অসীম বেরা ও বাবলু সাঁতরা, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: এমনই করুণ ছবি ধরা পড়লো চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বছর ৪৫ এর ছবি পূজারী। একচিলতে ভাঙ্গাচোরা মাটির বাড়িতে বসবাস একমাত্র ছেলে বছর ২৭ এর প্রশান্ত পূজারীকে নিয়ে।জমি জায়গা চাষাবাদ কিছুই নেই একমাত্র উপার্জনের পথ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে দিনযাপন। ছবিদেবীর স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই,বর্তমানে মা ও ছেলে ভাঙ্গাচোরা মাটির বাড়িতে কোনওক্রমে দিন কাটান।ছেলে প্রশান্তর ছোট থেকেই মানসিক সমস্যায় ছিল,বিগত ১০ বছর ধরে সঠিক চিকিৎসার অভাবে এখন ছেলে সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন।একদিকে ছেলের এমন অবস্থা তার উপর পেট চালানোর কোনও পোক্ত সংস্থান নেই।তাই ১০ বছর ধরে বাড়ির উঠানে ছেলে প্রশান্তকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে তালাচাবি দিয়ে ভিক্ষে করতে চলে যান মা ছবি পূজারী। সকালে ছেলের খাওয়া-দাওয়া সেরে তাঁকে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করতে বেরিয়ে পড়েন মা। আর বাড়ির উঠানে দিনভর শিকল বাঁধা অবস্থায় থাকে ছেলে প্রশান্ত। শৌচকর্ম থেকে যাবতীয় কাজ উঠানেই। ভিক্ষে সেরে বাড়ি ফিরে তবেই ছেলের দিকে নজর দেওয়ার সময় পান অসহায় মা ছবি পূজারী। ছবিদেবী ও তাঁর প্রতিবেশীদের কথায়,মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় প্রশান্তর ধারে কাছে কেউ যাননা। আর সরকারি সাহায্য বলতে রেশনটুকু। ভগ্নপ্রায় বাড়িতে এভাবেই দিন কাটছে মা-ছেলের। রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসন সবার দ্বারে ঘুরেও ছেলের চিকিৎসায় সরকারি সহযোগিতার কোনও আশ্বাস মিলেনি বলে অভিযোগ। এখন ভিক্ষার উপার্জন থেকে ছেলের চিকিৎসার ওষুধ থেকে খাবার সবই জোগাড় করতে হয় মা ছবি পূজারীকে। মাথার উপর ভাঙাচোরা একচিলতে বাড়ি তার উপর ছেলের এমন অবস্থা এ বয়সেও অদম্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্বামী হারা মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের মা ছবি পূজারী।কষ্ট হলেও এভাবেই শিকলবন্দী করে রাখতে হয় ছেলেকে কারণ কখন কোথায় চলে যাবে বা গ্রামেই কারও সাথে যদি কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলে এই দুঃশ্চিন্তায় তাড়া করে মা ছবি পূজারীকে।সরকারি আর্থিক সাহায্য মিললে এখনও ছেলে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতে পারে এমনই আশায় রয়েছে ভিক্ষুক মা ছবিদেবী।দীর্ঘ ১০ বছর শিকলবন্দী বাড়িতে পড়ে ছেলে এবং সহায়সম্বলহীন মা ভিক্ষে করে ছেলের ও নিজের দিন গুজরান করছে আর এই ঘটনা নিয়ে নির্বাক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন উঠছে প্রশ্ন। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম প্রশান্তের বাড়ি পৌঁছে যেতেই টনক নড়েছে প্রশাসনের। জানা যাচ্ছে প্রশান্তের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ ১০ বছর পর তার শিকল খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চন্দ্রকোনা হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হবে। দেরি হলেও ছেলে সুস্থ হবে এখন আশায় বুক বাঁছেন ভিক্ষুক মা।
১০ বছর ধরে খুঁটিতে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে,বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করে ছেলের চিকিৎসায় মা





