দেবাশিস কর্মকার: টেলিভিশনের পর্দায় ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন দাসপুরের সুস্মিতা বেরা। রঙিন জগতের টানে নয়, অভিনয়ের প্রতি আবেগকে সঙ্গী করেই বেছে নিয়েছেন এই ব্যতিক্রমী পেশাটিকে। অভিনয়ের পেশাটি যথেষ্ট সম্মানজনক এবং অর্থকরী। কিন্তু তা সত্ত্বেও গতানুগতিক ভাবনার বাইরে অভিনয়কে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করার মত সিদ্ধান্ত খুব কম জনই নেন। কিন্তু সেসব ভাবনার তোয়াক্কা করেননি তিনি। কেবল অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসাকে অবলম্বন করেই প্রায় ১০ বছর আগে এই পথে পা বাড়িয়েছিলেন। আজকে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী।
বর্তমানে ডি.ডি ন্যাশনাল চ্যানেলে ‘কিংবদন্তি’ নামের ধারাবাহিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। অভিনয় জগতে পা রাখার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নানা ধরণের কাজের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। শুরুর দিকে কস্টিউম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট, থিয়েটারে অভিনয় থেকে বর্তমানে বাংলা কার্টুন চরিত্রে কণ্ঠস্বর দেওয়া বা সরাসরি ছবিতে অভিনয় সবকিছুই করেছেন সমান আগ্রহ নিয়ে। লক্ষ্য ছিল কোনও ভালো ছবিতে বা ধারাবাহিকে অভিনয় করবেন। অনেকটা পথ পেরোতে হলেও শেষ পর্যন্ত আজ তিনি তাঁর লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
কর্মজীবনের প্রথমের দিকে দিল্লির ‘ইন্ডিয়া পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে কয়েকটি থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন। থিয়েটারে বেশ কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে চলে যান মুম্বই। সেখান থেকেই ‘অশোকা’, ‘মহারানা প্রতাপ’-এর মত ধারাবাহিকগুলিতে অভিনয় শুরু হয়। প্রথম প্রথম অভিনয়ে সুযোগ করে নিতে বেশ কিছুটা সংগ্রাম করতে হয় তাঁকে। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে ক্রমাগত চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে সফল হন। সম্প্রতি ‘শান’ বাংলা চ্যানেলে বেশ কয়েকটি কার্টুন চরিত্র যেমন বুনি ভাল্লুক, জি ফাইটার ইত্যাদিতে তিনি ডাবিং তথা কণ্ঠস্বর দিয়েছেন। এছাড়াও খাগরাস নামের একটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন যেটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সুস্মিতার বাড়ি দাসপুর শ্যামসুন্দরপুরে, দাসপুর বাজার ও বকুলতার মাঝে। বাবা সুকুমার বেরা কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকার জন্য সুস্মিতার শৈশব ওখানেই কাটে। যদিও পরবর্তীকালে দাসপুর বিবেকানন্দ স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং পরে সোনাখালি হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। স্কুলে পড়া চলাকালীনই নাচের প্রতি বিশেষ আগ্রহ থেকে নাচ শেখা শুরু করেন দাসপুর সবুজ সংঘে। কিন্তু নাচের পাশাপাশি অভিনয়ে অনুরাগ জন্মাতে শুরু করলেও, নিজের দক্ষতা প্রমাণের কোনও জায়গা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সুযোগ আসে সোনাখালি স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময়। ওই বছর স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হওয়া একটি নাটকে খুব ভালো অভিনয় করে সকলের মন জয় করে নেন। সেই থেকেই জীবনের লক্ষ্য নিয়ে আর কোনও দিকে বিচলিত হননি। এক মনে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে গ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। যদিও প্রথম থেকেই আত্মীয়-পরিজনেরা তাঁকে বিষয়টি নিয়ে নিরুৎসাহ করতে থাকে। কিন্তু বাবা এবং মা সবদিনই মেয়ের ইচ্ছেকে মন থেকে সমর্থন করে গিয়েছেন। মেয়ে যা মন থেকে ভালোবেসে করতে চায় তাতে কোনও রকম বাধ সাধেননি মা রেণুকাদেবী। অভিনয় জগতে প্রেরণার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সুস্মিতা বলেন, বাবা মায়ের পাশাপাশি আমার স্কুল জীবনে বেশ কয়েকজন মানুষের ভূমিকা ভোলার মত নয়। সবুজ সংঘের নাচের শিক্ষক বিকাশ মর্দন, সোনাখালি হাইস্কুলের শিক্ষক আলোক রানা, সমরেন্দ্র ভুক্তা প্রমুখরা আমাকে ধারাবাহিক উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। •সুস্মিতার সাক্ষাৎকার দেখতে চাইলে ▶এখানে ক্লিক করতে পারেন।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]।