যর নামে কোনও স্কুলে দুঃস্থ ছাত্র বা ছাত্রীকে পড়াশোনার জন্য অনুদান দেওয়া যেতে পারে। সেই সদস্যের নাম করে দুঃস্থ কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার পাশে দাঁড়ানো যেতে পারে। পার্কে কোনও স্থায়ী কম্বো চেয়ার দান করা যেতে পারে। আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে। শুধু শুধু দোকান বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ক্রেতাদের সমস্যার মুখে ফেলা কোনও ভাবেই উচিত নয়। এতে শ্রদ্ধা তো দেখানোই হয় না পরন্তু ক্রেতাদের সমস্যায় ফেলা হয়।
আর সত্যিই একজন ব্যবসায়ী মারা গেলে যদি সেই সংগঠনের সমস্ত দোকান বন্ধ রাখতে হয় তাহলে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মারা গেলে কী করতে হবে? বাস মালিক সংগঠনের সদস্য মারা গেলে কি সমস্ত বাস বন্ধ রাখা হবে? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মারা গেলে কি অর্থনৈতিক লেন-দেন বন্ধ রাখতে হবে? প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারা গেলে তাহলে কী করা উচিৎ হবে? … এর আগে অনেক বিশিষ্ট সাংবাদিক, সম্পাদক, সংবাদপত্রের মালিক মারা গিয়েছেন, কোনও সংবাদমাধ্যম তো বন্ধই হয়নি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে প্রতিষ্ঠানে মালিক বা কর্মরত ছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানও কখনও বন্ধ হয়েছে বলে জানা নেই। ‘বর্তমান’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্ত মারা যাওয়ার পর কী হয়েছিল সেটা অন্তত সবারই মনে রয়েছে। একদিনের জন্যও ‘বর্তমান’ বন্ধ রাখা হয়নি।
আসলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের যাঁরা নেতৃত্ব দেন তাঁরা একটি নির্দিষ্ট সীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। আর প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মাধ্যমে বাস্তবে তাঁরা কী বার্তা দিতে চাইছেন সেটাও তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। বাস্তবমুখী চিন্তাভাবনা না থাকার ফলে তাঁরা তাঁদের পূর্বসূরীদের অনুসরণ করাটা ছাড়তে পারেননি।
প্রতিষ্ঠান বা সিস্টেম অচল করার অন্য একটি চিত্র দেখা যায় আন্দোলন করার সময়। রাস্তা সংস্কারের দাবিতে, পথ দুর্ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কিম্বা কোনও প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে হোক তার কোনও প্রতিকার না পেলেই শুরু হয়ে যায় অচল করার অভিযান। একজন বাইক আরোহী এক পথচারিকে ধাক্কা দিল, তার জন্য শুরু হয়ে গেল অবরোধ। আলুর দাম বাড়েনি কেন তার জন্য শুরু হয়ে গেল পথ অবরোধ। শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে আসতে দেরী করেন কেন, তার জন্য স্কুলের গেটে তালা। এই ধরনের আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে।
একটা স্কুল বন্ধ বা বিডিও অফিস ঘেরাও হলে মানুষকে সে অর্থে সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু হুটহাট কারণে পথ অবরোধ করা হলে মানুষকে যে কি দুর্ভোগে পড়তে হয় যাঁরা কখনও ভুক্তভোগী হয়েছেন তাঁরাই উপলব্ধি করতে পারেন। পথ অবরোধের ফলে দুর্ভোগের পাশাপাশি বিপদেও পড়তে হয়। অন্য দিকে ট্রেন, প্লেন ধরতে না পারার ফলে, নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে না পারার ফলে পরীক্ষায় না বসতে পারলে কী যে আর্থিক ক্ষতি বা জীবনে একমাত্র সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। এই ধরনের ঘটনা সংখ্যায় কম হলেও অনেকেরই হয়েছে।
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যাঁরা আন্দোলনের নামে সিস্টেম অচল করার অভিযানে নামেন তাঁদের মধ্যে একটা পৈশাচিক আনন্দ পরিলক্ষিত হয়। অগুণিত মানুষকে বিপদে এবং দুর্ভোগে না ফেলে অন্যভাবে আন্দোলন করা যেতে পারে। প্রশাসন বা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে চাপে রাখতে সুপরিকল্পিত আন্দোলন দরকার। আর সেই ধারাবাহিক আন্দোলন করার মতো হুজুগে মানুষদের হাতে সময় নেই, সেজন্যই অচল করার মতো সস্তার কিস্তি মাতের নীতি।
যুগ বদলাচ্ছে। নিজেদের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের জন্য অগুণিত মানুষকে দুর্ভোগে বা সমস্যায় ফেলার অধিকার কারোর নেই। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আন্দোলনের পদ্ধতি বা শ্রদ্ধা জানানোর পদ্ধতিরও সংস্কার করা উচিত। তবেই সমস্ত শ্রেণীর সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব।

তৃপ্তি পাল কর্মকার

আমার প্রতিবেদনের সব কিছু আগ্রহ, উৎসাহ ঘাটাল মহকুমাকে ঘিরে... •ইমেল: [email protected] •মো: 9933066200 •ফেসবুক: https://www.facebook.com/triptighatal •মোবাইল অ্যাপ: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.myghatal.eportal&hl=en ইউটিউব: https://www.youtube.com/c/SthaniyaSambad

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now

পড়তে ভুলবেন না

দেড় মাসের বিবাহিত জীবন,স্বামীর সাথে মা আরও ৪ টি প্রাণ শেষ!

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঘাটাল বি.এড.কলেজ ক্যাম্পাসে ভেষজ উদ্যানের সূচনা

ঘাটালের এই বৃদ্ধের দিনকাটে কলকাতার কালীঘাটে ভিক্ষা করে, ফিরতে চান ছেলেদের কাছে নিজের বাড়িতে!

দাসপুরে পুলক মাস্টারের হাত ধরে নাট্য বিপ্লব,সময়ের বাইরে গিয়ে শিক্ষকের নাট্য চর্চা

ঘাটাল জুড়ে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা! মর্মান্তিক মৃত্যু! প্রাণ বাঁচাতে যা করবেন। দেখে রাখুন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেনা অচেনা মানুষগুলো প্রাণে বেঁচে যেতে পারেন

উচ্চ বেতনের চাকরি ছেড়ে জনসেবার উদ্দেশ্যে IAS পরীক্ষার প্রস্তুতি! ঘাটালে কর্মশালায় জেলাশাসকের বক্তব্যে আপ্লুত ছাত্রছাত্রীরা