এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

রাখি বন্ধন: উমাশঙ্কর নিয়োগী

Published on: August 2, 2020 । 7:06 PM

উমাশঙ্কর নিয়োগী: রাখি কেন আমরা পরি সেই নিয়ে পৌরানিক কাহিনী আছে। যা প্রায় সকলেই জানেন। তবু পুরানো কাহিনী বলতে আর শুনতে অনেক ভালোবাসেন তাঁদের উপর ভরসা করে তাই—
দ্রুপদ নন্দিনী ভারত সুন্দরী কৃষ্ণা, বীর্যশুল্কা। অর্জুন জয় করেছেন কৃষ্ণাকে। কিন্তু কপালগুণে পঞ্চপাণ্ডব তাঁর স্বামী। সুন্দরী ব্যক্তিত্বময়ী বুদ্ধিমতী রমনীর প্রতি কোন না পুরুষের দুর্বলতা থাকে! কর্ণ দুর্যোধন দুঃশাসন মায় কৃষ্ণের পর্যন্ত দুর্বলতা থাকবে তাতে আর আশ্চর্য কী! যাক্ ওসব কথা। কাহিনীতে আসি।
•কাহিনী-১
দ্বারকাধীশ কৃষ্ণকে প্রায় যুদ্ধ করতে হত। কোন এক যুদ্ধ করতে গিয়ে ডান হাতের কব্জিতে শস্ত্রাঘাত পেলেন। দ্বারকা সেখান থেকে বহু দূরে। রুক্মিণী সত্যভামা কুব্জা কারো কথা মনে পড়ল না। দ্রৌপদীর কথা মনে পড়ে গেল। দ্রৌপদী যে পর স্ত্রী! তাতে কী! একটুকু ছোঁয়া লাগের আশায় ‘ তেরে দ্বার পে খাড়া হো যোগী’ বলে হাজির হলেন পাণ্ডব বাড়িতে। কৃষ্ণকে দেখে পঞ্চপাণ্ডব আহ্লাদে গলে জল। দ্রৌপদীও অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এলেন। পঞ্চপাণ্ডবের চোখে না পড়লেও কৃষ্ণার চোখে পড়লো রুক্মিণী পতির হাত থেকে রক্ত পাত হচ্ছে । ফ্যাঁস্ করে আঁচলের কিছুটা ছিঁড়ে নিয়ে বেঁধে দিলেন তাঁর ডান হাতে। সমস্ত শ্রান্তি ক্লান্তি কোথায় চলে গেল কৃষ্ণের। সেই দিন ছিল শ্রাবণী পূর্ণিমা। নিরুপায় কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বোন বলে সম্বোধন করেন এবং বিপদে যাজ্ঞসেনীকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। কুরু বংশের রাজসভায় যখন কুরুকুলবধূকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করছেন দুঃশাসন আর পঞ্চপাণ্ডব বসে বসে ফ্যালফ্যাল করে দেখছেন তখন কৃষ্ণ তাঁর কথা রেখেছিলেন । নারীত্বের চরম অপমানের হাত থেকে দ্রৌপদীকে বাঁচিয়ে ছিলেন।
•কাহিনী-২
হরিভক্ত প্রহ্লাদের নাতি দৈত্য রাজ বলি দাদুর মতোই বিষ্ণু ভক্ত। বলিকে সমস্ত প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণু মর্তে এসে বলির রাজ্যে বসবাস করতে লাগলেন। লক্ষ্মী ঠাকরুণ আর কী করেন। তিনিও বাধ্য হলেন স্বর্গ সুখ ত্যাগ করে বলি রাজ্যে বসবাস করতে। দিন যায় মাস যায় । বিষ্ণুর স্বর্গে ফেরার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। ওদিকে স্বর্গের খানা পিনা নাচা গানার জন্য দেবীর মন উসখুস। কেবলি হাই ওঠে আর হাই ওঠে। শেষে ঠাকরুণ এক বুদ্ধি ভাঁজলেন। শ্রাবণী পূর্ণিমার উৎসব চলছে। এখনকার স্কুল কলেজের রাখি বন্ধন উৎসবের মতো এ ওর হাতে রাখি বাঁধছে। কেবল বাঁধছে না, সময় নিয়ে বাঁধছে । যতক্ষণ ছুঁয়ে থাকা যায় এই আর কী ! এই ফাঁকে মা লক্ষ্মী সম্পূর্ণ অন্য রকম হেয়ার স্টাইল দিয়ে সাজুগুজূ করে দিলেন বলির হাতে রাখি পরিয়ে! ব্যস বোন হয়ে গেলেন মা লক্ষ্মী। বোনের অধিকারে বিষ্ণুকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন স্বর্গে। রাখি বেঁধে বোন হওয়া বোনের জন্য দৈত্যরাজ বলি সব হারালেন।
•কাহিনী-৩
গণেশ ভক্ত ব্যবসাদারদের অনেকেই দোকানের দরজার উপরে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে এর একপাশে শুভ অন্য পাশে লাভ লিখেন। আসলে ছেলেদের ভালোবেসে বাপের নেক নজরে পড়া। আজ্ঞে হ্যাঁ। গণেশ পুত্র শুভ এবং লাভ। হয়েছে কী, সে দিন শ্রাবণী পূর্ণিমা। ভাই ফোঁটা ইদানিং ভাইরা নিতে যায় না বোনেদের দিতে আসার মতো লক্ষ্মী সরস্বতী এসেছে রাখি বাঁধতে ভায়ের বাড়ি। পিসিমণিরা বাপের হাতে রাখি পরাচ্ছে দেখে দু ভাই শুভ আর লাভ কেঁদে কেটে একসা। ‘আমরা পরবো। আমরা পরবো ‘ বলে সেকি হেঁচকি পেড়ে পেড়ে কান্না। দেবতা হলেও বাবা তো! কান্না দেখে গণেশ ঠাকুর ঠিক থাকতে পারলেন না। সামনে ছিল হোম কুণ্ড। কী একটা মন্ত্র বলে দিলেন এক কুশি ঘি হোমের আগুনে ঢেল। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল হোমাগ্নি। জন্ম নিলেন মা সন্তোষী। সঙ্গে সঙ্গে রাখি বেঁধে দিলেন দুই দাদার হাতে। কান্না থামল তবে।
ইতিহাস মিশ্রিত কিংবদন্তি
•কিংবদন্তি-১
গ্রীস দেশের ম্যাসিডনের রাজা দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারত জয়ের অভিলাষে ভারতে আসেন। আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা অনুচর মারফত রাজা পুরুর কাছে শ্রাবণী পূর্ণিমার দিন রাখি পাঠিয়েছিলেন। তাই যুদ্ধ ক্ষেত্রে পুরু আলেকজান্ডারকে কোন রূপ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আঘাত করেননি।
•কিংবদন্তি-১
১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দ। চিতোরের রানি কর্ণবতী গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হুমায়ূনকে একটি রাখি পাঠিয়েছিলেন। সম্রাট হুমায়ূন সসৈন্যে চিতোরে পৌঁছানোর আগেই বাহাদুর শাহ চিতোর দখল করে নেন। কর্ণবতী ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মার্চ তেরশো পুরস্ত্রী সহ জহরব্রত পালন করে আত্মাহুতি দেন। হুমায়ূন বাহাদুর শাহ কে পরাজিত করে চিতোর রাণাকে ফিরিয়ে দেন।
ঐতিহাসিক রাখি বন্ধন 
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে গোটা বাংলা উত্তাল। ১৭ই সেপ্টেম্বর সাবিত্রী লাইব্রেরির স্বধর্ম সমিতির বিশেষ অধিবেশনে সভাপতির পদ অলংকৃত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন সারা বাংলায় অরন্ধন পালন করা হবে এবং হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়া হবে। বিডনস্কয়ারে মূল অনুষ্ঠান হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ এতে অংশগ্রহণ করেন। পৌষ মেলা, বসন্তোৎসব ,হলকর্ষণ এর মতো রাখি বন্ধনকে ধর্মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে কবি সামাজিক উৎসবে পরিণত করেন। রাখি বাঁধতে যে মন্ত্র পড়া হয়:
যেন বদ্ধো বলিরাজা দানবেন্দ্র মহাসুরঃ।
তেন তাং প্রতিবদ্ধামি রক্ষো মা চলমাচল।
রাখি বন্ধন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করবো।
“তোমার হাতের রাখীখানি বাঁধো আমার দখিন হাতে।
সূর্য যেমন ধরার করে আলোকরাখী জড়ায় প্রাতে।”
লেখক পরিচিতি: উমাশঙ্কর নিয়োগী বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চাঁদপুর গ্রামে।  তিনি গবেষণা ধর্মী ও সাহিত্য বিষয়ক প্রতিবেদন লিখতে বেশি পছন্দ করেন। এক সময় তিনি  দাসপুর-১ ব্লকের নন্দনপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এখন তিনি অবসরগ্রহণ করেছেন। তাঁর মোবাইল নম্বর: ৯৪৭৪৪৪৯০৯৯

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন[লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]

নিউজ ডেস্ক

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: [email protected] •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now