আবারও সাফল্য দাসপুর পুলিশের: নিজেই মালিকের দোকানে রুপো লুটের নাটক করেছিল, গ্রেপ্তার মূল পাণ্ডারা

সৌমেন মিশ্র ও সন্তু বেরা: একেবারে নাটকীয় কায়দায় চুরি। মুখ আর মুখোশের ভিড়ে দাসপুর থানার পুলিশ আবারও ৬০ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দুষ্কৃতীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করল। ১৪ ডিসেম্বর সোমবার দাসপুর থানার দাসপুর মাছবাজারের কাছে রুপো দোকানের কর্মচারীর পেটে ছুরি চালিয়ে দোকানের রূপো লুটের অভিযোগ করেন দোকান মালিক সৌমেন পাত্র। সেই ঘটনারই মূল পান্ডাদের ধরে ফেলল দাসপুর থানার পুলিশ। আবারও বড়সড় সাফল্য দাসপুর পুলিশের। দাসপুর থানার ওসি সুদীপ ঘোষালকে সাথে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তে নামেন ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী। ১৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার পুলিশ দাসপুরের ওই রুপো দোকান ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিনতাইকারীদের সনাক্ত করে ফেলে। বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দাসপুর পুলিশের এই সাফল্যে খুশি দাসপুর গঞ্জের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, কয়েক মাস আগে দাসপুর শাশুড়ি খুনের ঘটনাতেও দাসপুর ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারীক এবং দাসপুর থানার পুলিশ খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করে সাধারণ মানুষকে চমকে দিয়েছিল। এই ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও তাই হল।
দাসপুর পুলিশ জানিয়েছে এই ছিনতাইয়ের মূল পাণ্ডা ওই দোকানের কর্মচারীই। সেই ছিনতাইয়ের সমস্ত নাটকটির প্লট তৈরি করেছিল।কর্মচারীর নাম আমন জানা। বাড়ি দাসপুর গঞ্জ লাগোয়া সুজানগর গ্রামে।

জেরার মুখে আমন পুলিশকে জানিয়েছে, রেসিং বাইক, দামী মোবাইল সহ অনেক কিছুরই তার শখ রয়েছে। সেই সমস্ত শখ পূরণের জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই সে শেষ পর্যন্ত নিজের মালিকের দোকানের রুপো গায়েব করারই পরিকল্পনা করে। সেই ইচ্ছে বাস্তবায়িত করতেই মালিকের অবর্তমানে লাওদা গ্রামের বন্ধু সুব্রত আদককে নিয়ে এই ছিনতাইয়ের ছক কষেছিল তারা। অন্যদিকে এই সুব্রতেরও ছোটোখাটো রূপোর ব্যবসা আছে। সুব্রতের ইচ্ছে দাসপুরের রূপো ব্যবসার বেতাজ বাদশা হওয়ার। তাই সে চেষ্টায় থাকে এলাকার রুপো ব্যবসায়ীদের রুপো হাতিয়ে তাদের কমজোরি করি নিজের ব্যবসা বাড়াতে।
দাসপুর গঞ্জে সোমবার রুপো ছেলাইয়ের কাজ বা বেচাকেনা বন্ধ থাকে। রুপো দোকানে থাকে না খদ্দেরদের আনাগোনা। মাছ বাজারের ওই গলি দুপুরে একেবারেই ফাঁকা থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক দুপুরে মালিক বাড়িতে ভাত খেতে গেলে বন্ধু সুব্রতকে ডেকে নেয় আমন। তার আগে আমন মালিককে ফোন করে জানতে চায় দোকানে আসতে তাঁর কত দেরী হবে। আমনের কল হিস্ট্রি বলছে, ওই দিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সে ফোন করে মালিককে। সৌমেনবাবু ভেবেছিলেন আমনের কিছু কাজ আছে হয়তো তাই জানতে চেয়েছিল। অন্যদিকে আমন ততক্ষণে দোকানের সমস্ত রুপো ব্যাগে ভরে নেয় এবং সুব্রতকে ফোনে ডাকলে সে এসে ব্যাগ নিয়ে পালায়। এর পর আমন নিজেই পেটে ব্লেড দিয়ে চিরে এই পেটে ছুরির নাটক করে। সমস্ত ঘটনা ঘটে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে। কিন্তু দোকান ছিনতাইয়ের ঘটনা আমন মালিককে জানায় ২টা ৩৮ মিনিটে। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, ২টা ২০ মিনিটের পর ৩ থেকে ৪ বার একটি নাম্বারে ফোন করে আমন। সেই নাম্বারই হল সুব্রত আদকের।
নিখুঁত অভিনয়ে সমস্ত ঠিকঠাকই চলে কিন্তু বাধ সাধে দাসপুর পুলিশ। আমনের বয়ানে আর চোখের ভাষায় মিল নেই। ছুরির ঘা পেট ভেদ না করে আঁচড় কেটে গেল? চুরির কিছুক্ষণ আগে কেন মালিকে দোকানে আসার সময় জানতে চাওয়া হবে? সেই সঙ্গে অপরাধীর এই ফোনই কাল হয়ে দাঁড়াল। আমনের সাথে সুব্রতকে বসিয়ে জেরা,মিলে গেল সব।
গত রাতেই আমন ও সুব্রতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এখন পুলিশ উদ্ধারের চেষ্টায় ছিনতাই হওয়া সব রুপো। দাসপুর পুলিশ আবারও বড় সাফল্য পেল। আজ শুক্রবার সুব্রতকে আদালতে পাঠানো হবে। নাবালক হওয়ায় আমনকে পাঠানো হচ্ছে মেদিনীপুর জুভেলাইন কোর্টে।
দাসপুর পুলিশের এই সাফল্যে সারা দাসপুরবাসীর পাশাপাশি দাসপুর বাজারের দোকানদাররা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী এবং দাসপুরের বর্তমান ওসি সুদীপ ঘোষালকে।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!