শ্রীকান্ত ভুঁইয়া, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: গত ১৬ নভেম্বর বুধবার শালবনীর মুড়িগেড়্যা জঙ্গল থেকে দাসপুরের গৃহবধূর অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিল ওই গৃহবধূকে খুন করে তাঁর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই খুনের অভিযোগে পুলিশ সোমবার চন্দ্রকোণা রোডের ডুকি থেকে বাপন শিকারী নামের বছর ৩০ এর এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। মৃত গৃহবধূর নাম সুনীতা মান্না(২৮)।
কিন্তু কেন খুন করতে হল ওই গৃহবধূকে? গৃহবধূর সঙ্গে ওই যুবকের যদি প্রেম ছিল তাহলে কেনই বা তাকে খুন করলেন যুবক? নাকি অন্য রহস্য?
পুলিশের জেরার মুখে ওই যুবক খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছে, কয়েকমাস আগে সুনীতার সঙ্গে পরিচয় হয় যুবকের। তারপর তারা একাধিকবার ঘনিষ্ঠও হয়েছে। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে সুনীতা। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও করে রাখেন ওই গৃহবধূ। শুরু হয় ব্ল্যাকমেল। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতে থাকেন ওই যুবকের কাছে। যুবক জানাচ্ছে, দু’বার সুনীতাকে টাকাও দিয়েছে সে। তবুও সুনীতা ভিডিও ডিলিট করেনি। কিন্তু শেষবার মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসায় তা দিতে পারেনি বাপন। ১৩ নভেম্বর টাকা দেওয়ার নাম করে মুড়িগেড়্যা জঙ্গলে ডাকে ওই গৃহবধূকে। ভিডিও ডিলিট করার শেষ চেষ্টা করে। কিছুতেই কোনও কাজ না হওয়ায় শেষমেশ সুনীতাকে খুন করে যুবক। যাতে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য নিজের বাইকের পেট্রোল দিয়ে তার মুখ জ্বালিয়ে দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঝাড়গ্ৰামের নয়াগ্ৰামে জেসিবি মেশিন অপারেটরের কাজ করে যুবকটি। খুবই শান্ত স্বভাবের যুবক এবং বিবাহিত। কোনও কারণে সুনীতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল যুবকটি।
মেয়ের খুনি ধরা পড়েছে শুনে গৃহবধূর বাবা লক্ষ্মণ মান্না বলেন, আমার মেয়ের দোষীর শাস্তি হোক এটাই চাই। কারণ এই ঘটনা আজ আমার মেয়ের সঙ্গে হয়েছে কাল অন্য কারও মেয়ের সঙ্গে হবে। ভুল যারই থাক, তা বলে তাকে মেরে ফেলবে। মেয়ের চিন্তায় আমাদের পরিবারের খাওয়া-দাওয়া নেই, ঘুম ছুটেছে। মেয়ের মায়ের এমন অবস্থা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে হয়তো। তাই আমাদের মেয়েকে যে মেরেছে তার কঠোরতম শাস্তি চাই আমরা।
উল্লেখ্য, পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বছর দশেক আগে সুনীতাদেবীর সঙ্গে দাসপুর থানার নিশ্চিন্তপুর বারাসতের এক যুবকের বিয়ে হয়। একটি বাচ্চাও রয়েছে। বছর ছয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর ঘর ছেড়ে গয়লাখালিতে বাপের বাড়ি চলে যান। সেখানেই স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। গত ১১ নভেম্বর সকালে সুনীতাদেবী হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। দাসপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ১৭ নভেম্বর সুনীতাদেবীর বাবা থানায় একটি মিসিং ডায়েরিও করেন। এরপরই গত বুধবার ১৬ নভেম্বর শালবনী থানার মুড়িগেড়্যার জঙ্গলের ভিতর থেকে ওই গৃহবধূর অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। ২৫ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মর্গে ওই মহিলার দেহ শনাক্ত করেন তাঁর বাবা।