কুণাল সিংহরায়: খড়ার শহরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. উত্তম মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভা হল। খড়ার শহরের পুরসভার সামনে ‘উত্তম মুখোপাধ্যায় স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র উদ্যোগে আজ ১০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। খড়ার পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য তথা খড়ার পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অরূপ রায় জানান, আজকের এই আলোচনা সভায় খড়ার শহরে উত্তমবাবুর গুণমুগ্ধ মানুষ উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতিকৃতির সামনে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। তাঁকে নিয়ে অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন।
১৪ ডিসেম্বর রাত দুটো কুড়ি নাগাদ কলকাতার পারিবারিক ফ্ল্যাটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। উত্তমবাবু পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেই সঙ্গে খড়ার পৌরসভায় দীর্ঘদিন তিনি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। উত্তমবাবু দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। গত ১০ অক্টোবর তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর চিকিৎসার জন্য তিনি চলে যান কলকাতার পারিবারিক ফ্ল্যাটে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি করোনামুক্তও হন। প্রস্তুতি নেন খড়ারে নিজ বাসভূমিতে ফেরার।তারই মাঝে আসে এই দুঃসংবাদ। তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী বনানী মুখোপাধ্যায়,দুই পুত্র অরুণাভ মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য পরিজনদের। বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র উত্তমবাবু ওই বিদ্যালয়েই সহশিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন ১৯৮৩ সালে এবং প্রধান শিক্ষক হন ১৯৯৯ সালে। তার আগে কর্মরত ছিলেন এগরার শীপুর কেশবেশ্বর হাইস্কুলে। বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে।তিনি ছিলেন সুবক্তা, সুঅভিনেতা এবং আবৃত্তিকার। ইংরেজিতে তাঁর আবৃত্তি ছিল মনকাড়া। তাঁর লেখা পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজি গ্রামার ‘এ ফ্লাস অন ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড স্কিল’ একসময় খুবই প্রশংসিত হয়। এহেন শিক্ষক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারে ভূষিত হন ২০১৫ সালে। তাঁর আমলেই ২০১৩ সালে বিদ্যালয় পরপর শিশুমিত্র ও নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার লাভ করে। বিদ্যালয়ের পুরানো মাটির বাড়ি ভেঙে পাকাবাড়ি, খেলার মাঠের সংস্কার এবং সাংস্কৃতিক মঞ্চের সূচনা তিনিই করে যান।ভীষণ প্রিয় শিক্ষকের মরদেহ যখন ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যালয় চত্ত্বরে শায়িত তখন উপস্থিত সকলের চোখই ছিল জলে ভেজা।
খড়ারের আনন্দময়ী সিনেমা হলের কর্ণধার হরগোবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন উত্তমবাবু।
১৯৭১ সালে উত্তমবাবুর বাবা সিনেমা হলেই আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারা যান। আট ভাই, দু’বোনের মধ্যে উত্তমবাবু ছিলেন পঞ্চম। ইংরেজিতে এম.এ, বি.এড করার পরে তিনি ‘বাংলার লৌকিক দেবদেবী’-র ওপর পিএইচ.ডি. করেন ও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
উত্তমবাবুর রাজনৈতিক জীবনও চমকপ্রদ। ১৯৮৬ সালে তিনি পৌরনির্বাচনে ইন্দিরা কংগ্রেসের হয়ে খড়ারের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডাকসাইটে সিপিএম নেতা তথা তখনকার চেয়ারম্যান প্রাণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১০ সালে তৃণমুল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়ে বোর্ড গঠন করেন এবং চেয়ারম্যান হন। ২০২০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান থাকাকালীন খড়ারে রাস্তাঘাট, পথবাতির ব্যাপক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়। উত্তমবাবুর সহকর্মী শিক্ষক শ্যামাপদ ভট্টাচার্য, অদ্যুত মণ্ডল এবং প্রথিতযশা চিকিৎসক ডাঃ মনোরঞ্জন কর্মকার বলেন, উত্তমবাবুকে খড়ারবাসী চিরদিন মনে রাখবে তাঁর একক কৃতিত্বে সরকারি অনুদান আদায় করে খড়ার বারোয়ারি তলার মন্দির ও আটচালা নির্মাণ এবং বিবেকানন্দ বাস টার্মিনাস নির্মাণের জন্য। •ছবিগুলি পাঠিয়েছেন মৌমিতা দাঁ