সৌমেন মিশ্র, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: পাশাপাশি দুই জায়ের চিতা সাজানো, তৈরি করা হয়েছে দুই জায়ের গর্ভের ৪ ও ৭ মাসের অপরিণত শিশুদের সমাধি দেওয়ার জন্য জায়গা। আজ ৬ জুলাই বিকেল ঠিক সাড়ে ৪টা গ্রামের দুই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর নিথর দেহ এসে পৌঁছাল দাসপুর থানার রাজনগর গ্রামে। সারা গ্রামে যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কয়েক হাজার গ্রামবাসীর কান্নার রোল। ওদিকে আকাশেরও মুখ ভার। দাসপুর বিডিও,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি একে একে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি রাও মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন।
তবুও তাদের স্বামীরা যেন কান্নার মাঝে চোখ খুলে খুশি আর নিরঞ্জনা তাদের স্ত্রীদের খুঁজে চলেছেন সবার মাঝে। মাত্র কয়েক বছরের বিয়ে দুই জায়ের গর্ভে সবেমাত্র এসেছিল প্রথম সন্তান। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা,সোমবারের দুপুরে পাশের বাড়ির দেওয়াল এসে পড়ল আর তাতেই সব শেষ! এযাবৎ কালে ঘাটাল মহকুমায় এর চেয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু বোধহয় হয়নি। গর্ভের দুই সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বাবা মাকে দেখার আগেই মায়ের কোলে ঘুমের ঘোরেই মাকে নিয়েই চলে গেল।
গতকাল সোমবার দাসপুর থানার রাজনগরে দোলই পাড়ার শম্ভুনাথ দোলই ও সুদর্শন দোলই দুই ভাইয়ের স্ত্রী খুশি ও নিরাঞ্জনা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিজেদের রান্না ঘরে অন্যান্য দিনের মতোই দুপুরে ভাত খাচ্ছিলেন। ওই সময়ই প্রতিবেশী রঞ্জিত ও অজিত দোলইদের মাটির দোতলা বারান্দা বাড়ির দেওয়াল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই রান্না ঘরের উপর। সেই দেওয়ালে চাপা পড়লেন পরিবারের প্রায় ৬ সদস্য। চার সদস্য কোনও রকমে বেরিয়ে যেতে পারলেও অন্তঃসত্ত্বা দুই গৃহবধূ প্রকাণ্ড মাটির চাঁইয়ের নীচেই রয়ে গিয়েছিলেন। স্থানীয়রাব জানান, বহু চেষ্টা করেও ১৫-২০ মিনিট ধরে তাঁদের বার করা সম্ভব হয়নি। যখন বার করা হয় তখন তাঁদের নিথর দেহ। কোনও রকম কাল বিলম্ব না করেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা নিরঞ্জনা ও খুশিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।প্রতিবেশীদের থেকে জানা যায় শম্ভু
কাঠের কাজ করেন আর তাঁর ভাই সুদর্শন সোনার কাজ করেন। তাঁদের পাড়া থেকে সামান্য দূরে নতুন পাকার বাড়ি রয়েছে। কিন্তু পুরানো বাড়ির স্থলে একটি ছিটেবেড়ার রান্না চালা ছিল ওখানে শুধুমাত্র রান্না ও খাওয়া হতো। আর গতকাল সেই চালায়তেই পাশের বাড়ির দেওয়াল পড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আজ মঙ্গলবার মেদিনীপুরের দুই জা এর দেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ময়না তদন্তের নিয়ম অনুযায়ী দুই প্রসূতির দেহ বার করা হয় গর্ভজাত অপরিণত সন্তানদের। আজ বিকেলে দাসপুরের রাজনগরে মৃত দুই মায়ের কোলে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই সব শেষ হয়ে যাওয়া সন্তানগুলি এসে পৌঁছায় গ্রামে। রাজনগর ও তার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের ঢল নেমে আসে দোলই পাড়ায়। চোখের জল থেমে থাকেনি উপস্থিত আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় দুই জায়ের নিথর দেহ ও তাদের শিশুদের দেখে চোখের জলে ভাসছে সারা রাজনগর। ব্যুরো