বিশেষ সংবাদদাতা: মা নেই, দু’দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবার মাঝ বয়সে প্রেমে মাতামাতি সহ্য [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] হচ্ছিল না ঘাটাল থানার ঢেঁকির ঘাটের রোহিত খাঁড়ার। বাবাকে বার বার বলেও কোনও লাভ হয়নি। তাই রাগের বশেই বাবার প্রেমিকার সন্তানকে একা পেয়ে একের পর এক ছুরির কোপ মেরেছিল রোহিত। ২৪ ফেব্রুয়ারি পান্না গ্রামের এক কিশোরকে এলোপাথাড়ি
ছুরির কোপের ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পুলিশের জেরার মুখে এমনটাই স্বীকারোক্তি দিয়েছে বছর সতেরোর ওই অভিযুক্ত বালক রোহিত।
রোহিতের বয়স যখন সবে ১০ বছর পেরিয়েছে তখন তার মা পক্ষাঘাতে মারা যায়। তারপর থেকেই রোহিতের বাবা ১০০ দিনের কাজ করতে গিয়ে পান্না গ্রামের এক বিধবা মহিলার প্রেমে পড়েন। রোহিতের ভাষায়, ওই মহিলার সঙ্গে রোহিতের বাবার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাওয়ার পর সংসারের
প্রতি কোনও টান ছিল না বাবার। দিদিদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে রোহিত ও তার বাবা থাকতেন। কিন্তু রোহিতের দিকে কোনও খেয়াল রাখতেন না তার বাবা। যা কিছু ধ্যানজ্ঞান ছিল সব ওই বিধবার উপর। এমনকি যা আয় করতেন সবই ওই বিধবার হাতে তুলে দিতেন। পুলিশকে জেরার মুখে রোহিত জানিয়েছে, শুধু তাই নয়। বিধবার ছেলে(যাকে ২৪ তারিখে রোহিত ছুরি দিয়ে কুপিয়েছে) রোহিতের বাবাকে বাবা বলেও ডাকত। রোহিতের বাবা রোহিতকে বাড়িতে একা রেখে দিয়ে রাতের পর রাত বিধবার বাড়িতে কাটাতেন।
ধারাবাহিক ভাবে ওই ঘটনা সহ্য করতে না পেরেই বিধবার ছেলেকে একা পেয়ে সাময়িক প্রতিশোধ নিতেই ওই দিন ছুরি দিয়ে কয়েকটি কোপ মেরেছিল রোহিত। রোহিত পুলিশকে বলে, আমি খুন করতে চাইনি। কিন্তু নিজের হতাশা, মায়ের প্রতি বাবার অবিচার, এই বয়সে বাবার প্রেম মেনে নিতে না পারার জন্যই রাগের বশে ওই কাজ করেছি।
যেহেতু আইনের ভাষায় ঘটনাটি ‘খুনের চেষ্টা’। তাই পুলিশ ওই দিন রোহিতকে গ্রেপ্তার করে। প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ার কারণে মেদিনীপুর হোমে রেখে তার বিচার চলছে। পান্না ও ঢেঁকিরঘাট গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, রোহিত যা করেছে তা আইনের চোখে অপরাধ। কিন্তু ওর বাবা এই বয়েসে যা করছে, যেভাবে রোহিতের উপর মানসিক অত্যাচার করেছে সেই পরিস্থিতি বিচার করে আমরা সবাই মানসিক ভাবে রোহিতের পাশে আছি। বরং কোনও ভাবে যদি রোহিতের বাবার শাস্তি হত তাহলে খুশি হতাম।
পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, রোহিত ভুল কিছু বলছে না। বিধবার ছেলেকে ছুরি দিয়ে মারার পর পুলিশ রোহিত এবং তার বাবাকে থানায় আটক করে নিয়ে যায়। সেই সময় আক্রান্ত কিশোর তথা বিধবার ছেলে বার বার পুলিশকে অনুরোধ করে তার বাবাকে(মায়ের প্রেমিককে আক্রান্ত কিশোর বাবা বলে ডাকে) ছেড়ে দেওয়ার জন্য, বাবার কোনও দোষ নেই।