মন্দিরা মাজি, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: শীতকাল মানেই আমাদের ঘাটাল মহকুমায় মেলা আর মেলা। ডিসেম্বর থেকে শুরু করে পরপর মেলা চলতেই থাকে। সেটা একদিনের হোক বা ১০ দিনের। এই কয়েকটা মাস মহকুমাবাসী যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠেন। বিকি-কিনি, নানান প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে যেন জমে ওঠে শীতকালটা। শিশু থেকে বয়স্ক সবাই অপেক্ষায় থাকেন শীতকালীন এই মেলাগুলির জন্য। বয়সের তোয়াক্কা না করেই মেলার কয়েকটা দিন অনেকেই ভিড়
জমান। সেইসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, নানা রকম জিনিসের স্টল, পোশাকের দোকান, নাগরদোলা আর বাচ্চাদের খেলনা তো থাকেই।
মহকুমায় ঠিক কতগুলি মেলা হচ্ছে তার পরিসংখ্যান রাখার পদ্ধতি প্রশাসনিক ভাবে নেই। তাই এই মহকুমার ৪৮টি গ্রামপঞ্চায়েত এবং পাঁচটি পুরসভার মধ্যে কোথায় কবে মেলা হচ্ছে সেটা আমাদের পক্ষেও জানা সম্ভব নয়। নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ২২টি মেলা কমিটি ‘স্থানীয় সংবাদ’-এর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের তালিকাটি আমরা এখানে তুলে ধরেছি। এর বাইরেও কোনও মেলা যদি বাদ থেকে যায় আমাদের দপ্তরে(৯৯৩৩৯৯৮১৭৭) জানাতে
পারেন। পরবর্তী কালে কোনও খবর হলে সেই মেলার দিনক্ষণ যোগ করে দেওয়া যেতে পারে।
১২ ডিসেম্বর থেকে দাসপুর গঞ্জে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ঘাটাল মহকুমার প্রথম মেলাটি। মেলাটি ‘দাসপুর সবুজ উৎসব’ নামেই পরিচিত। ২০ তারিখ পর্যন্ত মেলাটি থাকবে। এর কয়েকদিন পর থেকেই দাসপুর-২ ব্লকের সোনাখালিতে শুরু হয়ে যাবে সবুজ সাথী উৎসব। ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত চলবে সবুজ সাথী উৎসব। ২৪ তারিখেই দাসপুর-১ ব্লকের হাট সরবেড়িয়াতে বি.বা.দী উৎসব ও বিবেক গ্ৰামীণ মেলা শুরু হবে। জগন্নাথবাটি বিনয়-বাদল-দীনেশ ক্লাবের উদ্যোগে ওই ক্লাবেরই ফুটবল ময়দানে মেলাটির আয়োজন করা হবে। ওই মেলাটিও চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২৫ ডিসেম্বর থেকে দাসপুর-২ ব্লকের খুকুড়দহতে শুরু হবে গ্রামীণ ও কৃষি মেলা। যা চলবে
৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। ২৫ ডিসেম্বরেই ঘাটাল ব্লকের রাধানগর শালিকাতে শুরু হবে আট দিনের ক্ষুদিরাম মেলা।
দাসপুর-২ ব্লকের নবীন মানুয়াতেও ২৫ তারিখে গ্ৰামীণ ও বিজ্ঞান মেলা শুরু হচ্ছে। অন্যান্য বছর মেলাটি চারদিনের জন্য করা হয়। কিন্তু এবারে কোভিড পরিস্থিতির জন্য শুধুমাত্র একদিনের জন্যই মেলাটির আয়োজন করা হয়েছে। ওই মেলাগুলি শেষ হওয়ার তিনদিন পর তথা ৪ জানুয়ারি থেকে মহকুমার তিনটি ভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে যাবে আরও তিনটি মেলা। ৪ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি ঘাটালের বীরসিংহে শুরু হবে বিদ্যাসাগর মেলা। ৪ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি চাঁইপাট মেলা এবং ৪ জানুয়ারি থেকে চন্দ্রকোণার জাড়াতে শুরু হবে পাঁচ দিনের লোকসংস্কৃতি মেলা। এরপর ৬ জানুয়ারি থেকে তিনদিন ধরে ঘাটালে চলবে ‘ঘাটাল পত্র ও পুষ্প প্রদর্শনী’। মেলাটি হবে ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়ামের দক্ষিণে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রসন্নকুমার সরকার স্মৃতি মহিলা ও শিশু উদ্যানে।
ঘাটালের বিদ্যাসাগর স্কুলের খেলার মাঠে এবারের জেলা বই মেলাটির আয়োজন করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি থেকে মেলাটি শুরু হয়ে চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরই মাঝে অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি ঘাটাল শহরের শিলাবতী নদীবক্ষে এক দিনের জন্য বসবে মকর সংক্রান্তির মেলা। বই মেলা যেদিন শেষ হচ্ছে তার পরের দিন অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যাবে ‘ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা’। যে মেলাটির জন্য শুধু ঘাটালের মানুষ নয়, সারা মহকুমার মানুষ অপেক্ষায় থাকেন। ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়ামে আয়োজিত ওই মেলাটি এই নিয়ে ৩৩তম বর্ষে পদার্পণ করবে। ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও ২৫ তারিখের পরও কিছুদিন থাকে মেলাটি। অনুষ্ঠান না চললেও বেশ কিছু দোকান থেকে যায় কয়েকদিন পর্যন্ত। এর মাঝে চন্দ্রকোণার কালিকাপুরে ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে নেতাজি সুভাষ মেলা। চন্দ্রকোণার ওই মেলাটি যেদিন শেষ হবে সেই ২৯ জানুয়ারি থেকেই ঘাটালে মারিচ্যা মিলন মেলা শুরু হচ্ছে। মেলাটি চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চন্দ্রকোণার মহাবালাতে ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে চার দিনের পল্লি সংস্কৃতি উৎসব। দাসপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের নেতা অজিত ভুঁইয়ার স্মৃতিতে দাসপুর-১ ব্লকের নাড়াজোলে এবারেও ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে একটি মেলা। চলবে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর আসে সরস্বতীপুজো। সেই উপলক্ষেও দাসপুর-১ ব্লকের কোটালপুরে, ঘাটাল ব্লকের রঘুনাথপুর এবং কামারগেড়িয়ায় একটি করে মেলা হবে। প্রত্যেটি মেলাই সাত দিন করে চলবে। এছাড়াও ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে দাসপুর-১ ব্লকের চাঁদপুরে শুরু হবে ভীম একাদশীর মেলা। যা চলবে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১ মার্চ থেকে ১০ দিন ব্যাপী দাসপুর-১ ব্লকে বেলতলায় শিবদুর্গা পুজো উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।