সৌমেন মিশ্র, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: করোনার মাঝে স্বামীকে হারিয়ে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে ভেঙে পড়েননি দাসপুরের সামাটের পদ্মা বেরা। [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] উচ্চ শিক্ষিত পদ্মাদেবীর বিয়ে হয়েছিল যথেষ্ট স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারে। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর প্রায় ১ মাস বাকরুদ্ধ ছিলেন পদ্মাদেবী। তবে ঠিক তারপর থেকেই জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে নামেন তিনি। চরম আর্থিক অনটনের মাঝে সে লড়াই এখনও লড়ছেন পদ্মাদেবী। যৌথ পরিবার। পুরানো বসবাসের প্রায় অযোগ্য মাটির বাড়ির এক দিকের ছোটো অংশে কোনওভাবে দুই মেয়েকে নিয়ে দিন যাপন। মাঝে মধ্যেই উই পোকার মাটি জড়ানো কাঠের কড়ি বিছানায় ভেঙে পড়ছে। ঘরে বাইরে জীবনকে বাজি রেখে এ লড়াইয়ের চাওয়া বলতে এক একটা দিন কোনওভাবে পার করে যাওয়া। একশ দিনের কাজ থেকে, অন্যের দোকানে সেলাইয়ের কাজ,গৃহ শিক্ষিকার কাজ কোনও কাজই আজ আর তার কাছে ছোটো নয়। দয়ার দান নয়, নিজের চেষ্টায় ধীর গতিতে হলেও সামাটের পদ্মা বয়ে চলেছেন। মেয়েদের পড়াশোনায় বিন্দু মাত্র ব্যাঘাত ঘটাননি। পদ্মাদেবী জানান, তিনি এখন একদিকে মা অন্যদিকে বাবার দায়িত্বে। মায়ের মমতা আর বাবার আদর মেশানো শাসন সবই তাঁর আয়ত্বে। সেলাইয়ে যথেষ্ট পটু পদ্মাদেবী। নিজের সেলাই মেশিন থাকলে অনেকটা স্বনির্ভর হওয়া যেত। সেলাই মেশিনের দাম যা বর্তমানে তাঁর কাছে দিবা স্বপ্ন ছিল। তবে পদ্মাদেবীর সেই স্বপ্ন কীভাবে টের পেয়েছিল দাসপুরের সুলতাননগরের মহিলা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঁচল। শনিবারের বিকেলে সেই আঁচলের মহিলারা পৌঁছে গিয়েছিলেন সামাটে পদ্মাদেবীর বাড়িতে। সেলাই মেশিন সাথে তার যাবতীয় সরঞ্জাম পদ্মাদেবীর হাতে তুলে দিলেন। আঁচলের তরফে গীতা মণ্ডল জানান, পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে নিতাই গৌর সেবা দলের সদস্যরা তাঁদের এই সংস্থা আঁচলের মাধ্যমে এই মেশিনের ব্যবস্থা করেছেন। সেই মেশিনই তাঁরা পদ্মাদেবীর হাতে তুলে দিলেন। আঁচলের পক্ষ থেকে এও বলা হয়, এই মেশিন কোনও দান নয়। পদ্মাদেবীর এই লড়াইয়ের এক অস্ত্র মাত্র। অন্যদিকে পদ্মাদেবীও এই মেশিন পেয়ে আপ্লুত। তিনি বলেন, এ লড়াই অনেকটা সুগম করে দিল এই আঁচল। পদ্মাদেবী এককালে গ্রাম ছাড়িয়ে জেলা ও রাজ্য স্তরেও আবৃত্তি চর্চায় নাম কুড়িয়েছিলেন। সেই আবৃত্তি নিয়ে আবারও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন সামাটের স্বামীহারা পদ্মা।