দাসপুর থানার সুরতপুর শ্রীঅরবিন্দ শতবার্ষিকী বিদ্যামন্দির-এর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারাশঙ্কর দাসবৈরাগী প্রিয় মেধাবী ছাত্রীর অকাল প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে জানান রবিবার বিকেল প্রায় ৫টা৪৫মিনিট নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী সুনীতা মাইতির(১৭)। তিনি আরও জানান সুনীতা পড়াশোনায় ভীষণ ভালো এবং খুব মেধাবী ছিল।
ছাত্রীর বাবার নাম স্বপন মাইতি বাড়ি দাসপুরের সুরতপুর গ্রামেই। পরিবার সূত্রে জানাযায় সপ্তাহ দুয়েক আগে হঠাৎ জ্বর আসে সুনীতার। স্থানীয় ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা চলে। কিন্তু জ্বর কাটলেও ঝিমুনি ভাব সাথে গা বমিভাব সুনীতাকে সারা দিন আচ্ছন্ন করে রাখত। আগের সপ্তাহে এক সন্ধ্যেবেলা মা কে মুড়ি খেতে চায় সুনীতা। মা মুড়ি নিয়ে ফিরে দেখেন মেয়ের কেমন যেন খিঁচুনি হচ্ছে। সাথে সাথে ঘাটাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মাথার সিটিস্যানের জন্য মেদিনীপুর রেফার করেন। ওই দিন রাত প্রায় ২টা নাগাদ সুনীতাকে মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকাল প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ সুনীতার সিটি স্ক্যান হলে ডাক্তারবাবু মেয়ের মাকে মেয়ের বাঁচার আশা ছেড়েদিতে বলেন। মাথায় ছোট্ট একটা ব্লাড ক্লট,সেই থেকেই সারা মাথায় ছড়িয়েছে ইনফেকশন। আশা ছাড়েননি মা। ডাক্তারবাবুরা চেষ্টা চালান সুনীতাকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ২৮ জুন রবিবার বিকেলে মৃত্যু হয় সুনীতার। লালারসের পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ। আজ সোমবারের সকালে নিজের গ্রামের বাড়িতে সুনীতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
মৃত্যুতে সামান্য হলেও পরিবারেরই গাফিলতির হদিস মিলেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারফৎ জানাযায় বছর দুই আগে থেকেই মাথার ব্যথা শুরু হয় সুনীতার। ব্যথাটা এমন পর্যায়ে যায় যে বিদ্যালয়ের ঘন্টাও সুনীতার অনুরোধে স্বাভাবিক ভাবে বাজানো যেত না। শব্দের জেরে তীব্র মাথার যন্ত্রনা শুরু হতো তার। সুনীতাই প্রধান শিক্ষক তারাশঙ্করবাবুকে ঘণ্টাধ্বনি কমাতে অনুরোধ জানিয়েছিল। বাবা মা-কে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। হয়তো তেমন আমল দেয়নি পরিবার। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চলে চোখের পরীক্ষা,দেওয়া চশমা। মাধ্যমিকের আগেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে।
কেউ ভাবতে পারেনি বছর দুই ধরে এভাবে মাথার ভিতরেই তৈরি হচ্ছিল মৃত্যু ফাঁদ। সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে হয়তো গ্রামের মেধাবী মেয়েটার অকালে প্রাণটা যেত না! অনুরোধ পরিবার এবং ছেলে মেয়েদের সব সমস্যাই গুরুত্বসহকারে দেখুন।