সৌমেন মিশ্র, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: দাসপুর ২ ব্লকের চাঁইপাট পাশে নৈহাটি গ্রাম। গ্রামের তেঁতুলতলা বাজারের ডান দিকে কিছুটা গেলেই সুন্দর এক পাকা বাড়ি। সৌখিন এই বাড়ির সিঁড়ি থেকে মেঝে পর্যন্ত আভিজাত্যের ছোঁয়া। বাড়ির কাজ এখনও বাকি, তবে এই মার্বেলের মেঝেতেই বাড়ির গৃহবধূ বসে ফুচকা বেলছেন। মায়ের পাশে ছোট্ট শিশুটি মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। কথা বলছি এই বাড়ির গৃহবধূ সঞ্চিতার। স্বামী ভিন রাজ্যে কম্পিউটারের মাধ্যমে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। যথেষ্ট ভালো আয়। তবুও সঞ্চিতা নিজে হাতে ফুচকা তৈরি করে বাড়ির সামনে তেঁতুলতলা বাজারের কাছের এক বাঁক মোড়ে রোজ বিকেলে ফুচকার দোকান দেন। নিজে বাজার থেকে সাইকেলে করে ফুচকার মশলার জন্য আলুর বস্তা আনেন। সকাল থেকে সংসারের কাজ সামলে আটা সুজি মেখে তা দলে লেচি পাকিয়ে বেলে কড়াইয়ে গরম তেলে ভেজে এই ফুচকা ব্যবসা তিনি চালাচ্ছেন। সঞ্চিতা জানাচ্ছেন, দিনে প্রায় ৫ থেকে ৭ শত ফুচকা বিক্রি হয়। পাশের গ্রামের এক বাড়িতে ছেলের জন্মদিনের পার্টি, সেখানে ২ হাজার ফুচকার অর্ডার আছে। আজ সেই কাজ সামলাতে রান্না বান্না সেরে সঞ্চিতা ফুচকা তৈরিতে ব্যস্ত। যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সঞ্চিতা, তাই তাঁর ফুচকার নাম ডাকও বেশ হয়েছে। ৮ বছর হবে সঞ্চিতার বিয়ে হয়েছে। স্বামী ভিন রাজ্যে কাজে। বাড়িতে একাই থাকতেন এই গৃহবধূ। এই বাড়ি বা বাপের বাড়িতে ফুচকার ব্যবসা ছিল না। বাড়িতে একা বসে সময় নষ্ট না করে কিছু একটা করতে হবে, এই ভাবনার মাঝে হঠাৎ সঞ্চিতার মাথায় আসে এই ফুচকার কথা। মাধ্যমিক পাশ সঞ্চিতা। বছর কয়েক ধরে এই ফুচকা বানাচ্ছেন। গৃহবধূ সঞ্চিতা আজ স্বনির্ভর। নিজের ইচ্ছে মতন খরচ করতে পারেন। নিজের বা সন্তানের দৈনন্দিন খরচগুলো নিজেই সামলে নেন। এই কাজ একদিকে যেমন সঞ্চিতাকে স্বনির্ভর করে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, অন্যদিকে ভিন রাজ্যে থাকা স্বামীরও সংসারের খরচ সামলানো যথেষ্ট সহজ করেছে। কোনো কাজ যে ছোটো নয়, তা যেমন সঞ্চিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, তেমনই আপনাদেরকেও বলছেন, মোবাইল টিভিতে ফালতু সময় নষ্ট না করে কিছু করতে, যা আপনাদেরকে স্বনির্ভর করবে, কিছুটা হলেও লাঘব হবে গৃহকর্তার চাপ।
একা কেন বসে সময় নষ্ট করবেন? দাসপুরের সঞ্চিতা কী করেছেন দেখুন
By সৌমেন মিশ্র
Published on: December 7, 2025 । 4:58 PM









