নিজস্ব সংবাদদাতা, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: সালিশি সভায় চরম অপমান থেকেই আত্মঘাতী দাসপুরের শৌলান গ্রামের সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] করা তরুণী মণিদীপা মণ্ডল। আত্মহত্যায় তরুণীকে প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার কাকিমা বছর ২৯ এর ঝুমা মণ্ডল। আজ শনিবার তাকে ঘাটাল আদালতে তোলা হলে ২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় ঝুমাদেবীর। কাকিমার দেওয়া মিথ্যা বদনামের জেরে ধস্তাধস্তি, তারপর বসেছিল সালিশি সভা। সেই সালিশি সভা শেষে নিঁখোজ হয় তরুণী। পরের দিন অর্থাৎ ৩০ জুন সকালে তরুণীর ঝুলন্ত দেহ দেখা যায় পাশের গ্রামের মাঠের মাঝখানে রাস্তার ধারের গাছ থেকে। ঘটনা দাসপুর থানার শৌলান গ্রামের। ওই গ্রামের অমল মণ্ডলের বছর আঠারোর মেয়ে মণিদীপা এই বছর হাটসরবেড়িয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। অমলবাবু জানান, পরবর্তী পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ২৭ জুন সন্ধ্যায় এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় মণিদীপার কাকিমা ঝুমা মণ্ডল বন্ধুর সঙ্গে প্রেমের বদনাম দিয়ে নানান অকথা-কুকথা বলে গালাগালি শুরু করে। মিনিট পাঁচেক পর বন্ধু চলে যায়। কিন্তু কাকিমা বন্ধুর সঙ্গে প্রেমের বদনাম দিয়ে গালাগালি চালাতেই থাকে। মণিদীপা প্রতিবাদ জানালে কাকিমার গলার পারদ বাড়তে থাকে। বিষয়টি ঠেলাঠেলি ধস্তাধস্তির পর্যায়ে চলে যায়। পরের দিন অচেনা কয়েকজন লোকজন এনে মণিদীপাকে হুমকি দেওয়ায় তার কাকিমা। ২৯ জুন রাত ৮ টা নাগাদ মণিদীপা ও তার মাকে সালিশি সভায় জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় তৃণমূল পার্টি অফিসে সালিশি সভা বসে। সালিশি সভায় কাকিমা ঝুমা মণ্ডলের গালাগালির বিচার হয়নি, উল্টে মোড়লরা মণিদীপাকে বাধ্য করে ঝুমা মণ্ডলের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে। মণিদীপার চোখের জল, কথা কোনকিছুই গুরুত্ব না দিয়ে একতরফা সালিশি সভা শেষ হয়। সালিশি সভা শেষে মণিদীপা মাকে বারবার বলছিল, কেন তার প্রতি মিথ্যা বদনামের বিচার হল না। কেন মিথ্যা প্রেমের অপবাদ তাকে বয়ে বেড়াতে হবে। এরপর হঠাৎ করে মেয়েকে আর দেখতে পাননি মা। সারারাত খোঁজ করেও খোঁজ মেলেনি। ভোরের আলো ফুটলে ৩০ জুন পাশের গ্রাম তথা সেকেন্দারি বাজার থেকে জয়কৃষ্ণপুর যাবার মাঠের রাস্তার মাঝে গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় মণিদীপার নিথর দেহ। সালিশি সভার একপেশে বিচারের পর মেয়েকে হারিয়ে বিচার চান অমলবাবু। কাকিমা ঝুমা মণ্ডল সহ সালিশি সভার উপস্থিত সকলের বিরুদ্ধে দাসপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী জানান, অভিযোগ পেয়েই ঝুমা মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে দাসপুর পুলিশ। আজ ঘাটাল আদালত তার ২ দিনের পুলিশ হেফাজত দেয়।
সালিশি সভার একপ্রকার বিরোধিতা করে হাটসরবেড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক। এই বিদ্যালয়েই মণিদীপার পড়াশুনা।
দ্রুত গতিতে যুগের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরাও এগিয়ে চলেছি। কিন্তু আজকের দিনেও কেন বসবে মধ্যযুগীয় সালিশি সভা? কেন দাপট থাকবে মোড়লপনার? সন্তান যদি বিগড়ে যায় তাকে শাসন করার জন্য তার বাবা মা আছে, কাকিমা গালাগালি দেবার কে? আর সেদিনের সেই সালিশি সভার মোড়লদের ক্ষমতা আছে তো সন্তান হারা মায়ের কোলে সন্তানকে ফিরিয়ে দেবার?মধ্যযুগীয় সালিশি সভা, মোড়লপনার দাপটের জেরে আর একটাও ঝরে পড়া মণিদীপা দেখতে চায় না মহকুমাবাসী। গর্জে উঠুন এই প্রথার বিরুদ্ধে।